বাচ্চাদের নজর লাগলে কি করতে হয় | কি দোয়া পড়তে হয় ?

আজকের পোস্টে আমরা বাচ্চাদের নজর লাগলে কি করতে হয় | কি দোয়া পড়তে হয় তা নিয়ে বলতে যাচ্ছি। এ পোস্টে আমরা বাচ্চাদের নজর লাগলে কি দোয়া পড়তে হয় মানে বাচ্চাদের নজর দোষ নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। তো শুরু করা যাক।

বাচ্চাদের নজর লাগলে কি করতে হয়

বাচ্চাদের নজর লাগলে কি করতে হয়

বাচ্চাদের নজর লাগলে কি করবেন? ছোট বাচ্চারা নিষ্পাপ হয়। দেখলেই মায়া লাগে। আদর করতে ইচ্ছে করে। পাড়া- প্রতিবেশি, আত্মীয়- স্বজনেরা বাচ্চার জন্য অনেক উপহার নিয়ে আসে। এখন নজর লাগতে পারে বলে তো আপনি বাচ্চাকে আড়াল করে রাখতে পারবেন না। আবার অনেকে আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বাচ্চার ছবি পোস্ট করে। ওয়েলকাম পার্টি করে। কেক কাটে।

সবই তো হলো। কিন্তু বাচ্চাকে বদনজর থেকে বাঁচাবেন কি করে? অনেকে বাচ্চার কপালে কালো ফোঁটা দেয়। পানিপড়া খাওয়ায়। তাবিজ পরায়। মরিচ, লেবু ঝুলিয়ে রাখে।

আগে জানতে হবে কিভাবে বুঝবেন আপনার বাচ্চার নজর লেগেছে কিনা। দেখবেন বাচ্চা কিছুটা খিটখিটে হয়ে গেছে। প্রায়ই অসুস্থ থাকে। কিছু খেতে পারছে না। ওষুধেও কাজ হচ্ছে না। বাচ্চা আরও দূর্বল হয়ে পড়ছে। অযথা কান্না করে। মানুষ দেখলেই কাঁদে। রাতে হঠাৎ ভয় পেয়ে চিৎকার শুরু করে। তখনই বুঝবেন হয়তো আপনার বাচ্চার নজর লেগেছে।

বাচ্চাদের নজর লাগলে কি দোয়া পড়তে হয়

বাচ্চাদের নজর লাগলে কি দোয়া পড়তে হয়

সুরা ফাতেহা পড়া;> আয়াতু কুরসি পড়া;> সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া;> সুরা ইখলাস পড়া;> সুরা ফালাক পড়া;> সুরা নাস পড়া।অতঃপর কুরআনের এ আয়াতগুলো পড়া১. فَإِنْ آمَنُواْ بِمِثْلِ مَا آمَنتُم بِهِ فَقَدِ اهْتَدَواْ وَّإِن تَوَلَّوْاْ فَإِنَّمَا هُمْ فِي شِقَاقٍ فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللّهُ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُঅতএব তারা যদি ঈমান আনে, তোমাদের ঈমান আনার মত, তবে তারা সুপথ পাবে। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তারাই হঠকারিতায় রয়েছে। সুতরাং এখন তাদের জন্যে আপনার পক্ষ থেকে আল্লাহই যথেষ্ট। তিনিই শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।’ (সুরা বাকারাহ : আয়াত ১৩৭)

হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায়, স্ট্যাটাস, উক্তি

২.. وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاء وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ وَلاَ يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إَلاَّ خَسَارًا‘আমি কোরআনে এমন বিষয় নাযিল করি যা রোগের সুচিকিৎসা এবং মুমিনের জন্য রহমত। গোনাহগারদের তো এতে শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি পায়।’ (সুরা বনি-ইসরাইল : আয়াত ৮২)
৩.
وَإِن يَكَادُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَيُزْلِقُونَكَ بِأَبْصَارِهِمْ لَمَّا سَ وَيَقُولُونَ إِنَّهُ لَمَجْنُونٌকাফেররা যখন কোরআন শুনে, তখন তারা তাদের দৃষ্টি দ্বারা যেন আপনাকে আছাড় দিয়ে ফেলে দিবে এবং তারা বলেঃ সে তো একজন পাগল।’ (সুরা
ক্বলাম : আয়াত ৫১)
৪. أَمْ يَحْسُدُونَ النَّاسَ عَلَى مَا آتَاهُمُ اللّهُ مِن فَضْلِهِ فَقَدْ آتَيْنَا آلَ إِبْرَاهِيمَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَآتَيْنَاهُم مُّلْكًا عَظِيمًا‘নাকি যাকিছু আল্লাহ তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে দান করেছেন সে বিষয়ের জন্য মানুষকে হিংসা করে। অবশ্যই আমি ইব্রাহীমের বংশধরদেরকে কিতাব ও হেকমত দান করেছিলাম আর তাদেরকে দান করেছিলাম বিশাল রাজ্য।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৫৪)

৫. وَلَوْ جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا أَعْجَمِيًّا لَّقَالُوا لَوْلَا فُصِّلَتْ آيَاتُهُ أَأَعْجَمِيٌّ وَعَرَبِيٌّ قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ آمَنُوا هُدًى وَشِفَاء وَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ فِي آذَانِهِمْ وَقْرٌ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًى أُوْلَئِكَ يُنَادَوْنَ مِن مَّكَانٍ بَعِيدٍ‘আমি যদি একে অনারব ভাষায় কোরআন করতাম, তবে অবশ্যই তারা বলত, এর আয়াতসমূহ পরিস্কার ভাষায় বিবৃত হয়নি কেন? কি আশ্চর্য যে, কিতাব অনারব ভাষায় আর রসূল আরবী ভাষী! বলুন, এটা বিশ্বাসীদের জন্য হেদায়েত ও রোগের প্রতিকার। যারা মুমিন নয়, তাদের কানে আছে ছিপি, আর কোরআন তাদের জন্যে অন্ধত্ব। তাদেরকে যেন দূরবর্তী স্থান থেকে আহবান করা হয়।‘ (সুরা হামিম সাজদাহ : আয়াত ৪৪)

এছাড়া হাদিস থেকেও নিম্নোক্ত অংশ পাঠ করতে পারেন কুনজর থেকে বাঁচার জন্য।

-১. بِسْمِ الله أرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِد، اللهُ يَشْفِيك، بِسمِ اللهِ أُرقِيكউচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আরক্বিকা মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ুজিকা মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসাদিন, আল্লাহু ইয়াশফিকা, বিসমিল্লাহি আরক্বিকা।’ (মুসলিম)

২. بِاسْمِ اللهِ يُبْرِيكَ، وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ، وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍউচ্চারণ : বিসমিল্লাহি ইয়ুবরিকা ওয়া মিন কুল্লি তায়িন ইয়াশফিকা ওয়া মিন শাররি হাসাদিন ইজা হাসাদা ওয়া শাররি কুল্লি জি আইনিন।’ (মুসলিম)

৩. أَمْسَحِ البَأْسَ رَبَّ النَّاسِ بِيَدِكَ الشِّفَاَءُ لَا كَاشِفَ لَهُ اِلَّا اَنْتَউচ্চারণ : ‘আমসাহিল বাসা রাব্বান্নাসি বিইয়াদিকাশ শিফাউ লা কাশিফা লাহু ইল্লা আংতা।’

৪. أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانِ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍউচ্চারণ : ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়ত্বানি ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাতিন।’

আর কি পড়বেন?

রাতে ঘুমানোর আগে সুরা ফাতিহা আর আয়তুল কুরসি পড়ে ঘুমাবেন। এতে কি হয়? ফেরেশতা এসে আপনাকে সারারাত পাহারা দিবে। কুনজর আপনার আবাসস্থলের আশেপাশে আসতে পারবে না। এছাড়া দুরুদ শরীফ পড়ে আপনার বাচ্চার গায়ে ফু দিয়ে দিবেন। ফজরের সময় সূরা ইখলাস আর দুরুদ শরীফ পড়ে আপনার সন্তানের গায়ে ফুঁ দিবেন। তজবি গোনার অভ্যাস থাকলে ভালো। এশার নামাযের পর বা সকালে ফযরের পর ছোট বাচ্চার মাথার সামনে বসে তসবি পড়তে পারেন অথবা কালিমা পড়ে ফুঁ দিন। এতে খারাপ আছর থেকে আপনার নিষ্পাপ সন্তান নিরাপদ থাকবে।

বাচ্চাকে সবসময় পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখবেন। নিজেরাও পাক- পবিত্র থাকবেন। মাগরিবের আযানের সময় অর্থাৎ তিনে সন্ধ্যার সময় বাচ্চাকে চেষ্টা করবেন ঘরে রাখতে। কারণ এই সময় খারাপ শক্তির উৎপাত বেড়ে যায় প্রকৃতিতে। আর রাতের আঁধার খারাপ শক্তির জন্য উত্তম সময়। তাই নিজের বাচ্চাকে নিরাপদে রাখুন। এই সময় বাচ্চার সামনে দোয়া পাঠ করতে পারেন অথবা সুরা পড়ুন। সবসময় আল্লাহর জিকির করবেন। আর কেউ বাচ্চার প্রশংসা করলে অবশ্যই মাশআল্লাহ অথবা আলহামদুলিল্লাহ বলুন। এতে আল্লাহ বরকত দেন।

আগেই বলেছি, বাচ্চাকে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখুন। নিয়মিত গোসল করান। কারণ আল্লাহ পরিচ্ছন্নতা পছনদ করেন। এখন অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে বাচ্চাকে গোসল করাতে না পারলে তার মাথায় হাত দিয়ে নিম্নোক্ত দোয়া পড়ুন।

بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ
বিসমিল্লাহি আরকিক মিন কুল্লি শাইয়িই ইউ’যীক। মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও ‘আইনি হাসিদ। আল্লাহু ইয়াশফিক। বিসমিল্লাহিল্লাহি আরকিক।

অথবা,

بِاسْمِ اللَّهِ يُبْرِيكَ وَمِنْ كُلِّ دَاءٍ يَشْفِيكَ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ وَشَرِّ كُلِّ ذِي عَيْنٍ
বিসমিল্লাহি ইউবরিকা ওয়ামিন কুল্লি দা-ইন ইয়াশফিক। ওয়ামিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ। ওয়া শাররি কুল্লি যী”আঈন। এতে নজর কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ।

১৫০+ বন্ধুর জন্মদিনের শুভেচ্ছা স্ট্যাটাস, জনপ্রিয় ক্যাপশন ও উক্তি

বদনজর কি শুধু ছোটদের লাগে? নাহ। বড়দেরও নজর লাগতে পারে। আপনার ব্যবসা অথবা কাজে হঠাৎ করে অবনতি হচ্ছে। আপনি লোকসানের মুখে পড়ছেন। কেন? কারণ আপনার উন্নতিতে হয়তো কেউ বদদৃষ্টি দিয়েছে। হয়তো চেনা কেউই আপনার উন্নতি দেখে হিংসা করছে।

আর তার সেই দৃষ্টি আপনার অদৃষ্টে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সবসময় আল্লাহর নাম স্মরণ করবেন। প্রতি ওয়াক্ত নামাযের শেষে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইবেন যাতে তিনি আপনাকে সকল প্রকার হিংসাত্মক দৃষ্টি থেকে রক্ষা করেন। আল্লাহ মহান। আমরা জানি যে, তিনি কাউকে খালি হাতে ফেরান না। আর আল্লাহর রহমতে কোনো অভিশাপ বা কুদৃষ্টি আপনার ক্ষতি করতে পারবে না।

বাচ্চাদের নজর লাগলে কি করতে হয়

অভিশাপ আর কুনজর কি একই?

অভিশাপ হলো অন্যের ক্ষতি বা সর্বনাশ চাওয়া আর কুনজর হলো অন্যের ভালো দেখে হিংসা করা এবং তার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানো। অভিশাপ আর কুদৃষ্টির উদ্দেশ্য একই। সেটা হলো অন্যের ক্ষতি কামনা করা। অপরের উন্নতি বা ভালো দেখলে তা সহ্য করতে না পারা।

বদ নজরের প্রভাব আপনার সন্তান, সংসার, কর্মক্ষেত্র সব দিকেই পড়তে পারে। আপনার হাসিখুশি বাচ্চা হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলো। হাসে না। খেলে না। কিছু খেতেও পারে না। শুধু কাঁদে। হয়তো তার নজর লেগেছে। সেজন্য সসময় আল্লাহকে ডাকুন। তার ইচ্ছা হলে কোনো কুদৃষ্টি আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।

বাচ্চাকে বদনজর থেকে বাঁচাতে হলে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন।

  1. বাচ্চাকে অন্যের সামনে খাবার খাওয়াবেন না।
  2. কেউ বাচ্চার প্রশংসা করলে সাথে সাথে আল্লাহর নাম নিন। মাশাল্লাহ বলুন। এতে কুনজর থেকে আপনার বাচ্চা রক্ষা পাবে।
  3. সকাল- রাত বাচ্চার মাথার কাছে দোয়া পড়ে ফুঁ দিন।
  4. বাচ্চাকে সবসময় পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন রাখুন।
  5. কুনজর থেকে বাঁচতে আল্লাহর নামে পশু কোরবানি করতে পারেন যদি সামর্থ্য থাকে। এতে আল্লাহ খুশি হবেন।

যদি আপনি সবসময় দোয়া পড়েন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চান, তাহলে অবশ্যই মহান আল্লাহ আপনাকে এবং আপনার সন্তানকে কুনজর থেকে রক্ষা করবেন।

তো পোস্টটি (বাচ্চাদের নজর লাগলে কি করতে হয় | কি দোয়া পড়তে হয় ?) কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

2 Comments

মন্তব্য করুন