আমাদের হাতে অনেক টাকা এলে কোথায় রাখি? নিশ্চয়ই ব্যাংকে! আমাদের আমাদের বাড়িতে অনেক সোনার গহনা থাকলে তার নিরাপত্তার জন্য সেগুলোকেও আমরা ব্যাংকের লকারে রাখি। এগুলো আমার আপনার মত সাধারন মানুষদের জন্য ব্যবহারযোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্ত আপনি জানলে অবাক হবেন পৃথিবীতে এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে সাধারন মানুষদের জন্য যাওয়া নিষেধ। আপনাদের সাথে এই পোস্টে এমন কতগুলো জায়গার বর্ণনা করবো যেখানে রয়েছে উচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।
১. ব্যাংক অব ইংল্যান্ড (গোল্ড ভল্ট): এটি ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার অবস্থান রাজধানী লন্ডনে। এটি বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক একটি ব্যাংক। এই ব্যাংক পৃথিবীর দ্বিতীয় প্রাচীনতম কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যেটি ১৬৮৪ সালে শুরু হয়েছিলো। ব্যাংকের নিচে আন্ডারগ্রাউন্ডে ২৮ পাউন্ড ওজনওয়ালা চব্বিশ ক্যারেট সোনার হাজার হাজার ইট মজুদ রয়েছে। যার ওজন চার মিলিয়ন টনেরও বেশি। এখানে রাখা সোনাগুলোর বাজারমূল্য প্রায় ২৪৮ বিলিয়ন ডলার। লন্ডনের মাটির নিচে রাখা এ সোনাগুলোকে রক্ষা করে কংক্রিট ও স্টিলের দেয়াল। এই ভল্টের দরজার চাবি তিন ফুট লম্বা। এখানকার কর্মীদের গোপন রাখা হয় যাতে কেউ জানতে না পারে চাবি কার কাছে আছে।
২. ফোর্টনক্স: এটি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত। বলা হয় এই জায়গার উপর থেকে পাখি উড়ে যাওয়ারও অনুমতি নেই। আমেরিকার কেন্টিগেতে মূল্যবান ধাতু সোনা, হীরে ও অন্যান্য মূল্যবান জওহরত সংরক্ষন রাখার জন্য একটি বিল্ডিং নির্মান করা হয়েছে। এই বিল্ডিংয়ে বর্তমানে প্রায় চার হাজার পাচশত টন সুপ্ত সোনা রয়েছে। বিল্ডিংয়ের দরজাটি পুরু গ্রানাইট শিলা দিয়ে তৈরি। যা ব্রাস্ট প্রুভ যা প্রায় বাইশ টন ভারী ও একত্রিশ ইঞ্চি পুরু। এই ভবনের সুরক্ষার জন্য অত্যাধুনিক হাতিয়ারের সাথে ত্রিশ হাজার সেনা নিয়োগ করা হয়েছে। সেখানে রাখা আছে কামানও। এর ভেতরে প্রবেশ করার জন্য আলাদা আলাদা দশটি পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হবে যা দশটি আলাদা আলাদা জায়গায় নয়জন আলাদা আলাদা ব্যাক্তির কাছে সংরক্ষিত থাকে। আশা করছি বুঝতে পারছেন এটি কতটা সুরক্ষিত স্থান।
৩. স্যালভার্ট গ্লোবাল সিট ভল্ট: এটি নরওয়েতে অবস্থিত। নওয়ের উত্তর সাগরের একটি নির্জন দ্বীপে একটি বিশাল সংরক্ষনশালা তৈরি করা হয়েছে। এটি বানাতে বিশেষ বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এটি বানানোর প্রধান উদ্দেশ্য হলো সমগ্র পৃথিবীর বিভিন্ন উদ্বিদের বীজ সংরক্ষন করা। পৃথিবীতে যদি কখনো কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মানবসৃষ্ট দুর্যোগে পৃথিবীর গাছপালা মারা যায় তখন কি হবে? সেজন্য সমগ্র পৃথিবী থেকে এনে প্রায় পচিশ কোটি ফসলের বীজ সংরক্ষন করা হয়েছে। উদ্ভিদগুলোর বীজ রক্ষনাবেক্ষন ও সুরক্ষার জন্য প্রতিবছর প্রায় নব্বই লক্ষ ডলার খরচও করা হয়। এই সংরক্ষনশালায় কেউ চাইলেই প্রবেশ করতে পারবে না। বলা হয় এটি এমনভাবে বানানো হয়েছে যদি হিমালয়ের সব বরফ গলে গিয়ে পৃথিবীর সব জায়গা ডুবে যায় তাহলেও এখানকার সবকিছু ঠিক থাকবে।
৪. দ্যা ভল্ট অব কোকাকোলা: আপনি আমি যে কোকাকোলা খাই তা বানানোর যে সিক্রেট ফর্মুলা তা সংরক্ষিত রয়েছে বিশেষ নিরাপত্তাযুক্ত স্থানে। কোককোলা বানানোর সিক্রেট ফর্মূলা আটলান্টার মিউজিয়ামে একটি বড় স্টীটের ভল্টের মধ্যে রাখা আছে। এই ভল্টে প্রবেশ করার জন্য ইনফ্রায়েড রশ্মি থেকে বাচার সাথে সাথে একটি বড় চাবিও প্রয়োজন হবে যার দ্বারা এক বিশাল দরজা খুলতে হবে। সাধারনত মানুষ কোকাকোলা কোম্পানীর সকল ইউনিট দেখার সাথে সাথে প্রস্ততকারক ইউনিটও ঘুরে দেখতে পারেন তবে সকলকে এই ঘরটি থেকে দূরে রাখা হয়। পৃথিবীতে মাত্র তিনজন মানুষই আছেন যারা কোকাকোলার এই গোপন ফর্মূলাটি জানেন।
৫. দ্যা আয়রন মাউন্টেন: এটি আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ায় অবস্থিত। একসময় এটি চুনাপাথরের খনি ছিলো। তবে বর্তমানে এটি উচ্চ নিরাপত্তাযুক্ত একটি স্থান। এখানে অনেক মূল্যবান ডকুমেন্টস রাখা আছে। বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত এই ভল্টের আয়তন সতেরো লক্ষ বর্গফুট। এখানে আলবার্ট আইনস্টাইনের অরিজিনাল ফটো থেকে শুরু করে থমাস আলভা এডিসনের ইলেকট্রিক বাল্ব আবিষ্কারের নথিপত্র ও লক্ষ লক্ষ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক জিনিসপত্র এখানে সংরক্ষিত আছে। এখানে মজুদ ডকুমেন্টস ও অন্যান্য জিনিস ঠিক রাখার জন্য ওয়াটার পাম্পের সাহায্যে ও আন্ডারগ্রাউন্ড লেকের সাহায্যে তাপমাত্রা সবসময় ঠিক রাখা হয়। এই ভল্ট ২২০ ফুট মাটির নিচে অবস্থিত। এখানকার সিকিউরিটি খুবই শক্তপোক্ত। প্রবেশপথেই থাকে সসস্ত্র গার্ড যারা এখানে আগত মানুষদের নিখুতভাবে চেক করে।
সুন্দর তথ্য সমৃদ্ধ লেখা ।
Nice topic.
তথ্যবহুল পোস্ট
Good post
nice
wow