জানেন কি-সার্কাস কিভাবে শুরু হয়েছিল?

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,

আসসালামু আলাইকুম,কেমন আছেন সবাই?আশা করি সবাই ভালই আছেন।আজকে আপনাদেরকে অন্যরকম একটা তথ্য দিব।আমরা কম-বেশি সবাই সার্কাস খেলা টিভিতে বা সরাসরি মেলাতে দেখেছি।কিন্তু জানেন কি সার্কাস খেলা কিভাবে শুরু হয়েছিল?তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক-

সার্কাস শব্দটির বাংলা অর্থ গোলাকৃতি চত্বর।অনেক সময় যে স্থানে চার দিক থেকে চারটি পথ এসে মিলিত হয়েছে তাকেও সার্কাস বলে।যেমন লন্ডনে রয়েছে পিকাডেলি সার্কাস নামে একটি পথচত্বর।সাধারণভাবে সার্কাস বলতে বোঝানো হয় জীবজন্তু ও মানুষের শারীরিক কসরতযুক্ত খেলাকে।

খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে প্রাচীন রোমে প্রথম সার্কাস খেলা শুরু হয়।আজকের দিনের এই সার্কাস থেকে ওই সার্কাস ছিল অনেক আলাদা।অনেক বড় মাঠে তখনকার দিনের সার্কাস খেলা অনুষ্টিত হতো।বিরাট ওই ক্রীড়াভূমিকে বলা হত “দি সার্কাস ম্যাক্সিমাস”।ওই স্থানের বিশেষ বিশেষ আকর্ষণ ছিল রথের দৌড়।রথ চলাকালীন ঘোড় সওয়ার,ব্যায়ামবিদ প্রভৃতি ক্রীড়াবিদ তাদের ক্রীড়াকৌশল দেখিয়ে মানুষকে আনন্দ দান করত।খেলা প্রদর্শনের মাঠটি এত বড় ছিল যে সেখানে প্রায় ২,৫০,০০০ লোক খেলা দেখতে পারত।তখনকার দিনে রোমে মনোরঞ্জনের আরো অনেক উপায় ছিল।ভোজবাজিকর,দড়াবাজিকর,ব্যায়ামবিদ এবং জীব-জন্তুর ক্রীড়া প্রশিক্ষক নানা উপায়ে মানুষের মনোরঞ্জন করত।রোমে ঘোড়ার গাড়ির দৌড়ের সাথে যুক্ত করে মঞ্চে মল্লযুদ্ধ,প্রশিক্ষিত জীবজন্তুর হুকুম তামিল,অ্যাক্রোব্যাট এবং শরীর প্রদর্শনী।তখন সার্কাসের চেহারা এ কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা প্রদর্শনীর ব্যাপকতা নিয়ে আবির্ভূত হয়।আমরা বর্তমানে সার্কাসে যা দেখি তা প্রাচীন ওই সব খেলাধুলারই অংশ।

রোম সাম্রাজ্যের পতনের পর বহু শতাব্দী ধরে সার্কাস দলে ছিল দড়াবাজিকর,ব্যায়ামবিদ,ক্লাউন ইত্যাদি।ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক সার্কাস দল গঠিত হয়।তারপর ধীরে ধীরে সার্কাস ধীরে ধীরে পৃথিবীব্যাপী মানুষের মনোরঞ্জনের অনন্য উৎসে পরিণত হয়।এছাড়াও প্রাচীন গ্রিসে প্রায় ৮০০ বছর আগে সার্কাসের সূচনা হয়। তখন ঘোড়া আর ঘোড়ার সাথে জুড়ে দেয়া দু’চাকার গাড়ির দৌড় প্রদর্শনী ছিল সার্কাসের মূল উপজীব্য।

১৪ শতকের দিকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এবং ১৫ শতকের দিকে ব্রিটেনে সার্কাস কর্মীরা প্রবেশ করেন।তখন তাদের ডাকা হতো জিপসি নামে। যাদের সাথে থাকত প্রশিক্ষিত জীবজন্তু।সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংরেজ ঘোড়সওয়ার ফিলিপ অ্যাসলের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে আধুনিক সার্কাস।তিনি ছিলেন খুব দক্ষ ঘোড়সওয়ার।
লন্ডনের আশপাশে খুব নামডাক ছিল তার।খুব একটা ধনী লোক ছিলেন না।কষ্টে-সৃষ্টেই কাটত তার দিন।তিনি জানতেন শুধু ঘোড়ার পিঠে চড়ে খেলা দেখাতে।অবশেষে ঘোড়ার পিঠে চড়ে খেলা দেখিয়েই উপার্জন করবেন বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন।এ সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে তারই মতো কয়েকজন খেলোয়াড় বন্ধু ভালুক ও বানর নিয়ে এসে দলে ভিড়ে যায়।তারই প্রচেষ্টায় ১৭৬৮ সালের ৯ জানুয়ারি ইংল্যান্ডে প্রথম সার্কাসের প্রদর্শনী হয়।

আমাদের বাংলাদেশে ১৯০৫ সালে ‘দি লায়ন সার্কাস’ নামে প্রথম একটি সার্কাস দল গঠিত হয়। দলটি ১৯৭০ সালে নাম পরিবর্তন করে এবং ‘দি সাধনা লায়ন সার্কাস’ নামে নামকরণ করে।বাংলাদেশের সার্কাস পার্টিগুলোতে সাধারণত জীবজন্তুর খেলা এবং মানুষের চোখ দিয়ে রড বাঁকানো,ভারোত্তোলন,এক চাকা,দু’চাকা,লোহার খাঁচা ও কূপের মধ্যে মোটরসাইকেল চালানোসহ নানা খেলা দেখানো হতো।৯০-এর দশকেও বিশেষ করে শীতকালে সারা দেশে শহর থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জে অন্তত ৫০টি স্থানে সার্কাস প্রদর্শনী চলত।

তবে সার্কাস দলের দুর্দিন শুরু হয় সাত-আট বছর হলো।ফলে সার্কাসের আয়-রোজগার বন্ধ হয়,জীবজন্তুসহ খেলোয়াড়দের খাদ্যাভাব দেখা দিতে থাকে।চর্চার অভাবে শারীরিক কসরত দেখানোর দক্ষতাও হারিয়ে যেতে বসে।কর্মীরা অন্য পেশায় চলে যেতে শুরু করেন।বর্তমানে বাংলাদেশে সার্কাস বিলুপ্তির পথে।সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পুরোনো এই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

 

Related Posts