সাবাব একজন ক্লাস ৮ এ পড়া ছাত্র। সে খুবই দুস্টু প্রকৃতির। সে যে দুষ্টু, তাই বলে খারাপ সে কিন্তু নয়। সে এতিম ছিল। আর তাই শাসন করার মতো কেউ ছিল না। রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো টোকাইদের মতো। টোকাইদের সাথে সাথে থাকতে থাকতে সে অনেক দুস্টামি শিখে গেছে।
পরে এক বিত্তশালী লোক তাকে এই বোর্ডিং স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। আর মাসে মাসে খরচ-পাতি সব দেয়। বোর্ডিং এ সে যদিও একজন হোস্টেল সুপারের তত্ত্বাবধানে থাকে, তবুও সে তার ছোটোবেলার দুস্টামি ছাড়তে পারে নি।
তার দুস্টামির পরিমাণ এতো বেশী হয়ে যায় যে, ছাত্রদের সাথে তো সে দুস্টামি করেই, তার শিক্ষকদের সাথেও সে দুস্টামি করে। তার দুস্টামির জন্য সবাই অনেক বিরক্ত হয়ে যায়। কিন্তু, তার এই দুস্টামি তাকে একটা নতুন নামও দিয়েছে। কি নাম জানো? কাবাব। তাকে সবাই কাবাব বলে ডাকে।
১ম ১ম সে এই নাম ডাকার ফলে খুবই রেগে যেত। কিন্তু দিন পাল্টানোর সাথে সাথে তার রাগ কমে যায়। এই নাম তার নিত্য দিনের সঙ্গি হয়ে যায়। তার আসল নামে কেউ তাকে ডাকে না। এমনকি সে নিজেও মাঝে মাঝে ভুলে যায় যে, তার নাম সাবাব। একবার পরীক্ষার খাতায় নামের জায়গায় তো লিখেই ফেলেছিল “কাবাব” । পরে এটা নিয়ে যে কত হাসি-ঠাট্টা হয়েছে!
সে নিজেও এই কাণ্ড করে না হাসি দিয়ে থাকতে পারে নি।
কিন্তু বন্ধুরা, তোমরা কি জানো, কে এবং কেন তার নাম কাবাব রেখেছে? চল জেনে নিই সেই কাহিনীটা।
সাবাব প্রতিদিনের মতো সেদিনও বোর্ডিং থেকে বের হয়ে যায়। পিছনের দেওয়াল টপকানো তার প্রত্যহ কাজ। সে প্রতিদিন বিকাল ৪টায় বোর্ডিং থেকে পালায় আর ৬টায় ফিরে আসে। এসময়ে হোস্টেল সুপার তার পরিবারের সাথে দেখা করতে যায়। আর এই সময়টা কাজে লাগিয়ে সাবাব পালায়।
তো সেদিনও সে পালিয়েছে। পালিয়ে একেবারে এক খাবারের দোকানে সে লুকিয়ে পড়ে। সেখানকার পাশের দোকানে কিন্তু হোস্টেল সুপার কি একটা কিনতে গিয়েছিলেন। তিনি সাবাবকে দেখতে পান। সাবাব ওই খাবারের দোকানের খাবারের টেবিলের নিচে লুকিয়ে ছিল। খাবারের টেবিলের দায়িত্বে ছিল সাবাবের ছোটবেলাকার বন্ধু। এই টেবিলে ছিল সুস্বাদু খাবার কাবাব।
সাবাব টেবিলের নিচে থেকে মধুর সুরে বলে, “আমি কাবাব। কাবাব আমার নাম। কাবাব আমি। কাবাব, কাবাব, কাবাব আমার নাম।”
এগুলো শুনে সাবাবের বন্ধু ঠিক বুঝতে পেরেছে, টেবিলের নিচে কে আছে। আসলে এটা তাদের নিত্য দিনের সিগন্যাল। এই সিগন্যাল দেওয়ার পর, দোকানের মালিক ভাবে কোথাও হয়তো কেউ হাসি- ঠাট্টা করছে। তাই মালিক কিছুই বুঝতে পারে না।
কিন্তু এই সিগন্যালের সাথে সাথে সাবাবের বন্ধু উপর থেকে ২-৩টা কাবাব টেবিলের নিচে ফেলে দেয়। আর সাবাব হাত পেতে তাকে। কাবাব তার হাতে আসার পর, সে ওই কাবাব নিয়ে টেবিলের নিচ দিয়ে পিছন দিয়ে পালিয়ে যায়। আর তার বন্ধুর জন্য নদীর পাড়ে অপেক্ষা করে। বিকাল ৫টায় তার বন্ধু কাজ শেষ করে নদীর পাড়ে চলে যায়।
এরপর ২ বন্ধু মিলে গল্প করতে করতে কাবাব খায়। কাবাব খাওয়া শেষে আবার সাবাব তার বোর্ডিং এ ফিরে যায়।
দূর থেকে হোস্টেল সুপার সবকিছু দেখতেছিলেন। তিনি স্কুলে এসে সবাইকে এই কাহিনী বলতেই, স্কুলের প্রধান শিক্ষক হাসতে হাসতে বললেন, “কই! আমাদের স্কুলের মিস্টার কাবাব কই!”
এরপর থেকে সবাই সাবাবকে কাবাব বলে ডাকতে শুরু করে।