বায়িং হাউজ কি ?
বায়িং হাউজ হলো মূলত থার্ড পার্টি ব্যবসা সংস্থা যারা ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করে। এরা পণ্যের মান ঠিক রেখে রপ্তানীযোগ্য পণ্য কমিশন নিয়ে ক্রেতার কাছে হস্তান্তর করে। এজন্য তারা ক্রেতা এবং বিক্রেতা দুই পার্টির কাছ থেকেই কমিশন পায়।
বাংলাদেশে মূলত পোশাক শিল্পের উপর ভিত্তি করে শত শত বায়িং হাউজ গড়ে উঠেছে।
ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযগের এবং অর্ডার আনার কাজটা তারাই করে।
দেশি বিদেশি ক্লায়েন্টরা সাধারণত গার্মেন্টসে অর্ডার দেয় না।
তারা বায়িং হাউজের মাধ্যমে চুক্তি করে। এতে কি হয়? বাতিলযোগ্য মাল তারা আবার বায়িং হাউজকে ফেরত পাঠায় এবং আগের দামেই নতুন পণ্য কিনে নেয়।
আর বায়িং হাউজগুলো সেসময় ফেরত পাঠানো মাল লোকাল মার্কেটে কম দামে বিক্রি করে দেয়।
বায়িং হাউজের সাথে চুক্তি করলে তারা সবসময় দাম নিজেদের কমিশন হিসেব করেই উল্লেখ করে।
আর সেই শর্তের কথা চুক্তিতে লেখা থাকে যাতে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়েরই সম্মতি থাকে।
বায়িং হাউজের কাজ কি ?
বায়িং হাউজের কাজকে মার্চেন্ট ডাইজিং বলা হয়।
পোশাক শিল্পের সাথে যুক্ত বায়িং হাউজের কাজ হলো ক্লায়েন্ট থেকে অর্ডার এনে কোনো গার্মেন্টসকে দেয় এবং গার্মেনটসকে দেয় এবং গার্মেন্টস পোশাক তৈরি করে তাদেরকে দিলে তারা সেগুলো সাপ্লাই দেয়।
এ সময় তারা পোশাকের গুণগত মান, সংখ্যা, কাপড়ের গুণগত মান ইত্যাদি যাচাই করে দেখে।
পণ্যে কোনো ত্রুটি পেলে তা বাতিল করে।
এরপর যখন ক্লায়েন্টের কাছ থেকে টাকা বা ডলার আসে, নিজেদের কমিশন রেখে তারপর তারা গার্মেন্টসের বিল দেয়।
কিন্তু যোগাযোগের জটিলতা, পেমেন্ট আসতে দেরি হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
তাই বড় বড় পোশাক কোম্পানি নিজেরাই বায়িং হাউজ দিয়ে থাকে। তবে অর্ডার আর প্রফিট বাড়ানোর জন্য তারা বাইরের থেকেও অর্ডার নেয়।
আর অন্যান্য ব্যবসার সাথে যুক্ত যেমন: চামড়া, পাটের পণ্য, কাঁচামাল, সিমেন্ট, রড, বালু এবং অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর সাথে যুক্ত বায়িং হাউজগুলো একইভাবে থার্ড পার্টির কাজ করে থাকে।
বাইরে থেকে অর্ডার এনে তারপর বিভিন্ন কোম্পানিকে বুঝিয়ে দেয়।
এই কাজের কারণে তারা কমিশন নিয়ে থাকে পার্সেন্টেজ হিসেবে।
কিভাবে খুলবেন বায়িং হাউজ ?
যদি আপনি রপ্তানিযোগ্য পোশাক শিল্পের জন্য বায়িং হাউজ খুলতে চান তাহলে আপনাকে বিজিএমই থেকে সনদ নিতে হবে। সেইসাথে সদস্যপদের জন্য আবেদন করতে হবে।
এভাবে আপনি বৈধ উপায়ে বায়িং হাউজ শুরু করতে পারবেন।
আবেদনের জন্য অনলাইনেই ফরম পূরণ করে তার দুই কপি, সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজ ছবি, এনআইডি কপি, ট্যাক্স সার্টিফিকেটের কপি, অংশীদারত্বের আইনি কাগজপত্র জমা দিতে হবে। লাইসেন্সের জন্য লাগবে ১৫ হাজার আর এক বছরের সদস্যপদের জন্য ৮ হাজার টাকা লাগবে।
এই সদস্যপদ আপনি বায়িং হাউজের নামেই নিতে পারবেন যা প্রতিবছর রিনিউ করতে হবে নির্দিষ্ট ফি প্রদানের মাধ্যমে।
বিদেশে স্কলারশিপ পাওয়ার যোগ্যতা
বায়িং হাউজের বিজিএমই এর সদস্যপদ থাকলে ক্লায়েন্ট পেতে সুবিধা হবে।
এছাড়া লাইসেন্স আসার আগ পর্যন্ত আপনি অনলাইনে বা পরিচিতজনের মাধ্যমে ক্লায়েন্ট খুঁজতে পারেন।
বায়িং ব্যবসা বেশ লাভজনক। আপনি এককভাবে অথবা পার্টনারশিপে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
তবে অবশ্যই আপনার কোম্পানিকে রেজিস্টার করিয়ে নিবেন।
সদস্যপদ প্রতিবছর রিনিউ করবেন আর ট্যাক্স সময়মতো প্রদান করবেন।তবে লাইসেন্স পেতে কোনো দালাল বা তৃতীয় পক্ষকে টাকা দিবেন না।
আর বায়িং হাউজে চাকরির জন্য কেবলমাত্র অথেনটিক সাইটের মাধ্যমেই আবেদন করুন।
বায়িং হাউজে চাকরি
বায়িং হাউজ যেহেতু লাভজনক ব্যবসা, তাই নতুন নতুন চাকরির ক্ষেত্র তেরি হয়েছে এই হাউজকে ঘিরে। চলুন জেনে আসি বায়িং হাউজে কোন কোন পদে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়।
এরপর জানবো তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে।
সাধারণত যে ডিপার্টমেন্টগুলো বায়িং হাউজে থাকে।
- সোর্সিং এন্ড মার্চেন্ডাইজিং
একাউন্টস
এইচ আর
কোয়ালিটি এশুরেন্স
কোয়ালিটি কন্ট্রোল
শিপিং এণ্ড কমার্শিয়াল
এডমিন প্যানেল
ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট
কম্পলায়ান্স
ক্যাড
বায়িং হাউজে চাকরি পাওয়ার উপায় কি কি ?
