আজকের পোস্টে আমরা গলার ভিতরের মাংস বৃদ্ধি নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। গলার ভিতরের মাংস বৃদ্ধি কি, গলার ভিতরের মাংস বৃদ্ধি কেন পায়, গলার ভিতরে মাংস বৃদ্ধি হলে কি করবেন, গলার ভিতরের মাংস কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় নিয়ে আজকের এই পোস্টে আলোচনা করা হবে। তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।
গলার ভিতরের মাংস বৃদ্ধি: গলার ভিতরের মাংস বৃদ্ধি আমরা কম বেশি প্রায় সবাই শুনেছি বা অনুভব করেছি। গলার ভিতরে কোনোকিছু একটা আটকে আছে, গিলতে অসুবিধা হওয়া, কিছু কিছু ক্ষেত্রে শ্বাস নেওয়ায় কষ্ট হওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।
অনেক সময় কণ্ঠই পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। গলার ভিতরে মাংস বৃদ্ধি পেলে কি কি সমস্যা দেখা দিবে তা কোন কারণে গলার মাংস বৃদ্ধি হয়েছে মূলত তার উপর নির্ভর করে। গলার ভিতরের মাংস বৃদ্ধির কারণসমূহ নিয়ে নিচে আলোচনা করা হবে। গলার ভিতরের মাংস বৃদ্ধি পেলে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না করা হলে তা মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে।
গলার ভিতরে মাংস বৃদ্ধি কেন হয়?
গলার ভিতরের মাংস বৃদ্ধি পেলে আপনার করণীয় কি জানার আগে নিশ্চয়ই আগে আপনাকে জানতে হবে যে গলার মাংস বৃদ্ধি ঠিক কি কারণে হয়েছে।
এখন গলার ভিতরের মাংস বৃদ্ধির বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
রিফ্লাক্স
গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স বা সংক্ষেপে খালি রিফ্লাক্স হচ্ছে হজমের একটা ব্যাধি। একে এসিড রিফ্লাক্সও বলা হয়।
বাংলা কথ্য ভাষায় টক ঢেকুরও বলা হয়। আসলে এই রোগে গলার কোনো মাংস বৃদ্ধি পায় না।
খালি পাকস্থলীর নানা খাদ্য ও এসিড উপরে উঠে আসে।
এখন আপনার মনে হতে পারে গলার ভিতরে মাংস বৃদ্ধির মধ্যে এই এসিডের সমস্যার কথা কেন নিয়ে এসেছে।
আসলে গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্সের অনেক লক্ষণই গলার ভিতরের মাংস বৃদ্ধির সাথে মিলে যায় তাই মানুষ ভুল করে মনে করে যে তার মাংস বৃদ্ধি পেয়েছে বা ভয়াবহ কোনো সমস্যা হয়েছে। আসলে কিন্তু তা মোটেই নয়।
এসিড রিফ্লাক্সের লক্ষণসমূহ নিয়ে পরে আলোচনা করা হবে।
থাইরয়েড
থাইরয়েড মানব শরীরের অন্যতম প্রধান অঙ্গ। থাইরয়েড একটি প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থ।
থাইরয়েডের মধ্য থেকে নানা ধরণের হরমোন নি:সৃত হয় যা আমাদের বিপাক ক্রিয়া অর্থাৎ খাদ্য হজম করতে সহায়তা করে৷
এখন গলার ভিতরে মাংস বৃদ্ধি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় থাইরয়েডে নানা সমস্যার কারণে।
থাইরয়েডের মূল কয়েকটি রোগ নিম্নে দেওয়া হলো:
১. গলগণ্ড: আমরা কমবেশি সবাইই এই গলগন্ড রোগের সাথে পরিচিত। কোথাও না কোথাও আমরা গলগন্ডের নাম শুনেছি। এখন এই গলগন্ড কি? গলগন্ড হলো থাইরয়েডের এক ধরণের রোগ। থাইরয়েডে ডান ও বাম দিকে দুইটি অংশে বিভক্ত। প্রতিটি অংশকে লোব বলা হয়। লোব দুটি ইস্মাস দ্বারা সংযুক্ত থাকে। এখন কোনো কারণে যদি পুরো থাইরয়েড বা থাইরয়েডের কোনো লোব অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে যায়/বৃদ্ধি অয়ায় তখন তাকে গলগন্ড বা গয়টার বলে।
