Cheap price backlink from grathor: info@grathor.com

কোনো উন্নতমানের যন্ত্র ছাড়া পিরামিডের উচ্চতা কীভাবে নির্ণয় করা হয়? ইউক্লিড ও থেলিসের পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয়ের গল্প……

আসসালামু আলাইকুম সবাইকে , আজ আবারও হাজির হলাম এক নতুন বিষয় নিয়ে। আজ আমি আলোচনা করতে চলেছি থেলিস ও ইউক্লিডের পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয় সম্পর্কে। প্রথমেই থেলিস ও ইউক্লিড এর সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়া যাক-

এক অসাধারণ গ্রিক শিক্ষাবিদ এবং ব্যাবসায়ী “থেলিস” (625-545 BC) । তিনিই প্রথম চিন্তা করেন জ্যামিতি দিয়ে অনেক জটিল বিষয়ের সমাধান করা সম্ভব। ত্রিকোণোমিতির উন্নতির ভিত্তি স্থাপনে তিনি গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করেন। মূলত পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয়ের মাধ্যমে ত্রিকোণোমিতিতে তার অবদানের পথ সুগম হয়। আজ থেকে প্রায় ২৭০০ বছর আগে তিনি সর্বোপ্রথম পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয় করেন । অর্থাৎ তিনি যিশু খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ৬০০ বছর আগেই পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয় করেন ।

আবার অপরদিকে ইউক্লিডকে তো আমরা সবাই চিনি, তিনি তার লেখা জ্যামিতির এলেমেন্টস বইয়ের জন্য খ্যাত হয়ে আছেন । তার জন্ম সম্পর্কে তেমন কোনো সঠিক ধারণা পাওয়া যায় না। কিন্তু ধারণা করা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০ থেকে ৩০০ শতাব্দি পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। তিনিও একজন বিখ্যাত গ্রিক গণিতবিদ ছিলেন। তিনিও থেলিসের ন্যায় পিরামিদের উচ্চতা নির্ণয় করেন। তবে তিনি থেলিসের চেয়ে অত্যন্ত সহজ পদ্ধতিতে পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয় করেন। থেলিস যেখানে ২৭০০ বছর আগে পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয় করেন সেখানে ইউক্লিড তার ২০০ বছর পর অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর আগে পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয় করেন সহজ পদ্ধতিতে।

আমরা তাহলে সর্বপ্রথম ইউক্লিডের দ্বারা সহজে পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয় করার পদ্ধতিটা জেনে আসি-

ইউক্লিড পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয় করেন শুধুমাত্র একটি খুটি ও ছায়ার মাধ্যমে। তিনি পিরামিড থেকে কিছু দূরে সমতল ভুমিতে একটি খুটি পুতেন । এরপর খুটিটির দৈর্ঘ্য মাপেন এবং সেই দৈর্ঘকে তিনি ব্যাসার্ধ্য ধরে খুটির গোড়া থেকে তার চারপাশে একটি বৃত্ত আঁকেন। আগেই বলেছিলাম যে খুটির পাশাপাশি তিনি ছায়ারও সাহায্য নিয়েছিলেন। তিনি সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন এবং সূর্যোদয়ের পর তিনি লক্ষ্য করতে থাকেন যে কখোন খুটির ছায়া এসে বৃত্তের রেখার উপর পরবে। কেননা বৃত্তের রেখটাতো খুটির দৈর্ঘ্যকে ব্যাসার্ধ্য ধরে আঁকা হয়েছিলো। সূর্য যত উদয় হতে থাকে খুটির ছায়ার দৈর্ঘ্য ততই বড় থেকে ছোট হতে থাকে। খুটির দৈর্ঘ্য আস্তে আস্তে ছোট হতে হতে বৃত্তের রেখার উপর এসে পরে। তখন তিনি বুঝতে পারেন যে ছায়ার দৈর্ঘ্য খুটির দৈর্ঘ্যটির সমান। এই সময়ে সাথে সাথে তিনি পিরামিডের ছায়ার দৈর্ঘ্যটিও মেপে নেন । এভাবে ইউক্লিড সহজেই পিরামিডের উচ্চতা বের করে ফেলেন।

অন্যদিকে থেলিস ইউক্লিডেরও ২০০ বছর আগে পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয় করলেও তিনি তা নির্ণয় করেন একটি জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তিনি তো জ্যামিতি দিয়ে অনেক জটিল বিষয়ের সমাধান করার চেষ্টা করতেন সেজন্য এক্ষেত্রেও তিনি কোনো ভিন্ন পদ্ধতী অবলম্বন করেননি।

তিনি কিছুটা এই ধরণের পদ্ধ্যতি অবলম্বন করেছিলেন-

  1. তিনি প্রথমে পিরামিদের একটি সাইডের ত্রিভুজকে নির্বাচণ করেন এবং সেই ত্রিভুজকে সমদ্বিখন্ডিত করে ২টি সমকোণী ত্রিভুজে পরিণত করেন।
  2. এরপর তিনি তন্মধ্য থেকে একটি সমকোণী ত্রিভুজকে নির্বাচন করে তার ভুমি ও সমকোণ ব্যাতিত ভুমি সংলগ্ন অপর কোণের মাপ নিয়ে নেন।
  3. তিনি এই দুইটি মানের মাধ্যমে ত্রিকোনোমিতির সূত্র, tan θ = লম্ব/ভুমি  দ্বারা লম্ব এর মান বের করে নেন।
  4. এখানেই শেষ না। তিনি যে লম্বের মান বের করেন সেটি আসলে পিরামিডের এক সাইডের ত্রিভুজের উচ্চতা ।অর্থাৎ ঘন জ্যামিতির দিক থেকে লক্ষ করলে তিনি পিরামিডের হেলানো তলের উচ্চতা বের করেন। তাই এবার ঘন জ্যামিতির সূত্র অনুযায়ী তিনি অনেক সহজেই পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয় করতে পারলেন। তিনি,
    লম্ব=√(〖হেলানো তলের দৈর্ঘ্যে 〗^2-〖ভুমির দৈর্ঘ্যে〗^2 )
    এই সূত্র এর মাধ্যমে লম্বের মানটি বের করে ফেলেন যেহেতু হেলানো তলের দৈর্ঘ্যে ও ভুমির দৈর্ঘ্যে উনার জানা ছিলো।

এভাবে গ্রিক শিক্ষাবিদ এবং ব্যাবসায়ী “থেলিস” প্রায় খ্রিষ্টোপূর্ব ৬০০ অব্দে সমকোণী ত্রিভুজের মাধ্যমে পিরামিডের উচ্চতা বের করে মিসরীয়দের চমক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এটাই পরবর্তীতে ত্রিকোণোমিতির উন্নতিতে ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

এই বিশালাকৃতির পিরামিড বর্তমান পৃথিবীর সপ্তাশ্চার্যের একটি। এই পিরামিডের উচ্চতা নির্ণয়কারীদের জন্য আমার পক্ষ থেকে অনেক ধন্যবাদ। আজ এর জন্যই গণিতের এক বিশেষ অংশ ত্রিকোনোমিতি উন্নতির শিখরে।

আগামীতে আবারও এক নতুন বিষয় নিয়ে হাজির হব, “ইনশাল্লাহ”।
সবাই সুস্থ থাকবেন, ভালো থাকবেন।
ধন্যবাদ।

Related Posts

4 Comments

Leave a Reply

Press OK to receive new updates from Firstsheba OK No