আসসালামুআলাইকুম, কেমন আছেন আপনারা? আশা রাখি সবাই বেশ ভালো আছেন। আজকে আপনাদের জন্য একটি বেইমান প্রেমের গল্প নিয়ে হাজির হলাম বেইমান প্রেম যাকে বলতে পারেন ব্যর্থ প্রেমই। এ গল্পেও অন্য সব গল্পের মত নায়ক, নায়িকা সব রয়েছে। নায়ক নায়িকা বলতে ছবির নয়, যাদের নিয়ে এই গল্প তাদের কথা বুঝিয়েছি। আশা করছি গল্পটি আপনাদের ভালো লাগবে, তাই পুরোটা পড়বেন।
গল্পটা শুরু হয় সিধু আর সোনালী কে ঘিরে। আর পাঁচটা প্রেমের মত তাদের প্রেমের শুরু হয়নি। সিধু যখন ক্লাস ২ তে, সোনালীও তখন সেই স্কুলে ক্লাস ২। তে পড়ত। কিন্তু এই বয়সে আর কতটুকু বুদ্ধি জ্ঞান থাকতে পারে বলুন। তারা যখন ক্লাস ৪ এ পড়ে, তখন সিধুর সোনালীকে ভালো লাগতো। কিন্তু ক্লাস ৪ এইতো পড়ে এখনো প্রেম ভালোবাসা এসব বুঝে উঠতে পারেনি। শুধু মাত্র ভালো লাগতো , বলতে পারেন একজন ভালো বন্ধু হিসেবে।
তারা প্রায় টিফিন পিরিয়ডে গল্প করতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। সোনালীর কাকার একটি দোকান ছিল, সোনালী প্রায় টিফিন পিরিয়ডে তার কাকার দোকান থেকে সিধুকে আচার, চকলেট এনে খাওয়াতো। এভাবে তারা ক্লাস ৫ পার করলো। এরপর সোনালী আর সিধু আলাদা হয়। সিধু যেখানে থাকতো সেখানের একটি হাই স্কুলেই সে ভর্তি হয়ে যায় কিন্তু সোনালী অন্য কোথাও চলে যায়। অবশ্য সোনালীর সাথে আর দেখা হবে না এটা ভেবে সিধুর অনেক মন খারাপ হয়।
এভাবে ২-৩ বছর কেটে গেলো। ভাগ্যের পরিহাসে আবারও তাদের দেখা হয়। বছরটা ছিল ২০১৮ সাল, যখন সিধু ছিল ক্লাস ৯ তে, তখন সিধুদের গ্রামে আবারও আসে সোনালী। সোনালী সিধুর স্কুলেই আবারও ক্লাস ৯ তে ভর্তি হয়। কিন্তু সিধু সোনালী একে অপরকে চেনার পরও একে অপরের সাথে কথা বলত না। দুজনেই বেশ লজ্জা পেত, কেও নিজ থেকে কথা বলতে চাইতো না। কিন্তু কথা বলার ইচ্ছে দুজনের ছিল।
তারা তখন ক্লাস ১০। সিধু তখন ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে, সে একদিন সোনালীকে মেসেজ দেয়, এর থেকে তাদের আবার কথা শুরু হয়। কিছুদিনের মধ্যে তাদের মধ্যে বেস্ট ফ্রেন্ড এর সম্পর্ক গড়ে উঠে। এভাবে তাদের মধ্যেকার বন্ধুত্ব অনেক গভীরে যায়। মজার ব্যাপার দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলেছে কখন সেটা তারা নিজেরাও জানে না। এরপর থেকে সিধু সোনালীকে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দেখতে তার রাগ হতো, তাই সোনালী সিধুর সামনে কোনো ছেলের সাথে কথা বলত না। সিধু ক্রমশ তাকে অনেক ভালোবাসতে থাকে।
সোনালীও অবশ্য তাকে ভালোবাসতো এমনটা সিধুকে সে বলতো। তাদের এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলো। একদিন সিধু সোনালীর এক বন্ধুর থেকে জানতে পারলো, সোনালীর অনেক আগের একটা প্রেমিক ছিল যার সাথে সোনালীর এখনও কথা হয়। তাদের সম্পর্কে শুরু হলো ভাঙনের। তাদের মধ্যে অনেক ঝগড়া হলেও সোনালীকে সিধু এতটাই ভালোবাসে যার কারণে তার সাথে সে কথা না বলে থাকতে পারেনা। সে সোনালীকে জিজ্ঞেস করেছিল সিধুকে যে সে ভালোবাসে বলেছিল তবে কি সেটা মিথ্যা?
সোনালী জবাব দেয় না, সিধু কে সে একজন ভালো বন্ধু হিসেবে ভালোবাসে। তখন সিধু ও আর কিছু বলতে পারেনি। মনের মধ্যে হাজারো ব্যথা লুকিয়ে সে চুপ থাকে। সিধু ক্রমশ খারাপের দিকে যেতে থাকে, তখন তাকে তার এক ছেলে বেস্ট ফ্রেন্ড সান্তনু বুঝায়। সান্তনু অনেক ভালো একটা ছেলে ছিল। সে সিধু কে বলে যে জীবনটা ছেলেখেলা নয়, নিজেকে এমন ভাবে প্রস্তুত করতে হবে যাতে সোনালীর মত মেয়েরা নিজ থেকে আসে।
সান্তনু এর কথায় সিধু ক্রমশ উন্নতির দিকে আসতে থাকে। কিন্তু সে সোনালীর সাথে সম্পর্ক ভাঙ্গে নি। সোনালীর বিয়ে ঠিক হয়েছে তাও তার ভালোবাসার ছেলের সাথে। সিধু জেনে অনেক রাত কেঁদেছিল। কিন্তু পরে যখন বুঝতে করে তার কান্নার দাম কারোর কাছে নেই তখন থেকে নিজেকে কন্ট্রোল করতে শিখে গিয়েছে। সিধু যেহেতু তার বাবা মার একমাত্র সন্তান ছিল, তাকে তার বাবা মা অনেক ভালোবাসতো। সিধু চিন্তা করলো তাকে তার বাবা মায়ের জন্য কিছু করতে হবে। যদিও সে সোনালীর কাছে থেকে ধোঁকা খেয়েছে কিন্তু সে ধোঁকা এর ফল সে তার মা বাবার উপরে ফেলতে চায় না।
সিধু এখন ভালো পর্যায়ে আছে। চাকরি করছে, বাড়ি আছে, গাড়ি আছে, বাবা মাকে নিয়ে ভালোই আছে। কিন্তু ভালো নেই সোনালী। তার স্বামী তাকে নির্যাতন করে, কেননা তার সামনে ছিল সকল বাজে নেশায় মগ্ন, যা বিয়ের পো সোনালী বুঝতে পারে। সোনালী ভাবতে থাকে প্রতিনিয়ত যে সে সিধুর সাথে অন্যায় করেছে। যদি সে সিধুর মত ছেলেকে বিয়ে করতো তাহলে সে সুখী হতো। তবে কি আর করা এখন চাইলেও কিছু সম্ভব নয়। সবকিছুকে ভুলে সিধু আজ ভালো পর্যায়ে গেলেও সোনালীর জীবনে দুঃখের ছায়া নেমে আসে। কিন্তু আজও সিধু সোনালী কে ভালোবাসে। কারণ সিধু সোনালীর জায়গাটা কাওকে দিতে পারে না চাওয়ার সত্বেও।
বন্ধুরা কেমন লেগেছে গল্পটি অবশ্যই মন্তব্য করবেন, শেষ করছি এইটুকুতেই আল্লাহ হাফেজ।