“বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের এক দুর্দান্ত দুঃসাহসী স্পাই। গোপন মিশন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তরে। বিচিত্র তার জীবন। অদ্ভুত রহস্যময় তার গতিবিধি। কোমলে কঠোরে মেশানো নিষ্ঠুর সুন্দর এক অন্তর। একা। টানে সবাইকে, কিন্তু বাঁধনে জড়ায় না। কোথাও অন্যায়- অবিচার-অত্যাচার দেখলে রুখে দাঁড়ায়। পদে-পদে তার বিপদ-শিহরণ-ভয় আর মৃত্যুর হাতছানি।”
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আপনারা যারা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রবাদপুরুষ স্যার কাজী আনোয়ার হোসেন বা ঢাকার সেগুন বাগিচা রোডে অবস্থিত সেবা প্রকাশনীর সাথে আগে থেকেই পরিচিত, তারা এতক্ষনে নিঃসন্দেহে বুঝে ফেলেছেন যে আমার এই লেখার বিষয়বস্তু কি বা কাকে নিয়ে হতে চলেছে। আমার এই লেখাটি মূলত তাদের জন্য যারা এই সময়ের যান্ত্রিক জীবনের যাঁতাকলে পিষ্ঠ হতে হতে ওপরের নামগুলোর সাথে সেভাবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ই পেয়ে ওঠেন নি।
আজ থেকে ৫৫ বছর আগে ওপরের ওই লাইনগুলোর মাধ্যমেই লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন বাংলার বইপ্রেমী আপামর জনতার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন দুঃসাহসী, দেশপ্রেমিক এক চিরতরুণের যার নাম তিনি দিয়েছিলেন ‘মাসুদ রানা’। সেদিন কি তিনি নিজেও ভাবতে পেরেছিলেন যে তার সৃষ্টি করা সেই রানা সময়ের পরিক্রমায় হয়ে উঠবে বাংলা সাহিত্যের একটি কালজয়ী পুরুষ, যার আবেদন আজ ৫৫ বছর পরে অমলিন হয়ে থাকবে। আজও এদেশে এক শ্রেণীর পাঠকের মনে এই দুই শব্দের ‘মাসুদ রানা’ নামটি এতটাই দৃঢ়ভাবে গেঁথে আছে যে, সেখান থেকে এই নামটি মুছে ফেলা শুধু কঠিন ই নয় অসম্ভব বটে।
প্রিয় বন্ধুরা চলুন এবার তাহলে জেনে নেওয়া যাক আসলে কে এই মাসুদ রানা? কিইবা তার পরিচয়?
মাসুদ রানা হলেন একজন স্পাই বা গুপ্তচর যিনি কাজ করেন বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স এর একজন এজেন্ট হিসেবে। বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স হলো একটি গোপন সরকারি সংস্থা যার প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হলো দেশের অভ্যন্তরে বা বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রচিত যে কোনো ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেশের শান্তি ও সার্বভৌমত্ব বজায় রাখা। আর এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে আছেন রানার পিতৃপ্রতিম বস মেজর জেনারেল রাহাত খান, যার সামনে দাঁড়ালে আমাদের এই দুঃসাহসী বীরপুরুষটির বুকেও কাঁপন ধরে যায়। কিন্তু আবার সেই মানুষটির আঙুলের ইশারাতেই নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঝাঁপিয়ে পড়তেও দ্বিতীয়বার ভাবে না আমাদের রানা। এই প্রতিষ্ঠানটিতে শুধু রানা একাই নয়, আছে রানার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ও ভাই সোহেল আহমেদ, অপরূপা সুন্দরী সোহানা চৌধুরী, জাহেদ, সলিল ও রূপাদের মতো এক ঝাঁক দেশপ্রেমিক তরুণ তরুণী যারা কিনা দেশের জন্য হাসিমুখে জীবন বিলিয়ে দিতে প্রতিটা মুহূর্তে সদা প্রস্তুত অবস্থায় আছে।
এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে বসেন যে সেই সত্তরের দশক থেকে আজও পর্যন্ত রানা পাঠক হৃদয়ে কিভাবে আসন দখল করে আছে বা কেনই বা আজও পাঠক মনে রানার আবেদন এতটুকু ও কমেনি তাহলে এর উত্তরটা অল্প কথায় দেওয়া একটু কস্টকর ই বটে। তবে, ব্যাক্তিগতভাবে আমার মনে হয় রানার জীবনের ভাঁজে ভাঁজে থাকা এডভেঞ্চার, প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর হাতছানি, তার ছন্নছাড়া বাউন্ডুলে জীবন আর তার শক্ত খোলসের ভেতরে থাকা কোমল হৃদয়টাকেই বাংলার পাঠকসমাজ ভালোবেসে আপন করে নিয়েছিল। এমন কোনো রানাপ্রেমী খুঁজে পাওয়া যাবেনা যিনি কিনা মাসুদ রানার জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে এডভেঞ্চারে ভেসে বেড়ান নি বা অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করেন নি। মূলত পাঠকের সত্তার সাথে এইভাবে মিশে যাওয়াটাই এই মাসুদ রানা চরিত্রটিকে কালজয়ী করে তুলেছে যার ধারা বয়ে যাচ্ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।
আসলে এই চরিত্রটিকে নিয়ে লিখতে বসলে একটা পোস্ট এ কখনোই সব লেখা সম্ভব নয় আমার পক্ষে। তাই ইচ্ছা আছে মাসুদ রানা সিরিজের আমার প্রিয় বইগুলো নিয়ে একটা রিভিউ সিরিজ লেখার। এতক্ষন ধরে যারা ধৈর্য ধরে পুরো লেখাটা পড়েছেন তাদের প্রতি থাকলো আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। ❤️❤️