আপনি কি বলতে পারেন যে, এমন কোন মানুষ কি পৃথিবীতে আছে যে জীবনে সফল হতে চায় না? আমি অন্তত আমার জীবনে একটি লোকও দেখিনি যে সফল হতে চায় না। সবাই সফল হতে চায়। কিন্তু সফল হতে চাইলেই কি সফল হওয়া সম্ভব? যদিও সফলতার সংজ্ঞা স্থান, কাল ও পাএ বিশেষে ভিন্ন থেকে ভিন্নতর হয়ে থাকে। আপনার কাছে যেটি সফলতা তা অন্য এক জনের কাছে সফলতা নাও হতে পারে। যেমন ধরেন কারও কাছে পড়াশুনা শেষে একটি চাকরি পাওয়া একটা সফলতা। আবার কারো কাছে ব্যবসা করে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করাই সফলতা।
সফল হতে হলে এমন কিছু কাজ করতে হবে যে সকল কাজ গুলো করেই অনেকে সফল হয়েছে। তাই বলে আমি গ্যারান্টি দিচ্ছিনা যে এই সকল কাজ গুলো করলেই আপনি সফল হবেন। কিন্তু চেষ্টাতো করে দেখতে পারেন। আল্লাহ চাইলে আপনিও এই সকল কাজ গুলো করে সফল হতে পারেন। থাকতে হবে আল্লাহ এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস এবং কাজের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ। মনে রাখবেন, সারা জীবন টাকার পিছনে দৌড়ালে টাকা আশবেনা। দৌড়াতে হবে কাজের পিছনে যে কাজ আপনাকে টাকা এনে দিবে। চলুন বন্ধুরা আমরা জেনে নি সফল হতে হলে আমাদের কোন কাজ গুলো অবশ্যই মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে।
১. বড় স্বপ্ন দেখুন:
আপনি যখনি স্বপ্ন দেখবেন, চেষ্টা করবেন একটু বড় স্বপ্ন দেখতে। যাতে করে আপনার স্বপ্নটি ১০০% অর্জিত না হলেও কাছাকাছি পৌছতে পারেন। স্বপ্ন আপনি রাতে ঘুমিয়ে অথবা দিনে জেগেও দেখতে পারেন। এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু স্বপ্ন দেখার সময় মনে রাখবেন যে আপনার স্বপ্নটা বাস্তবায়ন করা যাবে কিনা। এমন কোন কাল্পনিক স্বপ্ন দেখবেন না যেটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। মনে রাখবেন ঘোড়া দিয়ে বিশ্ব জয় করা সম্ভব। কিন্তু গাদা দিয়ে নয়। এমন কোন স্বপ্ন দেখবেন না যেমন ধরেন, আপনি মহাকাশ ভ্রমনে যাবেন। অথচ আপনি যেতে চাচ্ছেন পায়ে হেটে অথবা দৌড়িয়ে। তা হলে এমন স্বপ্ন দেখার কোন মানেই হতে পারেনা।
২. আপনার লক্ষ্য ঠিক করুন:
আপনার লক্ষ্যটা অবশ্যই খুবি পরিষ্কার হতে হবে। আপনার জীবনের যদি কোন লক্ষ্যই না থাকে তা হলে আপনি সঠিক ভাবে এগিয়ে যেতে পারবেন না। মনে করেন, আপনার লক্ষ্য এমন হতে পারে যে আপনি আগামী ১০ বছরে ১ কোটি টাকা আয় করবেন।
৩. একটা পরিকল্পনা তৈরি করুন এবং এটা মেনে চলুন:
আপনি যখন ঠিক করলেন যে, আপনি আগামী ১০ বছরে ১ কোটি টাকা আয় করবেন। তখন আপনাকে একটা পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে যে আপনি কিভাবে আগামী ১০ বছরে ১ কোটি টাকা আয় করবেন। এই জন্যে আপনি আপনার পরিকল্পনাটাকে আপনার সুবিধা মতো তৈরি করে নিবেন। যেমন ধরেন, আপনি এভাবে চিন্তা করলেন যে ১০ বছরে ১ কোটি টাকা আয় করতে হলে আপনাকে প্রতি বছর ১০ লক্ষ টাকা আয় করতে হবে অথবা প্রতি মাসে ৮৩,৩৩৪ টাকা আয় করতে হবে অথবা প্রতি দিন ২,৭৭৮ টাকা আয় করতে হবে এই অনুযায়ী কাজ করে যাবেন। দেখবেন কখন যে আপনি আপনার লক্ষ্য অর্জন করে ফেলবেন আপনি নিজেও টের পাবেন না। আর যদি আপনার লক্ষ্য ১০০% অর্জিত নাও হয় এর কাছাকাছি তো যাবে তাই না!
