কলেজের বিজ্ঞানমেলার জন্য একটি নতুন প্রজেক্ট ডিজাইন করেছি। যুদ্ধক্ষেত্রে এটি যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারলে শত্রুপক্ষের পরাজয়ই কেবল নয়, তাদের অস্তিত্বকেও বিলীন করে দেওয়া সম্ভব হবে। আধিপত্য বিস্তারের এই যুগে সামরিক পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের মেলে ধরতে প্রজেক্টটি আশা করি যুগান্তকারী ভুমিকা পালন করবে।
এলার্মের শব্দে পিছনে ফিরে তাকালাম। টাইম মেশিনের দিকে চোখ পড়তেই বুঝলাম প্রায় পাঁচ হাজার বছর ভবিষ্যতে চলে এসেছি। ল্যাবরেটরি থেকে বের হতেই সম্পূর্ণ ভিন্ন এক জগৎ ভেসে উঠল আমার সামনে। জনবহুল এই এলাকাটিতে কোথাও কোনো মানুষের চিহ্ন দেখতে পেলাম না। শহুরে কৃত্রিমতার কোনো ছোঁয়া নেই, বরং সেখানে শোভা পাচ্ছে প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য। সকালের মিষ্টি রোদ, পাখির কলকাকলি আর নাম না জানা হাজারো ফুলের সৌরভ আমাকে যেন এক সর্গীয় অনুভূতির জানান দিচ্ছে।
হঠাৎই এক যান্ত্রিক কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম, “হ্যালো, গুড মর্নিং।” পিছনে ফিরে যা দেখলাম তা দেখার জন্য নিতান্ত প্রস্তুত ছিলাম না। কদাকার চেহারার প্রাণীটিকে দেখতে অনেকটা মানুষের মতো মনে হলেও মানুষের চেয়ে অনেক ভিন্নতা রয়েছে। এদের দেহের প্রায় অধিকাংশ জায়গা জুরেই মাথা। অর্থাৎ এদের মস্তিষ্ক যে তুলনামূলক উন্নত সেটা স্পষ্ট। শরীরটা মনে হচ্ছে কোনো ধাতুর তৈরি। আর সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এদের কোনো পা নাই। শুন্যে দাঁড়িয়ে আছে। সম্ভবত কোনো ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি করে এরা চলাফেরার কাজ সম্পন্ন করে।
– হ্যালো! আই এম ডক্টর কিমি। দ্য চিফ সাইন্টিস্ট অফ টোহানো।
– হ্যালো! ডক্টর কিমি। মাই নেইম ইজ মনি। তোমরা এই পৃথিবীতে কি করে এলে? আর এখানেই বা কি করছো?
– পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০০০ আলোকবর্ষ দূরে মিয়ান নামক গ্যালাক্সিতে আমাদের বাস। অনেক বছর আগে আমাদের পূর্বের বিজ্ঞানীরা পৃথিবী নামক সুন্দর একটি গ্রহের সন্ধান পান। আমরা যখন পৃথিবীতে আসি তখন এখানে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব ছিল না। তাই টোহানো সম্প্রদায় এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।
– কিন্তু পৃথিবীতে তো মানুষ বসবাস করে।
– হ্যাঁ! এক সময় এখানে মানুষের রাজত্ব ছিল। কিন্তু আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে মারামারি, হানাহানিই মানুষকে এ পৃথিবী থেকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। তারা শত্রুর উপর বায়োনিউক্লিয়ার বোমা প্রয়োগ করতো। যা কিনা মানুষের DNA স্ট্রাকচার পর্যন্ত নষ্ট করে দেয়। কিন্তু বোকা মানুষগুলো একবারের জন্যও ভাবে নি এই বোমার প্রভাব তাদের উপরও সমান ভাবে পড়বে।
হঠাৎই মনে পড়ল আমার নিজের আবিষ্কারের কথা। এই বায়োনিউক্লিয়ার বোমা তো আমারই আবিষ্কার। তবে কি আমার আবিষ্কারের ভবিষ্যৎ সত্যিই এমন ভয়ংকর? এমন সময় টোহানো সম্প্রদায়ের আরো চার-পাঁচ জন এলো। তারা ডক্টর কিমিকে বললো, “স্যার, আমাদের কাজ হয়ে গেছে।”
তারপর ডক্টর কিমি আমার দিকে বায়োনিউক্লিয়ার রিভলভার তাক করে বললো, “আই এম সরি মি. মনি। মানুষের বিলুপ্তির পাঁচ হাজার বছর পরও আমরা তোমাকে বাঁচিয়ে রেখেছি শুধুমাত্র মানুষের জীবনরহস্য উদঘাটন করার জন্য। আজ আমাদের বিজ্ঞানীরা তোমাকে স্ক্যান করে মানুষের জীবনরহস্য উন্মোচনে সফল হয়েছে। তাই এখন তোমাকে আমাদের আর কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা জানি যে পৃথিবীতে মানুষের বিলুপ্তির মূল কারণ তুমি। তোমরাই পৃথিবীকে ধ্বংস করেছো। আমরা কয়েক হাজার বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই পৃথিবীকে আবার বাসযোগ্য করে তুলেছি। তাই এই নতুন পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার কেবলমাত্র টোহানো সম্প্রদায়েরই আছে। তোমাদের মতো মানুষদের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই।”
এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙতেই বুঝলাম এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম। কলেজে ফোন দিয়ে বিজ্ঞানমেলা থেকে নিজের নামটা প্রত্যাহার করে নিয়েছি। প্রজেক্টের সমস্ত নথিপত্র আগুনে পুড়িয়ে ফেললাম। আমার আবিষ্কারটা প্রকাশ করতে পারলাম না বলে মন খারাপ লাগছে। কিন্তু পৃথিবীটাকে বাঁচাতে পেরেছি মনে করে তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হয়েছি।
লেখা: এম. এন. মাহমুদুল হাসান (মনি)
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়