আমি শাওন। চট্টগ্রাম এ একটি হোটেল এ রিসেপশন এর চাকরি করি। সেখানে প্রতিদিন কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে আসা যাওয়া করে সেদিকে আমার কোনো খেয়াল নেই কারণ তাঁদের প্রতি আমার কোনো ফিলিংস কাজ করে না। আমার সাথে আমার এক ফ্রেন্ড ও কাজ করে সে অবশ্য অনেক মেয়ের সাথে কথা বলে ঘুরতে যায় চ্যাটিং করে মাঝে মাঝে আমাকেও বলে তুই ও তো একটা সুন্দর মেয়ে দেখে প্রেম করতে পারিস লাইফ টাকে একটু ইনজয় করতে পারিস। কিন্তু আমার কেন জানি কোনো মেয়ের প্রতি এমন ফিলিংস আসে না।
কিন্তু হঠাৎ একদিন আমাদের হোটেল এ একটা এলো জানি না সেদিন আমার কি হয়েছিল আমার শুধু সেই মেয়ে টার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করছিলো মনে হচ্ছে জানো সে আমার কত জনমের চেনা। কত আপন। মেয়ে টার নাম ছিল রমা। সে আমাদের হোটেল এ প্রায় পাঁচ দিনের মতো ছিল। আর আমি সেই প্রতিটা সময় প্রতিটা মুহূর্তে যেন টার কথাই ভেবেছি। সে কখনো কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কেন করছে সমস্ত কিছু খেয়াল করেছি। কারণ আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমি রমা কে ভালোবেসে ফেলেছি। তবে আমি রমা কে আমার ভালোবাসার কথা বলে ওঠার আগেই সে চলে যায় ঢাকায়। কারণ রমা একটা প্রাইভেট জব করে সেখান থেকেই ও ছুটি নিয়ে বেড়াতে এসেছিলো। কাজেই ছুটি শেষ হওয়াতে ওকে ঢাকা ফিরে যেতে হয়েছে।
আমার ভালোবাসার কথা আর বলা হলো না।
রমা চলে যাওয়ার পরে থেকে যেন আমার আর কিছুই ভালো লাগছিলোনা। কোনো কাজে মন বসে না। কেমন যেন ছন্ন ছাড়া হয়ে গেল আমার জীবন।
তখন একদিন আমার ফ্রেন্ড বিজয় বললো শাওন একটা কাজ করে এভাবে জীবন টা শেষ না করে তুই ঢাকায় যা ঢাকায় আমার মামা আছে আমি ওনাকে বলবো তোর একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দিবেন। আর তুই ওখান থেকে কাজ করবি আর সময় করে মেয়ে টাকে খুজবি। দেখবি একদিন ঠিক তুই রমা কে খুঁজে পাবি।
অবশেষে বাবা মা কে বুঝিয়ে একটা ভালো চাকরির কথা বলে আমি ঢাকায় আসলাম। সেখানে এসে বিজয়ের মামা আমাকে চাকরি দিলেও থাকার সমস্যা টা বড়ো হয়ে দাঁড়ালো। এত বড়ো ঢাকা শহরে আমি একা কেউ বাসা ভাড়া দিতে চাইবেনা। বিজয়ের মামা কে আমার থাকার সমস্যার কথা বলাতে উনি আমাকে ওনাদের একজন রিটায়ার্ড কর্মকর্তার মোবাইল নাম্বার দিয়ে বললেণ মাহাবুব স্যার আমাদের এখানেই কাজ করতেন অনেক ভালো মানুষ শুনেছি উনি ওনার বাসার একটা রুম ভাড়া দিতে চান তুই একটু ওনার সাথে কন্ট্যাক্ট করো হয়তো তোমাকে রুম ভাড়া দিলে দিতেও পারে।
আমি ফোন করে কথা বললাম উনি আমাকে বাসার এড্রেস দিয়ে ওনাদের বাসায় গিয়ে রুম টা দেখে আসতে বললেন।
যেহুতু আমার থাকার আর কোনো জায়গা নেই সেহুতু আমি সাথে সাথে ওনার দেওয়া এড্রেস এ চলে গেলাম।