৪. বিবেক খাটিয়ে বুঝে শুনে কাজ করুন:
আপনাকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কিন্তু গাদার মত সারা দিন না বুঝে কাজ করে কোন লাভ নেই। আপনাকে কাজ করতে হবে বুঝে শুনে আপনার বিবেক খাটিয়ে। যেমন ধরেন, আপনি ১ ঘন্টা গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কাজ করলে হয়তো একজন ক্লায়েন্ট আপনাকে $১০ দিবে। কিন্তু অন্য একজন ক্লায়েন্ট আপনাকে ১ ঘন্টা গ্রাফিক্স ডিজাইন এর কাজের জন্য $১৫ দিবে। এবার আপনাকে বুঝে নিতে হবে যে কোন ক্লায়েন্ট এর কাজটি আপনি করবেন।
৫. কাজের অগ্রগতি মূল্যায়ন করুন:
একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর আপনাকে অবশ্যই আপনার কাজের অগ্রগতি মূল্যায়ন করে দেখতে হবে যে, আপনি যে স্বপ্নটা বাস্তবায়ন এর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তা কি সঠিক ভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা। যদি সবকিছু সঠিক ভাবে চলতে থাকে তা হলে সামনের দিকে এগিয়ে যান। আর যদি কোন সমস্যা খুঁজে পান তা হলে আগে সমস্যার সমাধান করুন এবং তার পরে সঠিক ভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যান।
৬. একের অধিক আয়ের উৎস তৈরি করুন:
আপনার লক্ষ্য পূরণের জন্য আপনার আয় বাড়াতে হলে আপনাকে অবশ্যই একের অধিক আয়ের উৎস তৈরি করতে হবে। যেমন ধরেন, আপনি একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। তা হলে আপনি কিভাবে আপনার আয়ের উৎস বাড়াবেন। ১. আপনি অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। ২. বিভিন্ন ডিজাইন কম্পিটিশন সাইট গুলোতে অংশ নিতে পারেন। ৩. গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর ট্রেনিং কোস চালু করতে পারেন। ৪. ইউটিউব চ্যানেল খুলে অথবা ফেসবুকে পেজ খুলে গ্রাফিক্স ডিজাইনের বিভিন্ন টিপস এন্ড ট্রিকস দিয়ে আয় করতে পারেন। ৫. গ্রাফিক্স ডিজাইন টেমপ্লেট বানিয়ে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বিক্রয় করতে পারেন। ৬. গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপরে একটা বই লিখতে পারেন। এই রকম অনেকগুলো আয়ের উৎস তৈরি করতে পারেন।
৭. ঝূকি নেয়ার মানসিকতা তৈরি করুন:
আপনি যদি জীবনে বড় কিছু করতে চান তাহলে আপনার অবশ্যই ঝূকি নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। কারণ, আপনি যদি ঝূকি নিতে না জানেন তা হলে জীবনে বড় কিছু করতে পারবেন না। তাই বলে জীবনে এমন ঝূকি নিবেন না যেটার কারনে আপনাকে একেবারে পথে বসে যেতে হবে।
৮. টাকা জমান ইনভেস্ট করার জন্য:
আমাদের সবচেয়ে বড় বদ অভ্যাস হচ্ছে আমরা টাকা জমাই খরচ করার জন্য। অথচ যারা সফল লোক তারা টাকা জমায় ইনভেস্ট করার জন্য। আপনি যদি বিভিন্ন খাতে আপনার জমানো টাকা ইনভেস্ট না করেন তা হলে আপনার আয় কখনো বাড়বে না। ইনভেস্ট করার আগে অবশ্যই চিন্তা করবেন, আপনি যে খাতে ইনভেস্ট করছেন ওই খাত নিরাপদ কিনা। এটা হতে পারে ছোট ব্যবসা, শেয়ার মার্কেট, রিয়েল এস্টেট, গোল্ড, ডায়মন্ড যে কোন কিছু।
৯. অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ফেলুন:
আপনার মৌলিক চাহিদা ছাড়া এমন কোন বিলাসী পণ্য ক্রয় করার জন্য অহেতুক খরচ করবেন না। যেমন ধরেন, আপনার একটি ভালো মোবাইল অথবা ল্যাপটপ আছে যেটি দিয়ে আপনার কাজ হচ্ছে। তা হলে শুধুমাএ ফুটানি দেখানোর জন্য কেন আপনাকে আইফোন অথবা মেক কিনতে হবে!
