মাত্র একদিন আগেই আমরা পার করলাম মহান বিজয় দিবস।ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত যে স্বাধীনতা,তা কি আমরা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করতে পারছি?আমরা কি পারছি আমাদের জাতীয় পতাকাকে যথাযথ সম্মান দিতে?
পুরো ডিসেম্বর মাস জুড়ে পুরো বাংলাদেশে চলে সাজ সাজ রব।সেই সাথে সবাই সবার সামর্থ্য অনুযায়ী স্মরণ করার চেষ্টা করেন শহীদদের।কিন্তু বর্তমান প্রজন্ম কি আসলেই যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে পালন করতে পারছে জাতীয় দিবসগুলো?ঠিক ১৫ ডিসেম্বর মধ্যরাত বা তার একটু আগে থেকে পাড়া, মহল্লায়,স্থানে স্থানে শুরু হয় বাজি ফোঁটানো উৎসব আর গানবাজনা।প্রথম প্রথম কিছু দেশাত্ববোধক গান বাজানো হলেও ১৬ ই ডিসেম্বর রাতে শুরু হয় বাংলাদেশি সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক গান বাজানো।উচ্চ ভলিউমে হিন্দি গান বাজিয়ে বিজয় দিবস পালনের নামে রাতের ঘুমের বারোটা বাজানো হয়।সেই সাথে বাজির শব্দ তো আছেই।কোনো কোনো স্থানে আবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গুলোতেও অন্য ভাষার অশ্লীল গান যা বিজয় দিবসের সঙ্গে মানানসই নয় সেগুলো ব্যবহার করা হয়।এইসব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবার ছোট ছোট বাচ্চা ছেলে মেয়েরাও অংশগ্রহণ করে!তারা দেশপ্রেম নামে কি শিখছে ভাবুন তো একবার!এতো গেল অপসংস্কৃতির কথা।
এবার জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।ডিসেম্বর মাস আসলেই জাতীয় পতাকা কেনার ধুম পড়ে যায়।কিন্তু মাঝে মাঝে এসব পতাকায় পতাকার যে আসল রং তা ব্যবহার করা হয় না।অনেকে আবার একদিন কাগজের পতাকা ব্যবহার করে পরের দিন তা ঠোঙা বানিয়ে ব্যবহার করে,যা দেশের জন্য,শহীদদের জন্য অনেক অপমানজনক।যারা এমনটি করে তারা যদি ১৯৭১ সালে প্রথম পতাকা উত্তোলনের দিনটিতে উপস্থিত থাকতো,অথবা ইতিহাস থেকে সেই সব মানুষের অনুভূতি সম্পর্কে জানত,কত আবেগ আর ভালোবাসার নাম ছিল সেই সব মানুষের কাছে এই পতাকাটি,তবে এমনটি কখনোই করতে পারতো না।নতুন প্রজন্ম জন্ম থেকে স্বাধীন দেশে বাস করছে বলে,স্বাধীনতার অর্থ এখনো পুরোপুরি বুঝে পারেনি।ইদানিং আবার বৃত্তাকার লাল সূর্যের পরিবর্তে চারকোণা সূর্য ব্যবহৃত হয়েছে পতাকায়।এটা কখনোই না বুঝে ভুল হতে পারে না,বিজয় দিবসের মত বড় একটা বিষয় তো হেলাফেলা করার বিষয় নয়।হয়তো ১৪ ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবীরা বেঁচে থাকলে কখনোই তাদের সোনার বাংলাদেশে এমনটি হতে দিতেন না।অনেকে আবার বিজয় দিবসে বের হয়ে পড়েছেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ব্যানার নিয়ে।যা সত্যি বাংলাদেশি হিসেবে নিজের দেশ,সংস্কৃতির প্রতি অবহেলায় প্রকাশ করে।বেঁদিতে ফুল দেওয়া নিয়ে হচ্ছে মারামারি,অনেকে জুতা পরেই উঠছেন বেঁদিতে,কারও কারও কাছে জাতীয় দিবস গুলোর অর্থ প্রেম দিবস।সত্যিই দেশের প্রতি মমত্ববোধ কতটা কমে গেলে,একটা জাতি এমন দিকহারা হয়ে পড়ে!
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন,এ কথাটি এমনি এমনি প্রচলিত হয়নি।সত্যি সত্যি দেশের প্রতি যত উদাসিন হয়ে পড়বো আমরা সবাই,ততই দেশের উন্নতিতে ভাটা পড়বে।নতুন প্রজন্ম শুধু পরীক্ষায় পাশ করা নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে,সচেতন ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে নয়। আমরা শহীদ রুমি,শহীদ বদি,শহীদ আজাদ এর মতো সোনার ছেলে গড়তে ব্যর্থ হব।উপরে উপরে বড় বড় কথা বলায় ওস্তাদ এই প্রজন্মের ভেতরে থাকবে শূণ্যতা।
এসব যখন একবার শুরু হয়ে গেছে,তখন বন্ধ করা এত সহজ হবে না।এজন্য দরকার সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ,আর অভিভাবক দের কে সচেতন করা,তারা নিজেরা যাতে সচেতন হয়,আর বর্তমান প্রজন্ম কেও সচেতন করে গড়ে তোলে।এমনিতেই আমরা অনেক পিছিয়ে,আবার যদি আমরা নিজেদের স্বকীয়তাও হারিয়ে ফেলি তবে আর বাকি থাকলো কি?অনেকে আছেন বিজয় দিবস পালন করেন না,তারাও এসব লোকদের ছেয়ে ভালো,যারা বিজয় দিবসকে বিকৃত করে পালন করেন।আমাদের বাংলাদেশে হয়তো জহির রায়হানদের মতো আরেকটি প্রজন্ম আসতে সহস্র বছর গড়িয়ে যাবে।
তাই সচেতন হবার এখনি সময়।রক্তে গড়া স্বাধীনতা চিরস্থায়ী হোক।