২. থাইরয়েডের টিউমার: থাইরয়েডের কোনো কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ছড়িয়ে পড়াকে থাইরয়েডের টিউমার বলে। থাইরয়েড টিউমার হয় সাধারণত থাইরয়েডের গ্ল্যান্ড অংশে। এই গ্ল্যাল্ড অংশ থেকেই থাইরয়েডের হরমোন সৃষ্টি হয়।
এখন এই টিউমার থেকেই হতে পারে প্রাণঘাতী ক্যান্সার যাকে আমরা বলি থাইরয়েডের ক্যান্সার।
গলার ক্যান্সার: থাইরয়েডের টিউমার বা ক্যান্সারের পাশাপাশি গলার ভিতরেও ক্যান্সার হতে পারে। গলার ক্যান্সার গলার বিভিন্ন অঞ্চলে হতে পারে।
সাধারণত হলার পিছনে যে নল থাকে সেই নলের হাড়ে ক্যান্সার হয়ে থাকে। কথা বলার সাথে সাথে এই হাড় কম্পিত হয়।
টনসিল: টনসিল আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষায় কাজ করে। কোনো ধরণের জীবাণুকে শরীরের ভিতরের গুরুত্বপূর্ণ অংশসমূহে প্রবেশ থেকে থামায়। এখন এই টনসিলের যখন প্রদাহ হয় তখন তাকে আমরা বলি টনসিলাইটিস।
সাধারণ অর্থে আমরাযাকে টনসিল বলি তা আসলে টনসিলাইটিস। টনসিলাইটিসের ফলে টনসিল ফুলে যেতে আপ্রে।
সাধারণত এ রোগে তেমন কিছুই হয় না তবে কিছু কিছুক্ষেত্রে এই টনসিল মারাত্মক আকারও ধারণ করতে পারে।
গলার ভিতরে মাংস বৃদ্ধির লক্ষণসমূহ:
গলার ভিতরে মাংস বৃদ্ধি পেলে এর বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। গলার ভিতরের মাংস বৃদ্ধির প্রতিটি কারণের ক্ষেত্রে এর লক্ষণও ভিন্ন ভিন্ন। নিম্নে কিছু লক্ষণসমূহ তুলে ধরা হলো।
এসিড রিফ্লাক্স: এসিড রিফ্লাক্সের লক্ষণসমূহ হলো:
১. খাদ্য বা পানি গিলতে অসুবিধা হয়।
২. ঢোক গিলতে অসুবিধা হয়।
৩. গলার স্বর বসে যায়।
৪. শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
৫. কিছু কিছু ক্ষেত্রে বুকে জ্বালা করতে পারে।
থাইরয়েড:
ক. থাইরয়েডের ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ হলো:
১. গলায় হটাৎ কোনো মাংসপিন্ড দেখতে পাওয়া।
২. শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
৩. খেতে কষ্ট হয়।
৪. গলার আওয়াজ বসে যায়।
আসলে নিজে নিজে ক্যান্সার শনাক্ত করা খুবই কঠিন এমনকি প্রায় অসম্ভব বললেও ভুল হবে না। ক্যান্সার সাধারণত তেমন কোনো লক্ষণ প্রদর্শন করে না।
খ. গলগন্ডের লক্ষণসমূহ:
১. গলার সামনের দিক হাল্কা ফুলে যায়।
২. শ্বাস নিতে অসুবিধা।
৩. গলাব্যথা ও মাথাব্যথাও থাকতে পারে।
গলার ক্যান্সার: গলার ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ:
১. শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
২. গলায় ও মুখে ব্যথা করা।
৩. অনেকদিন কফ ও কাশি থাকা।
৪. হটাৎ স্বরে পরিবর্তন।
৫. কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাঁতে সমস্যা দেখা দেওয়া।
টনসিল: টনসিলের লক্ষণসমূহ:
১. গলাব্যথা ও মাথাব্যথা হওয়া।
২. খাবার খেতে অসবিধা।
৩. কণ্ঠস্বর ভারি হওয়া।
৪. মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়া।
গলার ভিতরে মাংস বৃদ্ধি হলে কি করবেন, বৃদ্ধি পেলে করণীয় কি?