একটি বায়িং হাউজে শুরুতেই থাকে সোর্সিং এবং মার্চেন্ড ডাইজিং এর কাজ।
আপনাকে বায়িং হাউজ চালাতে হলে সোর্স খুঁজতে হবে। মেইল করতে হবে। ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলতে হবে।
এজন্য আপনাকে টাইপিং এবং মাইক্রোসফট অফিসের কাজ জানতে হবে। যোগাযোগ দক্ষতা থাকতে হবে। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। রাইটিং এবং স্পিকিং স্কিল ভালো হতে হবে।
এছাড়া বিদেশি ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলার জন্য একাধিক ভাষা জানা থাকলে ভালো।
সাধারণত টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠান হতে ডিগ্রী এবং অনার্স মাস্টার্স করা ক্যান্ডিডেট এই চাকরির জন্য গুরুত্ব পায়। তবে কিছু কিছু কোম্পানি এই পদের জন্য ইংরেজি এবং বিবিএ স্নাতক ও স্নাতকোত্তরধারীদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। তবে সব বায়িং হাউজই কম- বেশি মার্চেন্ট ডাইজারদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখে।
এরপর আসে একাউন্টস। জমা- খরচ, আয়- ব্যয়ের হিসাব তারা দেখে।
তাই সাধারণত একাউন্টস এবং গণিত বিভাগে স্নাতক পাশকারীদের এই কাজে নিয়োগ দেয়া হয়।
এছাড়া কোয়ালিটি এশুরেন্স, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, শিপিং এণ্ড কমার্শিয়াল, এডমিন প্যানেল, ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট, কম্পলায়ান্স এবং ক্যাড এইসব পদের জন্য যে কোনো গ্র্যাজুয়েটসরা আবেদন করতে পারবেন। তবে অগ্রাধিকার দেয়া হয় বিবিএ এমবিএ ডিগ্রীধারীদের। তবে আপনার অন্য জায়গায় চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে এবং আপনার কম্পিউটার স্কিল আর যোগাযোগ দক্ষতা ভালো হলে আপনিও বায়িং হাউজে চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারেন।
বায়িং হাউজে বেতন কত ?
এক একটি বায়িং হাউজে বেতন স্কেল এক একরকম।
বেশিরভাগ বেসরকারি এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়াতে বেতন স্কেল ভিন্ন হয়।
তবে সাধারণত মার্চেন্টডাইজারের জন্য মাসিক বেতন ৪০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়।
আর অন্যান্য পদের জন্য মাসিক ৩০- ৪০ হাজার পর্যন্ত দিয়ে থাকে কোম্পানিগুলো।
আর একদম নতুন ফ্রেশ গ্রাজুয়েটদের জন্য ১৫- ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দিয়ে থাকে বায়িং হাউজগুলো।
অন্যান্য পদের জন্য অনভিজ্ঞদের নিয়োগ দিলেও মার্চেন্ডাইজিং, কোয়ালিটি আর এডমিন প্যানেলে সাধারণত অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগ করে কোম্পানিগুলো।
এক্ষেত্রে বায়িং হাউজে চাকরি করতে হলে আপনাকে বায়িং হাউজ এবং এর কাজ সম্পর্কে ভালো করে জানতে হবে। কম্পিউটার চালনায় দক্ষ হতে হবে। টেক্সটাইল এবং অন্যান্য রপ্তানিযোগ্য পণ্য সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। যদিও রেজাল্ট এ চাকরির ক্ষেত্রে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে কাজের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়।
এই ছিলো আজকের পোষ্ট। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
অনেক কিছু জানতে পারলাম! ধন্যবাদ
আপনাকেও ধন্যবাদ
সুন্দর
ধন্যবাদ
Thanks
valo likecen thanks
Helpful
khub upokari ekti post
Thanks
Thanks