আইফেল টাওয়ারে গুপ্ত অ্যাপার্টমেন্ট!

আইফেল টাওয়ারের কথা কে না জানে। ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত এই লৌহ কাঠামো পৃথিবীর ভ্রমণপিপাসুদের কাছে এক কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। ১৮৮৯ সালে নির্মিত টাওয়ারটি নির্মাণের পর প্রথম ৪০ বছর পর্যন্ত ছিল পৃথিবীর সর্বোচ্চ টাওয়ার। অথচ এই টাওয়ার নিয়ে রয়েছে অজানা এক তথ্য!  

ডিজনি ওয়ার্ল্ডের ভক্তরা সিন্ডারেলা ক্যাসেলের বিলাসবহুল স্যুট সম্পর্কে নিশ্চয় অবগত আছেন। কিন্তু সমান জনপ্রিয় আইফেল টাওয়ারের এক এমন তথ্য আছে যা সম্পর্কে এর দর্শনার্থীরা অবগত নন।

অনেকে দৃষ্টিনন্দন এই টাওয়ার পরিদর্শন করেন কিন্তু খেয়াল করে দেখান না এর একটি বিশেষ দিক। টাওয়ারটির একদম উঁচুতে রয়েছে একটি অ্যাপার্টমেন্ট। আর এই অ্যাপার্টমেন্ট সম্পর্কে বেশিরভাগেরই কোন ধারণা নেই।

এই টাওয়ারটি নির্মাণের সময় গুস্তাভ আইফেল এক বিশেষ উদ্দেশ্যে এই গুপ্ত অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করেন। নির্মাণের সময় এই অ্যাপার্টমেন্টটিতে গুস্তাভ ছাড়া অন্য কারো প্রবেশ ছিল নিষেধ!  

যদি বলা হয় ইউরোপের সবচেয়ে সুন্দর ভিউ কোথা থেকে পাওয়া যাবে? তাহলে, চোখ বন্ধ করেই সবাই বলে দিবে আইফেল টাওয়ারের কথা। মনে করেন, এক ছিমছাম ছোট পরিসরের অ্যাপার্টমেন্ট যেখানে রয়েছে রঙিন ওয়ালপেপার, কাঠের ক্যাবিনেট আর একটি পিয়ানো।

আর আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠে এক্সপ্রেসো কফির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে দেখছেন চিত্তহরণকারী প্যারিস নগরী।

<

এই মনোবাসনা নিয়েই গুস্তাভ হয়ত তৈরি করেন এই অ্যাপার্টমেন্টটি। গুস্তাভ হয়ত এই অভিলাষ নিয়েই তার কর্মীদলকে নির্দেশনা দেন এই গুপ্ত অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করার। তবে অনেক বছর পরে জানা যায়, গুস্তাভ প্যারিসের আকাশের স্থায়ী অবস্থা পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্য নিয়ে এবং বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য এই অ্যাপার্টমেন্টটি তৈরি করেন।   

মূলত টাওয়ারটি ফ্রান্সকে ইউরোপের শিল্প শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। আইফেল জানতেন, যে এই টাওয়ার নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভবিষ্যৎ কোন পরিকল্পনা নেই। যেকোন সময় এটি ধ্বংসের কাজ শুরু হয়ে যেতে পারে।

আর তাই তিনি সেসময়ের বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের সাথে যোগাযোগ করে এই টাওয়ারটি রক্ষার চেষ্টা শুরু করেন এবং এটিকে গবেষণার একটি জায়গা হিসেবে ধরে রাখার প্রয়াস নেন।  

টাওয়ারটি নির্মাণের পর এর অ্যাপার্টমেন্টটিতে বায়ুমণ্ডলীয় পরিমাণ, জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ এবং পদার্থবিজ্ঞানের পরীক্ষাগার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

১৯০৩ সালে ফরাসি সেনাবাহিনী ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি পরীক্ষার জন্য এই অ্যাপার্টমেন্টে অবস্থান করেন। টাওয়ার থেকে তখন উত্তর আমেরিকা পর্যন্ত ওয়্যারলেস সংকেত সম্প্রচার করা সক্ষম হয়। 

লেখক হেনরি জেরার্ড জানান, টাওয়ারের অ্যাপার্টমেন্টটি বিজ্ঞানীদের উপযোগী করে তৈরি করা হয়। তাই টাওয়ারটির নির্মাণ উপকরণ থেকে অ্যাপার্টমেন্টের নির্মাণ উপকরণগুলো ছিল ভিন্ন।

অ্যাপার্টমেন্টটি ভাড়া নেওয়ার জন্য অনেক সময় অনেক আবেদন এসেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এখনো এটিকে সংরক্ষিত করেই রেখেছে এবং মাঝে মাঝে কিছু বিশেষ ব্যাক্তি বা অতিথি ছাড়া এখানে অন্য কারো প্রবেশাধিকার থাকে না।       

সাম্প্রতিক সময়ে হোমঅ্যাওয়ে নামক একটি ভেকেশন রেন্টাল কোম্পানি অ্যাপার্টমেন্টটির ভিতর একটি কনফারেন্স ঘর তৈরি করে।

অ্যাপার্টমেন্টটি আগের মতো না থাকলেও, এখনো এখানে রয়েছে ২টি বেডরুম, একটি শহুরে গ্রীনহাউস। সাথে সাথে এর সিলিং উইন্ডো থেকে দেখা যায় আরক ডি ত্রায়ফ, স্যাক্র কোওর আর সাইন নদীর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

Related Posts