প্রতিটি রোগের ক্ষেত্রেই করণীয় আলাদা।
থাইরয়েডের ক্যান্সার: থাইরয়েডে ক্যান্সার ফলে তা নিয়ে বসে থাকা যাবে না। আপনার যদি মনে হয় যে আপনার গলার মধ্যে টিউমার হয়েছে বা উপরিউক্ত লক্ষণসমূহ দেখা দিচ্ছে তাহলে কোনো সময় নষ্ট না করে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হন।
ডাক্তার আপনাকে টি৪ টিএসএইচ ব্লাড টেস্ট করতে দিবে এবং পরবর্তীতে আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা করতে পারে।
এরপর ক্যান্সার ধরা পড়লে ডাক্তার সার্জারি বা আয়োডিন থেরাপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
গলগন্ড: প্রথমেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। অনেকক্ষেত্রেই ডাক্তার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এছাড়া ডাক্তার গলগন্ডের মাধ্যমে টিউমার বা ক্যান্সার হওয়ার আশংকা আছে কিনা তাও দেখে নিতে পারেন।
গলার ক্যান্সার: প্রথমে ডাক্তারের কাছে গিয়ে ক্যান্সার হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হন। ডাক্তার অস্ত্রোপচার করতে পারে। এছাড়াও ক্যামিও থেরাপিও করানো হতে পারে।
টনসিল: টনসিলে সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম করতে হবে। যেহেতু টনসিলের সাথে সাথে জ্বরও থাকে সেহেতু জ্বরের ওষুধও খেতে হবে। ওষুধ নিশ্চই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
গলার ভিতরে মাংস বৃদ্ধি দূরের ঘরোয়া উপায় / গলার ভিতরে মাংস বৃদ্ধি হলে কি করবেন
প্রায় সব রোগেরই কমবেশি ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু মারাত্মক রোগের তেমন কোনো ঘরোয়া চিকিৎসা নেই।
ক্যান্সারেরও তেমন কোনো প্রমাণিত ঘরোয়া চিকিৎসা নেই। অন্যান্য প্রায় সব রোগের ক্ষেত্রেই ঘরে বসে বসে নিজে নিজে কিছু কিছু চিকিৎসা করতে পারেন৷ আসলে শুধু ঘরোয়া চিকিৎসা একদম সাধারণ রোগও জটিলরূপ ধারণ করতে পারে।
তাই নিশ্চয়ই ঘরোয়া চিকিৎসার পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসাও করতে হবে।
ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোনো ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়।
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ওষুধ গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
গলগন্ড:
গলগন্ডের ক্ষেত্রে ঘরোয়া চিকিৎসা খুবই উপকারি। গলগন্ডের সমস্যা মূলত হয় আয়োডিনের অভাবে। গলগন্ডের সমস্যা হলে বেশি বেশি আয়োডিনযুক্ত খাবার খেতে হবে।
আয়োডিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে থাইরয়েডের সমসয়া অনেকটাই কমে যাবে।
আপনি যদি সবসময়ি পর্যাপ্ত আয়োডিনযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করেন তাহলে আপনার গলগন্ড হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বললেই চলে।
থাইরয়েড:
বেশ কিছু খাদ্য থাইরয়েডে সমস্যার সৃষ্টি করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাঁধাকপি, ফুলকপি, কলমি শাক, শালগম, কেল, ব্রোকলি, বোকচয়, ব্রাসেলস স্প্রাউটস, সয়া জাতীয় খাদ্য যেমন সয়া সস, টফু ইত্যাদি।
এসব খাবার একটু কম খাওয়া ভালো। কিন্তু একদম না খেলে শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দিতে পারে।
তাই স্বাভাবিক পরিমিত পরিমাণে এসব খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। এসব খাবারের ক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকতে হবে।
টনসিল:
টনসিল একদম সাধারণ একটা রোগ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘরোয়া সাধারণ চিকিৎসার মাধ্যমেই টনসিল দূর করা সম্ভব। প্রয়োজন মতো পানি পান করতে হবে। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত পর্যাপ্ত বিশ্রাম করতে হবে।
গরম পানিতে লবণ দিয়ে গড়গড় করতে হবে।
এর পরিবর্তে মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করেও কুলি করা যেতে পারে। চা খাওয়া যেতে পারে।
লবণ বা আদা দিয়ে চা খেলে সবচেয়ে ভালো হবে। ঠান্ডা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
কষ্ট হলেও অল্প কিছু খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরে শক্তি থাকবে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধি হবে। টনসিলের সাথে সাথে জ্বরও আসতে পারে।
তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।
প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ যেমন নাপা বা এ ধরণের ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে।
তো এই ছিল (গলার ভিতরে মাংস বৃদ্ধি হলে কি করবেন) আজকের পোস্ট। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
ধন্যবাদ। বেশ তথ্যবহুল একটি লিখা।
Aro cay
good
good
Thanks
ধন্যবাদ তথ্য বহল পোস্ট এটি
Aro cay
ধন্যবাদ
গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা