সাপের ছােবল মানেই মৃত্যু। সাপ আমাদের কাছে ভয়াল মৃত্যুর
প্রতীক। সাপের বিষে মানুষ খুব তাড়াতাড়ি মরে যায় বলে আমরা
জানি
।
গত কয়েক দশক ধরে সরীসৃপের জীবনযাত্রা এবং ব্যবহার
নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। সাপ সম্পর্কে পাওয়া গেছে বিচিত্র
সব তথ্য। অনেক ভুল ধারণাও গেছে কেটে। যেমন সব সাপই
কিন্তু বিষধর নয়। দেখা গেছে মানুষের চেনা আড়াই হাজার রকমের
সাপের মধ্যে মাত্র চারশাে বারাে রকমের সাপ বিষাক্ত | পাঁচ ভাগের
একভাগেরও কম।
সাপ বিষাক্ত হােক বা না হােক বহুলােক তাকে দেখলেই মেরে
ফেলতে চায়। এবং ফেলেও।
সাপের বিষ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে।
ওষুধ হিসেবে ও গবেষণার কাছে সাপের বিষ অত্যন্ত মূল্যবান।
এবং অতুলনীয়। আজকাল মানুষের শরীরে সাপের বিষেরপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অনুসন্ধান করে বিজ্ঞানীরা বহু ধরনের ওষুধ
প্রস্তুত করেছেন। সর্পবিষ থেকে নিষ্কাশিত বস্তুটি দিয়ে ডাক্তাররা
চিকিৎসার সুযােগ বাড়াবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ জৈব রাসায়নিক গবেষণা
শুরু করেছেন।
সাপের বিষে এনজাইম হলাে এমন একটি বস্তু যা সাপেদের
হজম শক্তি ত্বরান্বিত করে। এনজাইমগুলাের অধিকাংশই কিন্তু বিষ
নয়। রাশিয়ার বিশেষজ্ঞরা মধ্য এশিয়ায় পাঁচ জাতের সাপের বিষের
উপাদান ও এনজাইমের ক্রিয়াকলাপের পরিমাপ করেছেন। এই
গবেষণার আধুনিক ভিত্তিতে সাপের বিষ থেকে নির্ভেজাল,
জৈবিকভাবে সক্রিয় বস্তু আহরণ করা হয়।
জীবিত সাপের মুখ থেকে সংগ্রহ করা বিষ এখন ওষুধের কাজে
ব্যাপক ব্যবহৃত হচ্ছে। কোবরা সাপের বিষ ব্যথা উপশম, কুষ্ঠ
নিরাময় ও গ্রন্থিবাতের চিকিৎসায় খুব কাজে আসে।। ক্রেইট জাতীয়
সাপের বিষ দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ক্যান্সার আক্রান্ত ইঁদুরের
অনেক কোষ ধ্বংস করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন আগামীতে হয়তাে এই বিষকণিকা
মানুষকেও ক্যান্সারমুক্ত করার ব্যাপারে সাহায্য করবে। অনেক
সময় অস্বাভাবিকভাবে অনেকের মাথা ধরে। বিজ্ঞানীরা বলেছেনএই যন্ত্রণাকে লাঘব করতে পারে সাপের বিষের ওষুধ। এমন কী
মৃগীরােগীরাও এ থেকে উপকৃত হতে পারে।
আজকাল বহু দেশে তাই সাপের খামার গড়ে তােলা হচ্ছে।
ফরিদপুর জেলার লাউখােলা গ্রামে একবার একটি সাপের খামার
তৈরি করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। বিষ সংগ্রহ করার জন্য
প্রথম বড়শি আকৃতির লম্বা কাঠি দিয়ে সাপকে পাত্র থেকে তুলে
আনতে হয়। এবং কাঁটা চামচ আকারের বস্তু দিয়ে ঘাড়ের দিক
থেকে সাপটিকে মাটি সাথে আটকে রাখা হয়। তারপর এক হাত
দিয়ে সাপের শরীরটিকে চেপে ধরে এবং অন্য হাতের বুড়াে আঙুল
ও তর্জনি দিয়ে মাথা চেপে ধরতে হয়। এর ফলে সাপটি বাধ্য হয়ে।
সামনে রাখা একটি প্লাস্টিক মােড়কে ছােবল দেয়। এই ছােবলের
ফলে যে বিষ মিশ্রিত হয় তা প্রাস্টিক কভারের নিচে রাখা একটি
গ্লাসে গড়িয়ে পড়ে। এভাবেই সাপের বিষ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
একটি সাপ থেকে অবশ্য খুব বেশি পরিমাণে বিষয় সংগ্রহ করা যায়
না। দুশােটা ভাইপার সাপ থেকে একবারে মাত্র একগ্রাম বিষ
পাওয়া যায়। আর ঘন ঘন বিষ সংগ্রহ করলে সাপের আয়ু যায়
কমে।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের দক্ষিণ অঞ্চলে ইরুলা
উপজাতি সাপের বিষয় সংগ্রহের ব্যাপারে অত্যন্ত দক্ষ। তারা বাস
করে সমুদ্রে তীরে বনভূমিতে। এতদিন ধরে তারা সাপের চামড়া
বিক্রি করে আসছিল। এই উপজাতির এক লাখের মানুষের
রােজগারের উপায় ছিল মরা সাপের চামড়া। কিন্তু এখন তারা
।
বুঝতে পারছে সাপের বিষ সংগ্রহ অনেক বেশি লাভজনক। প্রতি
গ্রাম বিষের জন্য সে দেশের মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট পাঁচশাে থেকে
দেড় হাজার টাকা দিয়ে থাকে। এখন তাই সাপের বংশবৃদ্ধির জন্য
ইরুলারা চেষ্টা করছে।
রহস্যময় ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব- সত্যি না মিথ্যা?
আসসালামু আলাইকুম সুপ্রিয় পাঠক এবং পাঠিকাগন। কেমন আছেন আপনারা সবাই?আশা করি আপনারা সকলে যে যার অবস্থানে ভালো আছেন এবং সুস্থ...