রাত ৯টা ৩০ মিনিটে বাড়ি ফিরলো অত্রী।আজকে কাজের বেশ ধকল গেছে। বসে থাকতে থাকতে অত্রীর কোমরের গিট্টুতে গিট্টুতে ব্যাথা ধরে গেছে। অফিস এমনিতে বিকেল ৫টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু,আজকে একটা নতুন ফাইলের কাজ শেষ করতে অত্রী আর ওর বান্ধবী অনীমা রয়ে গিয়েছিলো। সেই কাজ শেষ করতে করতে রাত ৮টা বেজে গেছে। এরপর একটু রিল্যাক্স করার জন্য একটা ক্যাফেতে বসায় অত্রীর বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে গেছে।
“ইশ! আজ বড্ড দেরি করে ফেলেছি” মিনমিন করে নিজেকে শোনালো অত্রী।আজকে কাজের চাপের কারণে রান্নার কথাটা একদমই ভুলে গিয়েছিলো সে।নিজের ফ্ল্যাটের লক খুলতেই একটা মিষ্টি গন্ধ ওর নাকে এসে ধাক্কা লাগে।এই মিষ্টি গন্ধ কোথা থেকে আসছে?অত্রী ফ্ল্যাটে একা থাকে।মা,ভাই থাকে গ্রামে।ভাইটা বিদেশে যাবার যোগাড় করছে বলে সে গ্রামে ভীষন ব্যাস্ত।শহরে আসার কথা না।অত্রী নিজের ফ্ল্যাটের চাবি কাউকে দেয়নি।তাহলে এই মিষ্টি গন্ধের উৎস কোথা থেকে?পরক্ষণেই বুঝতে পারলো,এই মিষ্টি গন্ধ ওরই পারফিউমের।সকালে এই পারফিউমই গায়ে লাগিয়ে অফিসে গিয়েছিলো।হয়তো দরজা জানালা বন্ধ থাকায় গন্ধটা বের হতে পারেনি।
এসব ভাবতে ভাবতে অত্রী ঘরে ঢুকলো।দরজা বন্ধ করে লাইট জ্বালানো মাত্রই মিষ্টি গন্ধটা কোথায় যেন মিলিয়ে গেলো।অত্রী মিষ্টি গন্ধের ব্যাপারটা মাথা থেকে ঝেড়ে কাপড় বদলাতে বাথরুমে ঢুকলো।ঢুকে আশ্চর্য হয়ে অত্রী লক্ষ করে,বাথরুমের অবস্থা এমন যেন কেউ মাত্রই গোসল করে বের হয়েছে।দেয়ালে পানি ছিটানো,সাবানটা আধ ক্ষয় হয়ে আছে,ঝর্না থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে।বিস্মিত অত্রী ঝর্না বন্ধ করে নিচে গেলো।দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
অত্রীকে আরো অবাক করে দিয়ে দারোয়ান জানালো,অত্রীর ফ্ল্যাটে সকাল থেকে কেউই আসেনি।পরিচিত কেউ আসেনি।আর,অপরিচিত কেউ আসলে দারোয়ান তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।কিন্তু,সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কেউই আসেনি।অত্রী ক্ষণিকের জন্য ব্যাপারটা হজম করে উঠতে পারলো না। রাত ৩টার দিকে।অত্রী নিজের রুমে ঘুমে বিভোর।তখুনি ক্যাঁচ ক্যাঁচ করে স্টোররুমের দরজাটা খুলে গেল।দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা বের করল পুরুষাবয়ব।নিঃশব্দে এক লাফ দিয়ে মেঝেতে পায়ে ভর দিয়ে নামলো সে।নিঃশব্দে ফ্রিজ খুলে পানির বোতলের পানিটা সম্পূর্ণ পেটে চালান করে দিলো সে।ফ্রিজ হাতড়ে দেখল সে,যদি কিছু খাবার পাওয়া যায়।কয়েকটা খেজুর পাওয়া গেলো।
সেগুলোই গোগ্রাসে খেয়ে নিলো সে।এরপর সারা ঘর জুড়ে পায়চারি করতে লাগলো পুরুষাবয়বটি।পা টিপে টিপে হাঁটতে লাগলো,অতি সন্তপর্ণে।বেডরুমে উঁকি দিলো সে। অত্রী বিছানায় বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। নিঃশব্দে তার কাছ থেকে সরে এলো পুরুষাবয়বটি। গোপনে অন্যের বাসার ডেরা দেয়ার জন্য পুরুষাবয়ব অর্থাৎ,সলিম নামক মানুষটি খুবই লজ্জিত।কিন্তু,তার কাছে আর কোনো উপায় নেই।] সে স্বেচ্ছায় কিছুই করছে না।সেদিন সলিম খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।নিজের দৈহিক কামনা মেটাতে যখন সে বাড়িওয়ালার ১২ বছরের মেয়েটিকে শিকার বানালো,তখন সে একপ্রকার ঘোর লাগা অবস্থায় ছিলো।ঘোর কেটে যাওয়ার পর সলিম বুঝতে পারে সে কি ভুল করেছে।
অজ্ঞান মেয়েটিকে রেখেই সে পালিয়ে আসে।সলিম ভাবে,যদি সে বাইরে বের হয়,তাহলে সে ধরা পড়ে যাবে।ফলে জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে তার। দৌড়ে নিচে নামার সময় অত্রীর ফ্ল্যাটের দরজা খোলা দেখতে পেয়ে সে সুড়ুৎ করে ভেতরে ঢুকে পড়ে।অত্রী তখন তার বান্ধবী অনীমাকে ওর শাড়িটা দিতে নিচে গিয়েছিলো।সেই সুযোগে……।
এখানে সলিমের থাকতে বিশেষ সমস্যা হচ্ছে না।অত্রী না থাকলে সে স্টোররুমের বাইরে বের হয়ে রাজার ভঙ্গীতে থাকে।তবে ভুলেও সে জানালার কাছে যায় না।যদি ধরা পড়ে যায়!দিনের বেলাতেই খাওয়া-গোসল সেরে নেয় সে।এই বিল্ডিঙয়ের ফ্ল্যাট বেশ সাউন্ডপ্রুফ। তাই কারোর কিছু শুনবার ভয় নেই।দিনের বেলাতেই খাবার স্টোররুমে এনে রাখে সে।রাতটা চলে যায় ওর।শুকনো খাবারে নষ্ট হবার সম্ভাবনা কম।এসব ভাবতে ভাবতেই সে স্টোররুমে উঠে পড়েছিলো সলিম দরজাটা ভালোমতো লাগিয়ে শুয়ে পড়ে।
হয়তো সে ঘুমিয়েই পড়েছিলো।অকারণেই হঠাৎ সলিমের ঘুম ভেঙ্গে যায়।ঘুটঘুটে অন্ধকারের ভেতর কে যেন বলে ওঠে,”সলিম সাব,কেমন
আছেন?”