সুপ্রিয় পাঠকগণ। আপনারা সবাই কেমন আছেন। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং এই করোনা মহামারীতে সবাই বাড়িতে অবস্থান করুন। আজ আমি আপনাদের মাঝে দাখিল সপ্তম শ্রেণীর ষষ্ঠ অধ্যায়ের আকাইদ ফিকাহ অ্যাসাইনমেন্ট প্রশ্নের উত্তর শেয়ার করবো । আপনাদের যাদের প্রয়োজন তারা এখান থেকে দেখে নিন।
তৃতীয় অধ্যায় :
দোয়া ও মোনাজাত:
প্রশ্ন
ফয়সাল তার বন্ধুকে বলল আমরা আল্লাহর বান্দা । তিনি আমাদের সবকিছু দেখেন ও বোঝেন তার নিকট দু’আ করা প্রয়োজন কি। ফয়সালের এই উক্তিটি তোমার পাঠ্য বইয়ের আলোকে বর্ননা করো।
উওর:
ফয়সালের এই উক্তিটি আমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে যথার্থ নয়।
দুআ এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হয়। এর গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি আল্লাহকে ডাকেন আল্লাহ তার ডাকে সারা দেন।
উদ্দীপকে ফয়সাল তার বন্ধুকে বলল আমরা আল্লার বান্দা আল্লাহ আমাদের সবকিছু দেখেন ও বোঝেন।
ফয়সালের এই উক্তিটি কোরআনের আলোকে যুক্তিগত নয়। ফয়সাল কোরআন সুন্নাহর অনুসরণ না করে দোয়া পরিত্যাগ করেছে এবং অন্যকে নিরুৎসাহিত করে মুর্খ্যতার ধুমজালে আবদ্ধ করেছে।
অথচ কুরআন এর পক্ষে মহান আল্লাহ তার কাছে বান্দাকে দোয়া করতে বলেছেন। যেমন মহান আল্লাহর বাণী তোমরা আমাকে ডাকো আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।
নিচে পাঠ্য বইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ করা হলো-
দোয়া ইবাদতের সার নির্যাস: দোয়া হলো বান্দার ইবাদতের চূড়ান্ত পর্যায়। দোয়ার মাধ্যমে ইবাদত পরিপূর্ণ হয়। যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া ইসলাম এর মগজস্বরূপ।
দোয়া স্বয়ং ইবাদত: দোয়া স্বয়ং ইবাদত। কোরআন ও হাদিসে এটি প্রমাণিত। রাসুল সা এর দোয়া । রাসুল সা ছোট বড় সকল ব্যাপারে আল্লাহর নিকট দোয়া করতেন। তিনি বলেছেন যার জন্য দোয়ার দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে তার জন্য রহমতের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে।
রাসুল সা দোয়া শিক্ষা দিতেন: হযরত আবু মালেক আশজাঈ রা বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়ম ছিল যে কেউ ইসলাম কবুল করলে তাকে সর্বপ্রথম নামাজ শেখাতেন। এরপর নিচের বাক্যে দোয়া করার নির্দেশ দিতেন অর্থাৎ হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দাও , আমাকে হেদায়েত দাও , আমাকে সুস্থতা দাও এবং আমাকে রিজিক দান করো।
বিগলিত অন্তরে দোয়া করা: দোয়া করতে হবে বিগলিত অন্তরে । মন গলিয়ে বিনয়ের সাথে দোয়া না করলে দোয়া কবুল হয় না। যেমন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন অর্থাৎ উদাশীন ও অমনোযোগী ব্যাক্তির দোয়া আল্লাহ কবুল করে না।
আদবের সাথে দোয়া করা: উত্তম পোশাক হালাল রুজি খেয়ে নিয়ত খালেস করে সালাতে বসার শুরুতে ও কিবলামুখী হয়ে দোয়া করতে হবে। দোয়ার শুরুতে হামদ ও সালাত এবং শেষে দরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে। দোয়া কবুলের সমস্ত দোয়া করতে হবে। যেমন শবে কদর শবে বরাত, আরাফার দিন, মাহে রমজানের দিন ও রাত , আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় এবং প্রত্যেক ফরজ সালাত এর পর।
দোয়া দ্বারা ভাগ্য পরিবর্তন হয় : দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তার বান্দার কর্ম ও অবস্থার পরিবর্তন করে থাকেন। যেমন বলা হয়েছে দোয়া ছাড়া ভাগ্য পরিবর্তন হয় না।
দোয়া মুমিনের অস্ত্র : দোয়া হলো মুমিনের অস্ত্র। কেননা দেওয়ার মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি তার সকল সমস্যার সমাধান করে। এর মাধ্যমে বান্দার ভাগ্য পরিবর্তন ও গুনাহ মাফ করতে সক্ষম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন দোয়া হলো মুমিনের অস্ত্র।
খাটি ইবাদতের মাধ্যমে দোয়া: আল্লাহ হলেন চিরস্থায়ী চিরঞ্জিব । তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা তাকে ডাকো খাঁটি ইবাদতের মাধ্যমে। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব।
পরিশেষে বলা যায়, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন হয় এবং ইবাদত কবুল হয়। অধিক পরিমাণ মাসনুন দোয়া পাঠ করা উচিত। ফয়সালের বন্ধুকে দেওয়া বক্তব্য পাঠ্যপুস্তক এর আলোকে যথার্থ নয় পক্ষান্তরে ফয়সালের সিদ্ধান্ত এর বিপরীত তথা কোরআন সুন্নাহর পরিপন্থী নয়।