স্কুলজীবন জীবনের অন্যতম একটি অধ্যায়। জীবনের ১০ থেকে ১২ টি বছর কেটে যায় এখানে। কিন্তু এই অধ্যায়ের শুরুটা কেমন ছিলো? যেদিন প্রথমবার ছোট ছোট পা দিয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম, সেইদিনের অনুভূতিগুলো কেমন ছিল?
এখনো মনে আছে যেদিন প্রথমবার আম্মুর হাত ধরে স্কুলে গিয়েছিলাম। যেদিন স্কুলে গিয়েছিলাম তার আগের দিন রাতে ঘুমই আসছিলো না। স্কুলে কী হবে, ওখানের বাচ্চারা (মানে আমার সহপাঠীরা 😁) কেমন হবে, টিচাররা কেমন হবে, টিচাররা বেশি রাগী হবে না তো, আমি ওখানে গিয়ে কী কী করব আরো কতো চিন্তা যে মাথার ভিতর ঘুরঘুর করতেছিলো। সেদিন সকালে খুবই প্রফুল্ল মনে ঘুম থেকে উঠেছিলাম।
দাঁত ব্রাশ করে, হাত-মুখ ধুয়ে, সকালের নাশতা খেয়ে রেডি হচ্ছিলাম। আম্মু আমাকে রেডি করিয়ে দিচ্ছিলো। খুবই খুশি খুশি লাগছিল সেদিন। নতুন স্কুল ড্রেস, নতুন স্কুল ব্যাগ, নতুন জুতা পরে স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হলাম। স্কুল ড্রেসটার রঙ ছিলো সাদা এবং গাঢ় নীল (মানে সাদা শার্ট আর গাঢ় নীল রঙের স্কার্ট), জুতা এবং মোজা ছিলো সাদা রঙের আর ব্যাগের কথা মনে নেই।
আম্মুর হাত ধরে স্কুলে যাচ্ছিলাম। দেখলাম স্কুলের বাইরে মোটামুটি বড় একটা মাঠ ছিল, সেখানে একজন লোক ঝালমুড়ি বিক্রি করছিলো। আর কিছু বাচ্চারা মাঠে খেলছিলো। জায়গাটা খুবই সুন্দর ছিলো।
ভর্তি হবার পর ক্লাসে যাওয়ার সময় অনেক ভয় লাগছিলো। আমি আম্মুর হাত ধরে রেখেছিলাম, ক্লাসে যেতে চাইছিলাম না। মনে মনে চাইছিলাম আম্মুও যেন আমার সাথে ক্লাসে থাকুক। তা অবশ্যই সম্ভব না। অভিভাবকরা ক্লাসের সময় থাকতে পারবে না, তবে আম্মু স্কুলের একপাশে বসে ছিলো। আর আমাকে বলেছিলো, “যাও, আমি এখানে বসে আছি। “[ঠিক এটাই বলেছিলো কি না মনে নেই, তবে এমন কিছুই একটা বলেছিলো। আসলে অনেক ছোট ছিলাম তো তাই সবকিছু ভালোভাবে মনে নেই😋]
আমি ভয়ে ভয়ে ক্লাসে ঢুকলাম, আর সবাই আমাকে কেমন করে জানি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো। ক্লাসে স্টুডেন্ট প্রায় ভরা ছিলো। কোথায় কার সাথে বসব বুঝতে পারছিলাম না, কোনোরকম জায়গা খুঁজে বসলাম। কিছুক্ষণ পর ক্লাসে একজন টিচার আসলেন। তারপর ওনি কী কী পড়িয়েছিলেন আমার মনে নেই 😁।
একটা কথা বলে রাখি, আমার ক্লাসের স্টুডেন্টরা দুষ্ট প্রকৃতির বাচ্চা ছিলো। সবার কথা অবশ্য বলতে পারি না, তবে আমার আশেপাশে যে স্টুডেন্টরা বসতো ওরা দুষ্টু ছিলো। অনেক জ্বালাতন করতো। আমাকে নিয়ে শুধু শুধু ফাজলামো করতো😒। আমার ব্যাগও তো প্রায় সময় ফেলে দিতো। আমি যে কী করব বুঝতে পারতাম না। আর বারবার টিচারের কাছে নালিশ করার সাহসটাও পেতাম না। তাই আম্মুর কাছে সবসময় ওদের নামে নালিশ করতাম 😆।
মাঝে মাঝে মনে চাইতো ক্লাস রাইখা দৌড় দিয়া বাসায় জাইগা। অনেক সময় তো ক্লাসের মাঝখান থেকে সত্যি সত্যি বেরিয়ে যেতাম। ক্লাস থেকে বেরিয়ে আম্মুর কাছে চলে যেতাম। আর বলতাম, ” বাসায় যাবো, বাসায় যাবো। ” প্রথম যেদিন ক্লাস রেখে বেরিয়ে গেছিলাম সেদিন আম্মু আমাকে বেশি একটা জোর করে নি ক্লাসে যাওয়ার জন্য। আমাকে সেদিন বাসায় নিয়ে গেছিলো।
কিন্তু সবসময় তো আর তা করা সম্ভব না। তাই আম্মু স্কুলে বসে থাকতো। মূলত এই কারণেই আম্মু সবসময়ই আমার স্কুল শেষ হওয়া আগপর্যন্ত স্কুলেই বসে থাকতো 😌। কারণ আমার কোনো ভরসা নেই কখন যে ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাই 😂।
সেই স্কুলে আমি বেশিদিন পড়তে পারি নি। বলতে গেলে, ১ মাসের চেয়েও কম সময় ওখানে পড়েছি। কোনো এক বিশেষ কারণে আমাদের সবাইকে ঐ জায়গা ছেড়ে চলে যেতে হয়।