আজকের পোস্টে আমরা নাকের মাংস বাড়া নিয়ে কথা বলব। নাকের মাংস বৃদ্ধি বা পলিপ কি, নাকের মাংস বৃদ্ধির ছবি, নাকের মাংস বাড়ে কেন, নাকের মাংস বাড়লে কি কি সমস্যা হতে পারে, নাকের মাংস কমানোর ঘরোয়া উপায়, এর চিকিৎসা করে কিভাবে, নাকের মাংস বৃদ্ধি অপারেশন খরচ কত হতে পারে ইত্যাদি সকল বিষয় নিয়ে আজকের পোস্টে আলোচনা করা হবে। তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।
নাকের মাংস বৃদ্ধি কি?
অনেকক্ষেত্রেই আমরা নাকের মাংস বৃদ্ধি বা নাকের পলিপ কথাটি শুনি। কিন্তু এই পলিপ জিনিসটা আসলে কি? মেডিকেল ভাষায় যাকে পলিপ বলে ও সাধারণ ভাষায় যাকে পলিপ বলে তা আলাদা।
মেডিকেল ভাষায় পলিপের অনেক বড় সংগা। তো তাতে না গিয়ে সাধারণ মানুষের ভাষায় নাকের পলিপ কি তা নিয়ে কথা বলি। সহজ ভাষায় নাকের পলিপ হচ্ছে নাকের অস্বাভাবিকভাবে মাংস বৃদ্ধি। নাকের মধ্যে মাংস ফুলে যাওয়া।
একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘হাইপারট্রপিড ইনফেরিয়র টারবিনেট’।
আমাদের নাকের দেয়ালে দুই পাশে দুটি মাংসপিণ্ড থাকে একে ইনফেরিয়র টারবিনেট বলে।
এই ইনফেরিয়র টারবিনেটের প্রদাহের ফলে এর আকার বেড়ে যায়। এটির উৎপত্তিস্থল নাকের ভেতরই। নিচে আমি বোঝার সুবিধার্থে নাকের মাংস বৃদ্ধির ছবি কয়েকটি দিচ্ছি।
নাকের মাংস বৃদ্ধির ছবি
নাকের মাংস বৃদ্ধি বা নাকের পলিপ কেন হয়?
আসলে এখন পর্যন্ত কোনো নিশ্চিত কারণ পাওয়া যায়নি। নাকের মাংস বৃদ্ধির বা পলিপের কারণ নিয়ে গবেষণা চলছে। কিন্তু নাকের মাংস বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে এলার্জি।
অনেক বিশেষজ্ঞের মতেই নাকের মাংস বৃদ্ধি হয় এলার্জির কারণে।
এখন এই এলার্জির কারণ কি? এই এলার্জি হওয়ার অনেক কারণ হতে পারে।
অনেকের মতে ধুলাবালি ও ধোঁয়ার কারণে এই এলার্জি হতে পারে।
আবার ফানগাল ইনফেকশন থেকেও মাংস বৃদ্ধি হতে পারে। অনেকে আবার মনে করেন যে নাকের ভিতর রক্তনালির সমস্যা বা অস্থিরতার কারণে নাকের পলিপ হতে পারে। ক্রনিক ইনফেকশনের কারণে এই মাংস বৃদ্ধি হয় বলেও অনেকে মনে করেন। এর কোনো ঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।
নাকের মাংস বাড়লে কিভাবে কমাবেন?
