আসসালামু আলাইকুম,আশা করি সবাই ভালো আছেন।
বরাবরের মতো আজকে এই পোস্ট এ আমি ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ভূগোল ও পরিবেশ এ্যাসাইনমেন্ট -২ এর প্রশ্ন ও একটি নমুনা উত্তর লিখে দিবো।
আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে।
প্রশ্ন-
“সূর্যকে পরিক্রমণ করে পৃথিবীর চারটি অবস্থায় বাংলাদেশের বিরাজমান ঋতু পরিবর্তন”
৩রা আগস্ট ২০২১
বরাবর
প্রধান শিক্ষক
আইডিয়াল স্কুল
মিরপুর, ঢাকা
বিষয়-“সূর্যকে পরিক্রমণ করে পৃথিবীর চারটি অবস্থায় বাংলাদেশের বিরাজমান ঋতু পরিবর্তন”
সূত্র / স্মারক নং: ম,এ. ২০২১-৯ তারিখ:২৭ জুলাই ২০২১
জনাব,
যথাবিহীত সম্মানপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আপনার
আদেশ নং ম.উ.শি.২০২১-৯ তারিখ:২৭ই জুলাই ২০২১ অনুসারে ” সূর্যকে পরিক্রমণ করে পৃথিবীর চারটি অবস্থায় বাংলাদেশের বিরাজমান ঋতু পরিবর্তনস’ম্পর্কির্ত প্রতিবেদনটি
নিম্নে পেশ করছি ।
“সূর্যকে পরিক্রমণ করে পৃথিবীর চারটি অবস্থায় বাংলাদেশের বিরাজমান ঋতু পরিবর্তন”
ঋতু পরিবর্তন -পৃথিবীর নিজস্ব কক্ষপথে ঘূর্ণন এবং সূর্যের দিকে হেলে থাকা অক্ষের কারণে ঋতু পরিবর্তন হয়। সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর আবর্তন এর জন্য বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের দিকে বা সূর্যের বিপরীতে থাকে বলে পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন হয়।
ঋতু পরিবর্তনের কারণ-
১/ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে দিবারাত্রির তারতম্যের জন্য উত্তাপের হ্রাস বৃদ্ধি-
পৃথিবী তার নিজ অক্ষের চারদিকে ঘুরতে থাকে সাথে সাথে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। ফলে পৃথিবীর যে গোলার্ধ সূর্যের দিকে থাকে সেদিকে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয় আর বিপরীত দিকে তাপমাত্রা হ্রাস পায়। বড় দিনে ভূপৃষ্ঠ যে তাপ গ্রহণ করে, ছোট রাতে সে তাপ পুরোটা বিকরণ করতে না পেরে আবহাওয়া উষ্ণ হয় এবং গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া বিরাজ করে। বিপরীত গোলার্ধে বড় এবং ছোট হওয়াতে রাতের বেলায় সব তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা অনুভূত হয় এবং শীতকাল হয়।
২/পৃথিবীর গোলাকার আকৃতি –
পৃথিবীর গোলাকার হওয়ার জন্য সূর্যের রশ্মি কখনো কখনো লম্বভাবে কখনো তীর্যকভাবে পড়ে। ফলে তাপমাত্রারর পার্থক্য কারণে ঋতু পরিবর্তন হয়।
৩/ পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথ –
পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথের জন্য সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সারাবছর সমান থাকে না এর ফলে উষ্ণতার পার্থক্য সৃষ্টি হয়ে ঋতু পরিবর্তন হয়।
৪/পৃথিবীর কক্ষপথের কৌণিক অবস্থান-
পৃথিবীর কক্ষতল এর উপরে ৬৬.৫ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকা সর্বদা একই দিকে অবস্থান করে। এতে বছরে একবার উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি চলে আসে আর পৃথিবীর এই অবস্থানের ফলে দিন ও রাত্রির হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। ফলে বিভিন্ন স্থানে সূর্য রশ্মির কোণিক পতনের তারতম্য ঘটে এবং ঋতু পরিবর্তন হয়।
৫/পৃথিবীর আহ্নিক গতি-
পৃথিবীতে আহ্নিটি গতির ফলে দিন ও রাত সংঘটিত হয়। পৃথিবী নিজ অক্ষে বা মেরু রেখায় পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে। এভাবে আবর্তন গতির পৃথিবীর ২৪ ঘন্টা বা ১ দিন সময় লাগে। সঠিকভাবে এর সময় হলো ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড। পৃথিবীর গতি আহ্নিক গতি। পৃথিবীর একটি পূর্ণ আবর্তনের সময় কে বলে পৃথিবীর আহ্নিক আহ্নিকআহ্নিক না থাকলে পৃথিবীতে কোন স্থানে সব সময় গ্রীষ্ম ও কোন স্থানে সব সময় শীতকাল বিরাজমান থাকতো।
ঋতু পরিবর্তনের প্রক্রিয়া-
সূর্যকে পরিক্রমণ কাল পৃথিবীর চারটি অবস্থা থেকে ঋতু পরিবর্তনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।
যেমন –
১/উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল –
২১শে জুন সূর্যের উত্তরায়ণের শেষ দিন। এইদিন সূর্যরশ্মি কর্কটক্রান্তির উপর লম্বভাবে পতিত হয়। ফলে ওই দিন এখানে দীর্ঘতম দিন এবং ক্ষুদ্রতম রাত্রি হয়। একুশে জুন এর থেকে দেড় মাস পূর্ব থেকে দেড় মাস পর পর্যন্ত মোট তিন মাস উত্তর গোলার্ধে উত্তাপ বেশি থাকে। এসময় উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল। এই সময় সূর্যের তির্যক কিরণ এর জন্য দক্ষিণ গোলার্ধে দিন ও রাত বড় হয়। এজন্য সেখানে তখন শীতকাল।
২/ উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকাল-
২৩শে সেপ্টেম্বর সূর্য রশ্মি নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে পড়ে এবং সর্বত্র দিবা রাত্রি সমান হয়। সেজন্য এ তারিখের দেড় মাস পূর্ব থেকে দেড় মাস পর পর্যন্ত মোট তিন মাস তাপমাত্রা মধ্যম ধরনের হয়ে থাকে। উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকাল।
৩/ উত্তর গোলার্ধে শীতকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল-
২২ শে ডিসেম্বর সূর্যের দক্ষিণায়নের শেষ দিন অর্থাৎ সূর্য মকরত্রান্তির উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। ফলে সেখানে দিন বড় রাত ছোট হয়। এ তারিখে দেড় মাস পূর্বে ও পরে দক্ষিণ গোলার্ধের গ্রীষ্মকাল এবং উত্তর গোলার্ধে শীতকাল।
৪/ উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকাল-
২১ তারিখে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু সূর্য থেকে সমান দূরে থাকে। এ দিন সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয় এবং সর্বত্র দিন রাত্রি সমান হয়। ২১শে মার্চ মাস পূর্ব থেকে দেড় মাস পর পর্যন্ত এই তিনমাস উত্তর গোলার্ধের বসন্তকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকাল থাকে।
সূর্যকে পরিক্রমণ কালে এই পৃথিবীর চারটি অবস্থা বাংলাদেশ এ বিরাজমান-
ঋতু প্রথমাবস্থা –
উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল, বাংলাদেশ উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত একুশে জুন এখানে দিন এবং রাত ছোট হয়। কারণ এ সময় সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয় একুশে জুন মাস পূর্ব থেকে অর্থাৎ মে মাস থেকে এখান গ্রীষ্মকাল শুরু হয়ে যায়। জুন মাসের দিকে গরম বেশি অনুভূত হয় এছাড়া জুন-জুলাইয়ের মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়।
২/ দ্বিতীয় অবস্থা- উত্তর গোলার্ধে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকাল, ২৩ শে সেপ্টেম্বর সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। পৃথিবীর সর্বত্র দিন রাত সমান হয়। তিন ওড়াতে তাপ বিকিরণ সমানভাবে হওয়ায় আবহাওয়াতে ঠান্ডা গরমের পরিমাণ সমান থাকে। এসময় এর দেড় মাস পূর্ব থেকে অর্থাৎ আগস্ট-সেপ্টেম্বরে পর্যায়ক্রমে বর্ষাকাল থেকে শরৎকাল ঋতু পরিবর্তন হয়। পরবর্তীতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর হেমন্তকাল বিরাজ করে।
৩ য় অবস্থা- উত্তর গোলার্ধে শীতকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধ গ্রীষ্মকাল,
২৩ শে সেপ্টেম্বর পর উত্তর গোলার্ধ সূর্য থেকে দূরে সরতে থাকে ২২ ডিসেম্বর সূর্য মকরক্রান্তি উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। সেই সময় উত্তর গোলার্ধে অর্থাৎ আমাদের দেশে দিন ছোট ও রাত বড় হওয়াতে শীতকাল হয় অবশ্য বাইশে ডিসেম্বর এর পূর্বে এদেশে শীত অবস্থা বিরাজ করতে শুরু করে। যা পরবর্তী প্রায় তিন মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
চতুর্থ অবস্থা -উত্তর গোলার্ধ ও দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল, সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেওয়ার ফলে পৃথিবীর সর্বত্র দিন রাত্রি সমান হয়। দিনের সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হলেও রাতে তা সমানভাবে বিকৃত হয়ে ঠান্ডা হয়ে যায়। তাই এ সময় উত্তর গোলার্ধে অর্থাৎ বাংলাদেশের শীত ও গরমের মাঝে মাঝে একটি অবস্থা বিরাজ করে। একে বসন্তকাল বলে।
প্রতিবেদনের শিরোনাম- প্রতিবেদন তৈরির সময় ও তারিখ-
প্রতিবেদক এর নাম-
নমুনা উত্তরটি হুবুহু না লিখে এখান থেকে ধারণা
নিয়ে নিজ মেধা দিয়ে লেখার অনুরোধ রইল।
ভুল-ত্রুটি থাকলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।