চায়ের দোকানঃ
চায়ের দোকান আমাদের দেশের একটি অতিপরিচিত দৃশ্য। দেশের কোনো না কোনো কোণায় একটি না একটি চায়ের দোকান দেখতে পাওয়া-ই যায়।
সচরাচর বাস স্টেশনের আশেপাশে, রেলওয়ে স্টেশনের আশেপাশে, হাট-বাজারের আশেপাশে চায়ের দোকান দেখা যায়। এছাড়াও অনেক পাড়া-মহল্লার রাস্তার মোড়েও অনেক চায়ের দোকান দেখতে পাওয়া যায়।
চায়ের দোকানের ব্যবস্থাপনাঃ
অতি সামান্য জিনিসপত্র এবং খাবার সামগ্রী দ্বারা চায়ের দোকানগুলো সাজানো থাকে। ছোট্ট একটি দোকানে কয়েকটি চেয়ার এবং টেবিল সারিবদ্ধভাবে সাজানো থাকে। ১-২ টি কিংবা ৩টি চায়ের কেটলি সবসময় চুলায় রাখা থাকে। চায়ের পাশাপাশি কিছু জলখাবার বা হালকাখাবারও এখানে পরিবেশন করা হয়। যেমন – বিস্কুট, পাউরুটি, কেক, কলা, সিঙ্গারা, পুরি, পান, সিগারেট ইত্যাদি।
চায়ের দোকানমালিক দোকান সামলানোর পাশাপাশি গ্রাহকদের খাবারও পরিবেশন করেন। আবার অনেক সময় একজন কিংবা দুজন পুঁচকে ছেলেকে দেখা যায় গ্রাহকদের খাবার পরিবেশন করতে।
চায়ের দোকানে আড্ডাঃ
চায়ের দোকান এমন একটি জায়গা যেখানে বিভিন্ন জীবনধারার মানুষ এসে একত্রে মিলিত হয়। মুরুব্বিগণ, মধ্যবয়সী লোকজন, বেকার লোকজন, তরুণ-যুবক বলতে গেলে প্রায় সকল শ্রেণী এবং বয়সের লোকজনকে এখানে সকাল, সন্ধ্যে, বিকেলে আড্ডা দিতে দেখা যায়।
এখানে তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা, সমাজের বিভিন্ন সমস্যা, দেশের এবং পৃথিবীর নানান বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। একেকজন একেক বিষয় নিয়ে কথা বলেন, তর্ক-বিতর্ক করেন।
সোজা কথায় বলতে গেলে, চায়ের দোকান দেশের সাধারণ মানুষদের একটি ছোট্ট আলোচনাসভা বা বৈঠক।
চা-ওয়ালাদের আত্মজীবনীঃ
চায়ের দোকানের ও এর আশেপাশের পরিবেশ-অবস্থা সম্পর্কে আমরা কম-বেশি প্রায় সবাই জানি। কিন্তু আমরা এই চা-ওয়ালাদের জীবন সম্পর্কে কতটুকুই বা জানি। তাদের ব্যক্তিগত জীবন, তাদের জীবন-ধারণ ব্যবস্থা এসব সম্পর্কে আমরা কতটুকু অবগত। এদের নিয়ে আমরা কজন খোঁজ-খবর রাখি।
একটি চায়ের দোকান চালিয়ে পরিবারের সবার ভরণপোষণ করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। যাদের চায়ের ব্যবসা মোটামুটি ভালো হয়, তারা কোনোমতে তাদের জীবন চালিয়ে যান। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে তা হয় না। অনেককে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য চায়ের দোকানের পাশাপাশি আরো নানা কাজ করতে হয়। যেমন – অনেকে রিকশা চালান, অনেকে কৃষি কাজ করেন ইত্যাদি। আরো নানান ধরনের কাজ করে থাকেন।
আর গ্রাহক এবং ক্রেতাদের কটু কথাগুলো তো আছেই। চায়ের দোকানে ভালো-খারাপ, বখাটে সব চরিত্রের মানুষ আসে। তাদের কাছ থেকে চা-ওয়ালাদের নানান সময় নানান কথা শুনতে হয়। চা-ওয়ালাদের কেউ যদি গালিও দেয়, তাও তারা কিছু বলেন না, মুখ বুজে সব সহ্য করেন। আর তাদের পক্ষে কথা বলার মতো এবং প্রতিবাদ করার মতো কোনো মানুষও খুঁজে পাওয়া যায় না।
তারা যদি কোনো কিছুর জন্য প্রতিবাদ করেনও উল্টো তাদেরকেই মার খেতে হয়। অনেক সময়ই শোনা যায়, অমুক জায়গায় অমুক চা-ওয়ালাকে কজন মিলে মেরেছে। মেরেছে তো মেরেছে সাথে তার দোকানও ভেঙ্গে দিয়ে গেছে। যেখানে অনেকের রোজগার করার একমাত্র পন্থা তাদের ঐ চায়ের দোকান।
জানা যায়, “কজন মিলে তার দোকানে অপরিত্রভাবে আড্ডা দিচ্ছিলো, এর প্রতিবাদ করায় তাকে মারধোর এবং তার দোকান ভাঙচুর করা হয়।”
চা-ওয়ালাদের শিক্ষাজীবনঃ
চায়ের দোকান চালিয়ে পরিবারের সবার চাহিদা মিটিয়ে, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালানো চারটে খানি কথা নয়। তবুও অনেকে কষ্ট করে তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করান। এর জন্য তাদেরকে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। একটু খোঁজ-খবর নিলে জানা যাবে, অনেক চা-ওয়ালারাই সুশিক্ষিত। হয়তো অনেকে কোনো একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, অনেকে কলেজে পড়ছেন। কিন্তু অর্থের অভাবে তাদের এই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। তাদেরকে পড়াশোনার স্বপ্ন ছেড়ে, বাবার চায়ের দোকানের ব্যবসা সামলাতে হয়।
তবে অনেকে তাদের কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা ভালোভাবে পড়াশোনা করে অনেক ভালো ভালো জায়গায় কাজ করছেন। যেমন – কেউ কেউ অফিসের অনেক ভালো কোনো পদে কাজ করছেন, কেউ কেউ স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা করছেন, অনেকে আবার সফল ব্যবসায়ীও হয়েছেন।
আমাদের সমাজের নিম্নশ্রেণীর পেশার মানুষদেরকে আমরা উপেক্ষা এবং অসম্মান করে থাকি। তারা নানাভাবে আমাদের অবহেলা এবং খারাপ আচরণের স্বীকার হন। তারাও যে মানুষ, তারাও যে চাইলে অনেক কিছুই করতে পারেন এসব আমরা ভেবেই দেখি না। তাদের আমরা সবসময় ছোট করে দেখি। তাদের কাজকে অসম্মান করি।
আমরা যদি তাদের সম্মান করি, তাদের পাশে দাঁড়াই, তাদের কাজকে ছোট করে না দেখি, তাহলে হয়তো আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো তারাও সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারবে।
Outstanding
Thanks for your compliment.
বেশ লাগলো পড়ে।
Thanks ☺️
Good post
Thank You 😊
nc
Thanks 🙂
Good
Thank You
nice
Ok
Amazing
gd