আজকের পোস্টে আমরা গর্ভাবস্থায় তাল খাওয়া যাবে কি না, গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। গর্ভাবস্থায় মায়েদের কি কি খাওয়া উচিত, কি কি খাওয়া উচিত না আর গর্ভবতী নারীদের জন্য খাদ্য তালিকা নিয়ে আজকের পোস্টে কথা বলতে যাচ্ছি। তো শুরু করা যাক।
গর্ভবতী মা ও খাদ্য:
গর্ভবতী নারীদের কতটুকু খাবার খেতে হবে তা একটি চিন্তার বিষয়। নারীদের গর্ভাবস্থায় প্রায়ই বিভিন্ন খাবার খাওয়ার খুবই ইচ্ছা জাগে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অর্থাৎ বেশি একটা খাওয়া উচিত নয়। আবার হঠাৎ হঠাৎ খাবারে অরুচি দেখা যায় এবং কোনো কিছু খেতে চায় না ফলশ্রুতিতে মা ও সন্তান অপুষ্টিতে ভুগতে থাকে।
খাবারে অরুচি হলেও তাকে খাবার খাওয়াতে হবে। এখন কি কি খাবার খাওয়া যাবে বা কি কি খাবার খাওয়া যাবে না তা ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলেই বলে দিবে আর তার সাথে সাথে খাবারের পুরো চার্টও দিয়ে দিবে।
এই চার্ট নারীর বয়স, শিশুর বয়স ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিসের উপর নির্ভর করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় কি কি সবজি খাওয়া যাবে না
নিচে বিভিন্ন খাবারের পুষ্টি উপাদানের উপর ভিত্তি করে একজন নারীর গর্ভাবস্থায় কোন মাসে কতটুকু কি খাবার প্রয়োজন আর কি কি না খাওয়াই ভালো হবে তা দেওয়া হলো।
গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা
গর্ভবতী মায়ের খাদ্য তালিকায় বেশি বেশি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার রাখতে হবে। তাছাড়া সঠিক পরিমাণে সুষম খাদ্যও রাখতে হবে। খাদ্য তালিকায় ভাজাপোড়া না রাখার চেষ্টা করতে হবে। খাবার ভালোভাবে রান্না করতে হবে। রান্না করা খাবারে অতিরিক্ত তেল দেওয়া যাবে না।
যেসব খাবার কাঁচাই খায় যেমন বিভন্ন ফলমূল ভালোভাবে ধুয়ে খেতে হবে। এছাড়াও শাকসবজি রান্নার আগে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। যেসকল খাবারে অরুচি দেখ যায় সেসব খাবার কিছু সময়ের জন্য একটু কম খাবেন।
কোন মাসে কতটুকু খাবার খেতে হবে তা অনেকটাই মা কত মাসের অন্ত:সত্ত্বা তার উপর নির্ভর করে।
প্রথম তিন মাসে মায়ের সাধারণত স্বাভাবিক পরিমাণেই খাবারের প্রয়োজন ও তারপরের তিন মাসে খাদ্য একটু বেশি লাগে আর শেষের তিন মাসে সাধারণত শিশুর মূল বিকাশ ঘটতে থাকে এবং এসময় মায়ের সাধারণত বেশি খাবারের প্রয়োজন হয়।
উল্লেখ্য কোন মাসে বা কখন থেকে বেশি খাবারের প্রয়োজন তা সবার ক্ষেত্রেই আলাদা হয়ে থাকে। উপরের পরিমাণটা শুধুই একটা গড়।
১ থেকে ৩ মাসে কি খাওয়াবেন:
প্রথমেই বলেছি প্রথম তিন মাসে তেমন একটা অতিরিক্ত খাবারের প্রয়োজন হয় না। তবে গর্ভাবস্থায় ওজন বেড়ে যেতে থাকে সেক্ষেত্রে খাবারের পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে আনতে হবে। এসময় আপনি নিয়মিত হালকা ব্যায়ামও করতে পারবেন। কিন্তু ভারি ব্যায়াম বা ভারি কোনো বস্তু উঠাবেন না।
গর্ভাবস্থায় বমি বমিভাব সমস্যা কমাতে সাহায্য করবে
এখন আপনার প্রতিনিয়ত ঠিক কতটুকু খাবার লাগবে তা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। আপনার বয়স কত, আপনার ওজন কত, আপনি দৈনন্দিন কতক্ষণ ব্যায়াম করেন, কতটুকু দৈহিক পরিশ্রম করেন, আপনার উচ্চতা কত ইত্যাদি। কিন্তু সাধারণত প্রতিনিয়ত খাদ্যের পরিমাণ ১৫০০ থেকে ১৮০০ ক্যালরির মধ্যে থাকতে হবে।
আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আমিষ, শর্করা, ভিটামিন ও খনিজ লবণ, চর্বি এসকল পুষ্টি উপাদানের খাদ্য রাখতে হবে। এর পাশাপাশি সুষম খাদ্য তো রাখতেই হবে।
আপনি প্রতিদিনের খাবারে ভাত রাখতে পারেন ৪০০ থেকে ৬০০ গ্রাম। আপনি চাইলে ভাতের বদলে রুটিও খেতে পারেন কারণ উভয়েরই মধ্যে মূলত শর্করাই রয়েছে। আপনি সাদা চালের বদলে লাল চালও খেতে পারেন। এরপর ভিটামিন ও খনিজ লবণের জন্য আপনি রঙিন শাক, সবজি ও ফলমূল খেতে পারেন।
এছাড়াও খাবারে দুধ ও ডিম রাখবেন এতে কমবেশি প্রায় সব পুষ্টি উপাদানই বিদ্যমান থাকে। প্রতিদিনের একটির চেয়ে বেশি ডিম খাওয়া ঠিক হবে না আর প্রতিনিয়ত ২৫০ মি.লি. এর মতো দুধ খেতে হবে।
শরীরে আমিষের সরবরাহের জন্য আপনি মাছ, মাংস ও ডাল খেতে পারেন। প্রতিদিন দুই থেকে তিন টুকরার বেশি মাংস খাওয়া ঠিক হবে না।
৪ থেকে ৬ মাসে কি খাওয়াবেন
৪ থেকে ৬ মাসে প্রথম তিন মাসের চেয়ে বেশি খাবারের প্রয়োজন হয়। গত তিন মাসের চেয়ে কমপক্ষে ৩০০ থেকে ৪০০ ক্যালরি বেশি প্রয়োজন হবে। গড়ে প্রায় ২২০০ ক্যালরির মতো প্রয়োজন হবে।
উপরে যেসকল খাবারের কথা দেওয়া রয়েছে সে খাবারগুলো খেলেই হবে কিন্তু একটু বেশি করে খেতে হবে। ডাক্তার যদি বলে তাহলে হালকা ব্যায়ামও করবেন।
৭ থেকে ৯ মাসে কি খাওয়াবেন
৭ থেকে ৯ মাসে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি খাবার প্রয়োজন কারণ এসময় শিশুর অনেক দ্রুত বিকাশ ঘটতে থাকে। এসম্ল্য আপনার দৈনিক গড়ে ২৪০০ থেকে ২৬০০ ক্যালরি প্রয়োজন।
মা হওয়ার আগে সতর্কতামূলক যেসব জরুরী পরীক্ষা করা জরুরী
আগেত দেওয়া খাবারগুলোই একটু বেশি পরিমাণে খেলেই হবে। ব্যায়াম করবেন না যদি না ডাক্তার আপনাকে উপদেশ দেয়।
গর্ভাবস্থায় তাল খাওয়া যাবে কি ? কোনো সমস্যা হবে না তো?
না। গর্ভাবস্থায় তাল খেলে কোনো সমস্যা হবে না বা হওয়ার কথা না। কিন্তু যদি গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত তাল খান সেক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। আসলে কোনো খাবারই অত্যাধিক পরিমাণে খাওয়া উচিত না। তাল অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম তালে ৮৭ ক্যালোরি খাদ্যশক্তি থাকে।
৭৭.৫ গ্রাম জলীয় অংশ থাকে ১০.৯ গ্রাম শর্করা, ১ গ্রাম রাফেজ, ০.৮ গ্রাম আমিষ, ০.১ গ্রাম চর্বি থাকে। এছাড়াও সামান্য কিছু পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, থায়ামিন থাকে।
তো পোস্টটি (গর্ভাবস্থায় তাল খাওয়া যাবে কি) কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।