নাকের ভিতর মাংস বাড়লে আপনি বেশ কিছু ঘরোয়া চিকিৎসা করতে পারেন। ঘরোয়া চিকিৎসা নিয়ে পরে আলোচনা করা হবে। একদম প্রাথমিক পর্যায়ে যদি আপনার নাকের মাংস বৃদ্ধি বোঝা যায়৷ তাহলে প্রথমত আপনি সাবধানতা অবলম্বন করবেন। ধুলাবালি, ধোঁয়া ইত্যাদি থেকে সাবধানে থাকা।
বাইরে বা যে স্থানে অধিক ধুলা তেমন জায়গায় মাস্ক ব্যবহার করা। ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলা।
একদম প্রথম পর্যায়ে আপনি বিভিন্ন স্টেরয়েড জাতীয় স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়াও নানা ধরণের হোমিওপ্যাথিক পদ্ধতি যেমন ওষুধের মাধ্যমে মাংস কমানো সম্ভব।
এছাড়াও বেশ কিছু আলোপ্যাথিক ওষুধও আছে যা নাকের ভিতর মাংস কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।
যেমন:
টারফেনাডিন, ডাইনাফিন, নোসিজন ইত্যাদি। মনে রাখবেন ভুলেও কখনো নিজে নিজে ওষুধ কিনবেন।
অবশ্যই ওষুধ কেনার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং ডাক্তার যে যে ওষুধ বলে সে ওষুধ গ্রহণ করুন।
আর নাকের ভিতর মাংস কমানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে অপারেশন করে তা বাদ দিয়ে দেওয়া।
মূলত যখন আর কোনো উপায়ই থাকে না বা রোগীর নাক যখন মাংস বৃদ্ধির জন্য অনেকটাই বন্ধ হয়ে যায়।
তখন ডাক্তার এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। অপারেশন নানা ধরণের হয়ে থাকে। ঠিক কিভাবে অপারেশন করা হবে তা আপনার ডাক্তার ঠিক করবে। একদম বেসিক লেভেলে আপনাকে অবশ করে আপনার নাকের ভিতরের পলিপগুলো বের করা হবে। এছাড়া সম্পূর্ণভাবে বেহুশ করে নাকের ভিতরের পলিপ আরও ভালোভাবে বের করা সম্ভব।
কিন্তু এতে পরবর্তীতে আবার পলিপ সৃষ্টি হওয়ার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। পলিপগুলো মূলত নাকের সাইনাসের ঝিল্লি থেকে উৎপন্ন হয়। কিন্তু উপরোক্ত অপারেশনের মাধ্যমে ওই ঝিল্লি সম্পূর্ণভাবে দূর করা যায় না।
তাই আপনি যদি নাকের পলিপ থেকে চিরস্থায়ী পরিত্রাণ চান তাহলে আপনাকে এন্ডোস্কোপ ব্যবহার করে অপারেশন করাতে হবে। এটি নাকের পলিপ দূরের জন্য সবচেয়ে ভালো ও সর্বাধুনিক চিকিৎসা।
এতে আপনার নাকে পলিপ তো ধ্বংস করবেই এর পাশাপাশি সাইনাসের যে ঝিল্লি দ্বারা পলিপগুলো সৃষ্টি হচ্ছে সেই ঝিল্লিও দূর করে দিবে। ফলে আপনার নতুন করে পলিপ হওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে।
কিন্তু আপনি যদি পূর্বের বা পুরাতন পদ্ধতিতে নাকের মাংস কমাতেন তাহলে কিন্তু কয়দিন পর সাইনাসের ঝিল্লি থেকে আবার পলিপ সৃষ্টি হবে। এবং এন্ডোস্কোপেত মাধ্যমে অপারেশন না করলে পলিপ চলতেই থাকবে।
নাকের মাংস বাড়লে অপারেশন খরচ কত?
নাকের মাংস বৃদ্ধি বা পলিপ অপারেশনের কোনো ফিক্সড খরচ নাই।
খরচ মূলত নির্ভর করে আপনি কোনখানে অপারেশন করাবেন তার উপর।
মোটা নাক চিকন করার প্রাকৃতিক উপায়
আপনি কোন ডাক্তারের কাছে অপারেশন করছেন, কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে অপারেশন করবেন তার উপর খরচ নির্ভর করে।
যত স্বনামধন্য ও ভালো জায়গায় বা ডাক্তারের কাছে অপারেশন করবেন খরচ তত বেশি হবে।
সাধারণত সরকারি হাসপাতালে খরচ কম পড়বে। কিন্তু বড় বেসরকারি ক্লিনিক বা বেসরকারি হাসপাতালে খরচ বেশি লাগতে পারে।
অপারেশন করার আগে অবশ্যই ডাক্তার আগে আপনার চেকআপ করবে যে আপনার অবস্থা কেমন, ডায়বেটিস প্রেসার কেমন তখন আপনি চাইলে ডাক্তারের সাথে খরচ নিয়ে আলোচনা করে নিতে পারেন।
অবশ্যই অপারেশনের পূর্বে খরচ নিয়ে কথা বলে নিবেন।
নাকের পলিপ অপারেশনে গড়ে খরচ দশ হাজার টাকা থেকে পঁচিশ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
অবশ্যই অপারেশনের স্থান ও সময় ভেদে এই খরচ কমবেশি হতে পারে।
নাকের মাংসের সমস্যা হলে কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত?
নাকে যদি কোনো সমস্যা বোধ বা নাকের মাংস বৃদ্ধি সমস্যা হয় (উপরে কয়েকটি নাকের মাংস বৃদ্ধির ছবি দেওয়া আছে) তাহলে অবশ্যই হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। আপনি একজন নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। নাক খুবই সেনসেটিভ একটি বিষয় তাইল যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার চেষ্টা করুন। আর এক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। হোমিওপ্যাথিক উপায়ে পলিপ দূর করতে চাইলে অবশ্যই নিজ দায়িত্বে করুন।
নাকের মাংস বৃদ্ধি পেলে কমানোর ঘরোয়া উপায়
নাকের মাংস বৃদ্ধি পেলে কমানোর জন্য আপনি বেশ কিছু ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
কিন্তু আগেও বলেছি এবং আবারও বলছি নাক আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আর এই অঙ্গ নিয়ের অসুবিধা বা সমস্যা নিয়ে হেলা করা পুরোই বোকামি।
তাই নাকে সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
নাকের মাংস বৃদ্ধি পেলে কমানোর কিছু ঘরোয়া উপায় (উপরে কয়েকটি নাকের মাংস বৃদ্ধির ছবি দেওয়া আছে
নাকের মাংস বৃদ্ধি বা পলিপ শুরু হওয়ার একদম প্রাথমিম পর্যায়ে এসকল ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করবেন।
আদা: আদা একটি খুবই উপকারি মসলা/খাদ্য। এর রয়েছে নানা উপকারিতা।
আদার মধ্যে থাকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল নামক একটি বিশেষ উপকারী উপাদান।
নিয়মিত আদা খেলে তা আমাদের নাকের পলিপ থেকে রক্ষা করতে পারে। আপনি আদা চাইলে খাবারে মসলা দিতে পারেন।
খালি আদা একটু চিবিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও চা তে আদা দিয়েও পান করতে পান।
রসুন: রসুন শরীরের জন্য আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারি উপাদান।
মনে করা হয়ে রসুন আমাদের শরীরে এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।
আমরা জানি পলিপ মূলত সাইনাসের দীর্ঘসময় ধরে প্রদাহের ফলে সৃষ্টি হয়।
কিন্তু রসুন আমাদের এরকম প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। আর প্রদাহই যদি না হয় তবে পলিপও হবে না। এভাবে রসুন পলিপ দূর করতে সহায়তা করে। আপনি চাইলে কাঁচা রসুন খেতে পারেন।
কিংবা মাংস বা শাকসবজি রান্নায় রসুন বাটা বা কেটে ব্যবহার করতে পারেন।
হলুদ: নাকের পলিপ দূর করতে আপনি হলুদ ব্যবহার করতে পারেন।
কাঁচা হলুদে থাকে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি নামক একটি উপাদান। হলুদ আমাদেরকে এলার্জি থেকে মুক্তি দেয়।
আর আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে নাকের পলিপ সৃষ্টিতে এলার্জির ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। তাই হলুদ ব্যবহার করে নাকের পলিপ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
প্রতিদিনের খাদ্যে আমরা এমনিই হলুদ ব্যবহার করি।
নাকের মাংস বাড়া বা পলিপ হলে কি কি সমস্যা হয়? (উপরে কয়েকটি নাকের মাংস বৃদ্ধির ছবি দেওয়া আছে)
নাকের মাংস বাড়া বা পলিপ হলে আপনাকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। নাকের পলিপ এর কারণে আপনি নিম্নোক্ত সমম্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
১. নাক আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া।
২. নাকের সাহায্যের শ্বাস নিতে না পারা এবং মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া।
৩. নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়তে থাকা।
৪. নাকের মধ্যে চুলকানি হওয়া।
৫. নাক ও মাথায় ব্যথা করা।
৬. বেশি হাঁচি পাওয়া।
৭. নাক দিয়ে গন্ধ না পাওয়া।
৮. গলায় প্রায়ই খুসখুস ভাব থাকা।
৯. কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাথা ঘুরাতে পারে।
১০. খাবারের রুচি হারিয়ে ফেলা।
মাঝে মাঝে যা দেখে আমরা নাকের মাংস বৃদ্ধি হিসেবে ধারণা করি তা অনেকক্ষেত্রে আদৌ পলিপই না। এটি নাকের মধ্যে একটি বিশেষ কোনো ইনফেকশনের ইঙ্গিত হতে পারে। এটি একটি টিউমার হরে পারে। এমনকি এটি ক্যান্সারের পূর্ব লক্ষণও হতে পারে। যা ধীরে ধীরে মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। তাই অবশ্যই পলিপ নিয়ে অবহেল করবেন না এবং অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন।
তো এই ছিল নাকের মাংস বৃদ্ধির ছবি, নাকের মাংস বৃদ্ধি অপারেশন খরচ, নাকের মাংস কমানোর ঘরোয়া উপায় নিয়ে আজকের পোস্ট । এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
ধন্যবাদ।
amazing post
খুবই ভালো একটি আর্টিেকেল
Needed
good
খুব উপকারী একটা পোস্ট
তথ্যগুলোর জন্য ধন্যবাদ
অ
ধন্যবাদ
thanks
ধন্যবাদ