টনসিল হল আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি অংশ। এটি শূন্য থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। টনসিল এক ধরনের লসিকা গ্রন্থি যা আমাদের গলার পিছনের দিকের অংশে থাকে। টনসিল আমাদের দেহে শ্বেত রক্তকনিকা উৎপন্ন করে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ করার কাজ করে। কিন্তু কখনো কখনো এসব জীবাণু ধ্বংস করতে গিয়ে টনসিল নিজেই আক্রান্ত হয়ে পরে। ফলে ইনফেকশন হয় এবং এই গ্রন্থি ফুলে যায়। একে মেডিকেল এর ভাষায় টন্সিলাইটিস বলা হয়। টনসিল বলতে আমরা যা বুঝি তা আসলে টন্সিলাইটিস । এটা যে শুধু শিশুদের হয় তা নয়। শিশুদের বেশি হলেও এটা যেকোনো বয়সেই হতে পারে।
কিছু লক্ষণ দেখে আমরা টনসিল বুজতে পারি। সেগুল হল তীব্র গলাবেথা, মাথাব্যাথা, উচ্চ তাপমাত্রা, খাবার খেতে কষ্ট ও মুখ হা করতে কষ্ট, কানে ব্যাথা হতে পারে , মুখ দিয়া লালা বের হতে পারে। মুখ থেকে গন্ধ আস্তে পারে , গলা ফুলে যেতে পারে।
পুষ্টির অভাব, আইসক্রিম, ফ্রিজে রাখা শীতল পানি বেশি পান করলে তা টনসিল এর জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে। স্যাঁতসেঁতে স্থানে বাস করলে, রোদ থেকে এসে ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি পান করলে, গরমে ঘাম বসে গেলে টনসিলের প্রদাহ বেরে যেতে পারে।
টন্সিলাইটিস হলে বেশি পানি পান করতে হবে। পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। পূর্ণ বিশ্রাম এ থাকতে হবে যতদিন না সুস্থ হও। ওরাল হাইজিন ঠিক রাখতে হবে। মাউথ ওয়াশ দিয়ে বারবার কুলি করতে হবে। লবন মিশ্রিত পানি দিয়ে বারবার কুলি করতে হবে। লেবু বা আদা চাও খেতে পার। গলায় ঠাণ্ডা লাগান যাবে না। ব্যাকটেরিয়া জনিত ইনফেকশন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। ওষুধ নিয়মিত খেলে ব্যাকটেরিয়া সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং রোগী সুস্থ হয়ে যায়।
দীর্ঘমেয়াদি টনসিলের চিকিৎসা সাধারনত অশ্রপাচার। যদি বারবার টনসিল হয় বা এর জন্য অন্য কোন জটিলতার সৃষ্টি হয় তবে টনসিল অশ্রপাচার করে ফেলে দেয়াই ভাল। যেসব কারনে অশ্রপাচার করা দরকার ; টনসিল বড় হয়ে শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে গেলে, টনসিলে ফোড়া হলে অর্থাৎ ইনফেকশন হলে।
কখন অশ্রপাচার করা যাবে না; অ্যাক্টিভ ইনফেকশন থাকলে টনসিলে অশ্রপাচার করা যাবে না। জর বা ব্যাথা থাকা অবস্তায় করা যাবে না। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ থাকলে করা যাবে না। ডায়াবেটিস থাকলে করা যাবে না। আগে ডায়াবেটিস নিয়ত্রনে আনতে হবে।
টনসিল অপারেশন নিয়ে আমাদের সমাজে একটা ভুল ধারনা আছে। সেটা হল টনসিল ফেলে দিলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এটা ঠিক নয়। কারন টনসিল হল প্রথম পাহারাদার। এর পরেও আরও ৩০০ এর বেশি লালাগ্রন্থি আছে যেগুলো রোগ প্রতিরোধ করে । অনেক সমীক্ষায় দেখা গেছে টনসিল এ অশ্রপাচার করার আগে বা পরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কোন তারতম্য হয় নাই।
অনেক সময় গলার বাইরের দিকে দুই পাশে বরই বিচির মত দুটি দানা ফুলে উঠতে দেখা যায় , অনেকে এগুলকে টনসিল মনে করলেও এগুল আসলে টনসিল নয়। রোগী মুখ হা করলে ভেতরের দিকে যে দুটি বড় দানার মত দেখা যায় , তাই হল টন্সিলাইটিসে আক্রান্ত টনসিল।