একটি কলমের আত্মকথা

আমি একটি ছোট্ট কলম। এতকাল আমি অন্যের কথা বলেছি। লিখেছি তাদের সুখের কথা,ও দুঃখের কাহিনী। উওর লিখেছি ছাএ ছাএীর পরিক্ষার খাতায়। ডাক্তার, উকিল, মাস্টার, কেরানি, জজ-ব্যারিস্টার আমাকে দিয়ে লিখেছেন কত বিচিত্র বিষয়ে। গল্প, কবিতা লিখিয়েছেন কেউ বা আমাকে দিয়ে।আমি সারাটা জীবন মানুষের মনের কথা লেখলাম কিন্তু কেউ আমার কথা লিখল না। আমি নিতান্তই ভাষাহীন। তবু আমারও তো জীবন বলে একটা কিছু আছে। কলম হলেও আমার জন্মের একটি ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাস খুব গৌরবের নয়। কিন্তু  শিক্ষা ও সভ্যতা বিকাশে আমার বংশের অবদান  কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।আমার কর্মের গুণেই আজ আমি মানুষের নিত্যসঙ্গী। আমাকে ছাড়া শিক্ষিত, সভ্য মানুষের একমুহূর্তও চলে না। আমার এই অনিবার্য ভূমিকার কথা বলছি বলে,কেউ মনে করবেন না যে,  আমি নিজের মূল্য ও মর্যাদার কথা বাড়িয়ে বলছি। এতদিন মানুষ আমাকে দিয়ে নিজের মনের কথা লিখেছে। আমার কথা ভুলেও কেউ মনে করেনি। গান শেষে বাণী যেমন পড়ে থাকে মাটিতে অনাদরে, তেমনি অবস্থার শিকার আমিও। সবাই আমাকে কাজেই লাগিয়েছে কেউ আমাকে নিয়ে ভাবেনি। আমার কথা কারো মুখে আসেনি। তাই আজ নিজেই আমার কথা বলব। মন খুলে বলব। হৃদয় উজাড় করে বলব আমার জীবনকথা। আমি ছিলাম একটা দোকানের শো-কেসের ভেতরে। লাল একটা সুন্দর প্লাস্টিকের বাক্রে। অনেকদিন পড়েছিলাম এ অবস্থায়। একদিন সুবেশধারী এক ভদ্রলোক আমাকে তুলে নিলেন। পছন্দ হতেই কিনে নিলেন। আমাকে বাক্যসহ রেখে দিলেন ব্যাগে। বাড়িতে এসে তিনি বড়ছেলেকে উপহার হিসেবে দিলেন। ছেলেটি আমাকে পেয়ে খুব খুশি হলো। পার্কার কলম,অনেক দামি। দেখতেও খুব সুন্দর। ভদ্রলোক হেসে বললেন, খোকা সামনে তোমার পরীক্ষা। ভালো কলম দিয়ে লিখলে তোমার পরীক্ষা ভালো হবে। এবাভে আমি ছেলেটির ভবিষ্যতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেলাম। পরদিন খোকা আমাকে স্কুলে নিয়ে গিয়ে তার বন্ধুদের দেখালো। সবাই আমাকে নেড়েচেড়ে দেখল। বলল,বেশি দামি কলম দেখতেও কী সুন্দর। খোকা আমাকে যত্নে বুকপকেটে আটকে রেখে রোজ স্কুলে যায়। কতরকম লেখা লেখে। গদ্য -পদ্য প্রশ্নের উওর। ইংরেজি, বাংলা,কখনো অঙ্কক বা জ্যামিতি। এভাবে লিখতে লিখতে আমার প্রতি খোকার বেশ মায়া জন্মে গেল। একদিন ক্লাসের এক শিক্ষকও আমাকে ধরে নেড়েচেড়ে লিখে দেখে বেশ প্রশংসা করলেন। খোকাকে বললেন,সাবধানে রেখো যেন হারিয়ে না যায়। ইতোমধ্যে আমার প্র অনেকের নজর পড়ল। একদিন টিফিন পিরিয়ডে খোকা আমাকে ভুলে টেবিলে রেখে পানি খেতে যায়। এমন সময় একটি দুষ্ট ছেলে আমাকে নিয়ে গেল। লুকিয়ে ফেলল তার প্যান্টের পকেটে। আমাকে হারিয়ে খোকার মন খারাপ হয়ে গেল। অস্থির হয়ে সে ক্লাসের আনাচে কানাচে, বন্ধুদের কাছে অনেক খোঁজাখুঁজি করল। তারপর খোকা কলম হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটা তার স্যারকে জনালো। স্যার ক্লাসে কলম হারানোর ঘটনায় বেশ রেগে গেলেন। এতে দুষ্ট ছেলেটি খুব ভয় পেয়ে গেল। সবার অজান্তে সে আমাকে নিচে ফেলে পা দিয়ে আস্তে ঠেলে দিল খোকার পায়ের দিকে।আমি খোকার পায়ের কাছে গড়িয়ে গিয়ে পড়ে থাকলাম। মনে মনে বললাম, খোকা এই তো আমি,আমাকে কুড়িয়ে তুলে নাও। কিন্তু আমার কথা খোকার কানে যয়না। একসময় খোকার পায়ের সাথে লাগতেই সে নিচু হয়ে আমাকে তুলে নিল। আনন্দে সে বলে উঠল স্যার এই তো আমার কলম। এতে খোকা যেমন খুশি হয়েছিল, তেমনি খুশি হয়েছিল তার স্যার। খোকা একসময় আমাকে ফেলে রাখল এক ময়লা ফেলা জুড়িতে। কিন্তু আমার একটাই সার্থকতা যে আমি একজন মানুষের লাখি কলমের সম্নান পেয়েছি। আশাকরি এই কলমের আত্মকথা সকলের ভালো লেগেছেব।সবাইকে কলের আত্মকথা গল্পটি পড়ার জন্যে ধন্যবাদ।

Related Posts

36 Comments

মন্তব্য করুন