১০. নিজের উপর ইনভেস্ট করুন:
শেখার কোন বয়স নেই। যখন যেখানে যাই পাবেন শেখার চেষ্টা করবেন। দেখবেন কোন না কোন দিন ঐ শিক্ষাটি আপনি কাজে লাগাতে পারবেন। শেখার জন্য আপনি আপনার নিজের উপর ইনভেস্ট করুন। বেশি বেশি বই পড়ুন, জ্ঞানী লোকদের কথা গুলো মানার চেষ্টা করুন, প্রয়োজন হলে বিভিন্ন সেমিনার অথবা ট্রেনিং কোর্সে ভর্তি হোন। আপনার নিজের উপর ইনভেস্টই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ইনভেস্ট যেটার ফল আপনি খুব তাড়াতাড়ি উপভোগ করতে পারবেন।
১১. আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না:
আমরা আমাদের জীবনের বেশির ভাগ সময় অন্যের পরনিন্দা করে অথবা সোশ্যাল মিডিয়াতে না বুঝে সময় নষ্ট করি। আপনার সময়ের মূল্য আপনাকে বুঝতে হবে। কারণ যে সময় একবার চলে যাবে তা আর ফিরে আশবেনা। অন্যের অসম্মান ও বদনাম করে আপনার মূল্যবান সময় কেন নষ্ট করবেন! আপনার মূল্যবান সময়ের গুরুত্ব আপনাকেই বুঝতে হবে।
১২. হাল ছাড়া যাবেনা:
জীবনে ব্যর্থতা আশবেই। তাই বলে হাল ছাড়া যাবেনা। জীবনে ব্যর্থ না হলে আপনি সফলতার মজা উপভোগ করতে পারবেন না। পৃথিবীতে এমন কোন সফল লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না যে তার জীবনে ব্যর্থতার সাধ গ্রহন করেনি। সূতরাং, সফল হওয়ার আগ পর্যন্ত হাল ছাড়া যাবে না।
১৩. নেতিবাচক মেন্টালিটির লোকদের পরিহার করুন:
ছোট কাল থেকে একটা কথা আমরা সবাই আমাদের ফ্যামেলি মেম্বার, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় সজন অথবা আশপাশের মানুষদের কাছ থেকে শুনে আশছি যে তোকে দিয়ে কিছু হবে না! আশলে কি ঠিক তাই? তার পরেও তো অনেকে সফল হচ্ছে তাই না! এই ধরনের নেতিবাচক মেন্টালিটির লোকদের যতদূর সম্ভব পরিহার করার চেষ্টা করুন।
১৪. সামাজিক হোন:
আপনাকে অবশ্যই সামাজিক হতে হবে। সমাজের অন্যান্য মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে এবং তাদের সুখে দুঃখে তাদের পাশে দাড়াতে হবে। এতে করে দেখবেন একদিন আপনার বিপদের দিনে আপনার পাশে তাদের পাবেন।
১৫. আপনার একটা কমিউনিটি তৈরি করুন:
আপনি আপনার একটি ফ্যান বেস বা কমিউনিটি তৈরি করবেন যাদের সাথে আপনি আপনার সুখ, দুঃখ অথবা আপনার চিন্তা ভাবনা শেয়ার করতে পারবেন। এতে করে আপনি এবং আপনার কমিউনিটি মেম্বাররাও উপকৃত হবে। কখনো আপনার কমিউনিটি মেম্বারদের ঠকিয়ে নিজে বড় হওয়ার চিন্তা করবেন না। তাদেরকে নিয়েই এক সাথে সবাই বড় হওয়ার চেষ্টা করবেন। যেটি আপনি এখনকার সময় সোশ্যাল মিডিয়া এর মাধ্যমে খুব সহজে তৈরি করতে পারেন।
আমার কথা গুলো শুনে আপনাদের অনেকের হয়তো ভালো নাও লাগতে পারে। তার পরেও বলবো এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। দিন শেষে শেষ হাসিটা হতেও পারে আপনার। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।