কুয়াকাটা সৈকতে একদিন

ভ্রমণ করতে সকলে ভালবাসে। তা যদি আবার সমুদ্র সৈকত হয় তবে তো কোন কথাই নেই। কারণ সমুদ্রের প্রতি মানুষের রয়েছে এক দুর্নিবার মোহ। স্রষ্টার অপরূপ লীলা এক রহস্য লুকিয়ে আছে সমুদ্রের জল রাশিতে। সমুদ্রের তলদেশের রহস্য সন্ধানে বিজ্ঞানীদের চলত প্রতিনিয়ত নানা গবেষণা। সমুদ্র মানুষকে হাসায় আবার কখনো কাঁদায়। কিন্তু তারপরেও সমুদ্রের প্রতি মানুষের মোহ  কাটে না। আর তার  থেকে কুয়াকাটা সৈকতের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ ক্রমোই বাড়তে থাকে।

  • কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের একটি অন্যতম সমুদ্র সৈকত। কৈশোরেই বই-পুস্তক শিক্ষক ও বন্ধুবান্ধবের কাছে থেকে কুয়াকাটা সৈকত সম্পর্কে অনেক শুনেছি। এসব কথা শুনে দেহ-মনে শিওরন জেগেছে।   মনের মানসপটে ভেসে উঠেছে সৈকতের বিশাল বেলাভূমি। যেখানে অসংখ্য মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে অহরহ। তাদের মাঝে আমিও মনের অজান্তে ঘুরে বেড়ায়। বালুচর বিশাল জলরাশি উর্মিমালা নির্জনে তীরে এসে পড়ছে কল্পনা সাত রঙ্গে এসব ছবি মনে মনে অনেক একেছি ।কিন্তু বাস্তবে দেখার সুযোগ হলো অনেক পরে।বাংলাদেশের অন্যতম একটি সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা দেখতে না পাওয়া টা সত্যিই একটি দুঃখজনক ব্যাপার। 2000 সালে যেখানে আমার প্রথমবার যার সৌভাগ্য হলো। এইচএসসি পরীক্ষার পর আমেরিকা থেকে আসা বড় আপা ও দুলাভাই সিদ্ধান্ত নিলেন তারা কুয়াকাটা সৈকতে বেড়াতে যাবেন। তাদের সফরসঙ্গী হিসেবে আমাকে নেয়ার জন্য প্রস্তাব করলেন হাতে প্রচুর সময় ও মনের ইচ্ছা থাকায় আমিও বিনা বাক্যে রাজি হয়ে গেলাম। আগস্ট এর মাঝে মাঝে সময়ের কোন এক সকালে কাপড় চোপড় গুছিয়ে নিয়ে একটি মাইক্রো বাসে করে আমরা কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। শরতের মিষ্টি রোদে আমাদের মাইক্রো এগিয়ে চলল। রাস্তার দু’পাশে সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করলো। দীর্ঘ একটা বিরতি ছাড়া মোটামুটি বিকেলের দিকে আমরা পৌঁছে গেলাম। সারাদিন ভবনের কারনে সেদিন আর আমরা কোথাও বেড়াতে গেলাম না। সরাসরি আমরা বুকিং দেয়া হোটেলে চলে আসলাম।পরিপাটি হয়ে    চা পানের সময় আমরা পরের দিনের কর্মসূচি তৈরী করে নিলাম।
  • আমি সকালে কখন ঘুম থেকে উঠতে পারতাম না। কিন্তু সেদিন একটি ব্যতিক্রম হলো। সকালে ঘুম ভেঙ্গে যায় সৈকতের টানে। প্রস্তুতিপর্ব সেড়ে আমার সৈকত এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ি। আপা দুলাভাই যখন পূর্ব দিগন্তে সূর্য উদয় দেখছিলেন তখন আমি আমার কল্পনার মাঝে বাস্তবের সাথে মিল আছে। কোন কোন বিষয়ে বাস্তবের সাথে কল্পনার চমৎকার দৃশ্য থাকে আমি অভিভূত হয়েছিলাম ।পৃথিবীর জল ও স্থল ভাগের সন্ধিক্ষণের জন্য নিজের অস্তিত্বকে ভুলে যায়। সকালে সৈকত কোলাহলপূর্ণ ছিল না কেবল পাখি আর সমুদ্রের গর্জনে তার দিকে প্রকম্পিত হচ্ছিল। তবুও সমুদ্রে মহাকল্লোল প্রবাহ দ্বারা সি্নগ্ধতা তিল তিল করে উপভোগ করছিলাম।
  • সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সমুদ্র সৈকত দুদিন অবস্থানের পর আমাদের প্রস্থানের পালায় আসে। যদি ও আপা আরো দুদিন থাকতে চেয়েছিল। কিন্তু পত্রিকায় পরীক্ষার ফল প্রকাশের সংবাদ শুনে পরদিন আমরা বাসায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিই। পরের দিন সকালে আমরা ফিরতি যাত্রা শুরু  করলাম। গাড়ির দোলাই আমি ঘুমিয়ে পড়ি এবং ঘুমের মাঝে কুয়াকাটা সৈকত মনের আয়নায় ভেসে ওঠে।
  • সমুদ্র মানুষকে টানে। মানুষের ক্লান্তি কে প্রশমিত করে। সমুদ্রের গভীরতা মানুষের মনকে উদার করে মহৎ করে ফলে ।মানুষ নিজের অন্তরে তৈরি করতে পারে সংস্কার পূর্ণ ও প্রতিবন্ধকতা হীন এক নতুন জগৎ।
  • আমি দেখছিলাম সূর্যাস্তের অপূর্ব সৌন্দর্য, আমি দেখছিলাম কিভাবে সৌন্দর্য প্রতিফলিত হয় ।যেন স্বরূপ চঞ্চল হয়ে ওঠে চারপাশ। নতুন প্রাণ ফিরে পায় সমুদ্র হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা পরস্পরকে উজাড় করে দিয়ে তারা পুলকিত হয়।

👉আসসালামু আলাইকুম। ❤

<

Related Posts

11 Comments

মন্তব্য করুন