বাসাটা অনেক বড়ো আর সুন্দর। পুরো বাসা টা তাড়া নিজেরা ব্যবহার করেন আর একটা রুম অযথা পরে থাকে তাই ভাড়া দিলেন। সেখানে যাওয়ার পরে মাহাবুন স্যার এবং ওনার ওয়াইফ এর সাথে আমার বেশি ভালো একটা সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেল। আসলেই ওনারা অনেক ভালো মানুষ। ওনাদের ছোট একটা ছেলে আছে তার সাথেও বেশ ভালো করে জমিয়ে গল্প করলাম। সারাদিন আমার বেশি ভালোই কাটলো তাঁদের সাথে। তারাও আমাকে অনেক আপন করে নিলেন।
বিকেল গড়িয়ে যখন সন্ধ্যা ঠিক তখন হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো। যেহুতু আমার রুম টা দরজার ঠিক কাছেই তাই আমিই গিয়ে দরজা টা খুলে দিলাম।
দরজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে আমি দেখতে পেলাম রমা আমার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রমার দিকে তাকিয়ে আছি যেন আমি পৃথিবীর সমস্ত ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। এক মুহূর্তের জন্য আমি যেন আমার মধ্যে থেকে হারিয়ে গেলাম। যেই রমা কে খুঁজতে আমি এই ঢাকায় আসলাম সে এখন আমার সামনে। এ যেন আমার কাছে একটা স্বপ্ন। মনে হচ্ছে যেন আমি স্বপ্ন দেখছি।
হঠাৎ রমা বলে উঠলো কে আপনি? আর এভাবে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কেন সরে যান আমাকে ভিতরে ঢুকতে দিন।
রমা ভিতরে ঢুকে চিৎকার করে বলতে লাগলো মা উনি কে আমাদের বাসায় কি করছে। তোমরা যখন তখন যাকে তাকে বাসায় ঢুকতে দাও কেন।ঠিক তখন রমার মা এসে বললেন এভাবে বলছিস কেন ও আমাদের নতুন ভাড়াটিয়া। আমাদের যে রুম টা ফাঁকা পরে থাকতো সেই রুম টা তোর বাবা ওকে ভাড়া দিয়েছেন। ও শাওন। অনেক ভালো ছেলে।তোর বাবার আর আমার তো ওকে খুব পছন্দ হয়েছে।
সেদিন থেকে রমা কে প্রতিদিন দেখি কিন্তু কখনো কথা বলার সাহস হয় না। আস্তে আস্তে করে আমি ওদের সাথে আরো মিশে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। বেশ ভালোই কাটছিলো আমার দিনগুলি।
হঠাৎ রমা একদিন আমার রুম এ আসলো আমার সাথে কথা বলতে। আমি তো অনেক খুশি কিন্তু রমা কে সেটা বুঝতে দিলাম না। সে আমার সাথে অনেক কথা বললো। কোথায় কাজ করি, কি কাজ করি, বাবা মা কি করেন এমন আরো অনেক কথা আমি ওর সাথে অনেক কথা বললাম কিন্তু ওকে একটুও বুঝতে দিলাম না যে আমি ওকে কতটা ভালোবাসি।
এভাবে আস্তে আস্তে একটু একটু করে আমরা দুজন দুজনের কাছে আসলাম। আমাদের মধ্যে একটা ভালোলাগা ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরী হলো।
আমরা একসাথে মাঝে মাঝে নদীর পারে বেড়াতে যেতাম। খোলা আকাশের নিচে কত হাসি, মজা,খুনসুটি করেছি তার কোনো অন্ত নেই।
এভাবেই হাজারো মানুষের ভালোবাসা বেঁচে থাকুক এই আমাদের প্রত্যাশা।