আগামী ২১শে সেপ্টেম্বর বিশ্ব আলঝেইমার্স ডিজিজ দিবস। আলঝেইমার্স বা ভুলে যাওয়া রোগ সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সম্পৃক্ত। প্রবীণদের এই রোগ ছাড়াও আরো অনেক রোগ হয়ে থাকে। এসব রোগী এবং প্রবীণদের প্রতি আমাদের সদয় ও সচেতন হওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে এই প্রবীণরাই আমাদের পিতা অথবা মাতা। তাদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা সব সময়ের জন্য। কোন কিছুর বিনিময়েই তাদের ঋণ শোধ করা যাবে না। বিশ্বব্যাপী মানুষের গড় আয়ু বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে স্মৃতিভ্রংশের প্রকোপ। ডিমেনশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশী আলঝেইমার ডিজিজ,যা আজ আর্ন্তজাতিকভাবে একটি প্রধান জনস্বাস্থ্য বিষয়ক ঝুকি। আলঝেইমার্স একটি মারাত্বক এবং ক্রনিক রোগ, যা মস্তিষ্ককে আক্রমন করে এবং ধীরে ধীরে কর্মদক্ষহীন করে ফেলে। এটি একটি অধিকতর খারাপের দিকে অগ্রসর হওয়া রোগ, যার প্রক্রিয়া ৫ থেকে ২০ বছর ধরে চলতে থাকে এবং এমন একটি সময় আসে যখন এই রোগীরা তাদের প্রাত্যহিক সব কাজ যেমন, খাওয়া, গোসল করা ও বাথরুম ব্যবহার করার জন্য অন্যের উপর সার্বক্ষণিক নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
রোগের কারণ:
প্রকৃতির নিয়মে বয়স বাড়ার সাথে মস্তিষ্কে অনেক পরিবর্তন হয়। মস্তিষ্কের আয়তন কমতে থাকে, খাঁজ গভীর হয়, নার্ভসেলের সংখ্যাও কমে যায়। তবে আলঝেইমার্স ডিজিজে এই পরিবর্তনগুলো অনেক দ্রুত গতিতে হয়। কারণ, মস্তিষ্কের অ্যামাইলয়েড প্রোটিন; আমাদের প্রতিটি নার্ভসেলের কোষপর্দায় অ্যামাইলয়েড প্রিকারসর প্রোটিন থাকে। এরাই অ্যামাইলয়েড প্রোটিন তৈরী করে। আর এটি তৈরীতে সাহায্য করে আলফা সিক্রেটেজ নামে প্রটিয়েজ ক্যাটালিস্ট, কিন্তু যাদের আলঝেইমার্স হয়, তাদের ক্ষেত্রে আলফার যায়গায় হাজির হয় বিটা বা গামা সিক্রেটেজ, যা অ্যামাইলয়েড পিফারস প্রোটিনকে ভুল জায়গায় ভেংগে দেয়। ফলে তৈরী হয় বিটা অ্যামাইলয়েড প্রোটিন। আর এ বিটা অ্যামাইলয়েড প্রোটিনই যত নষ্টের গোড়া।
# বংশগত কারণ যেমন, বাবা-মা অথবা ভাই বোন কারো আলঝেইমার্স থাকলে এই রোগ সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যায়।
# রক্তে কোলেস্টেরল এবং হোমোসিস্টিনের পরিমাণ বাড়লে বিটা অ্যামাইলয়েডের উৎপাদন বাড়ে। তাই অতিরিক্ত ওজন হবে, হাইপার থাইরয়েডিজম, উচ্চ রক্তচাপের অসুখেও এ রোগের আশঙ্কা বাড়ে।
# ডায়াবেটিস মেলিটাস আলঝেইমার্স এবং ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া উভয়ের আশঙ্কাই বাড়ায়।
# দীর্ঘস্থায়ী চাপ, মানসিক অবসাদে এই রোগ বাড়ে।
# ভিটামিন বি-১ ফোলেট, নিয়সিন, থায়ামিনের ঘাটতিতে হতে পারে ডিমেনশিয়া।
ওষুধঃ
# অ্যান্টিকোলিনার্জিক, অ্যান্টিকনভালসেন্ট, কিছু মানসিক রোগের ওষুধ, বিশেষত ঘুমের ওষুধ ডিমেনশিয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। ক্যামোথেরাপি ও ব্রেনে রেডিওথেরাপির পরও এই আশঙ্কা বাড়ে।
# ব্রেন টিউমার, মেনিনিজিয়োমা, পিটুইটারি এডিনোমা ইত্যাদি।
রোগের লক্ষণঃ
আলঝেইমার্সের লক্ষণ অনেক রকমের হয়। তবে কারণ যাই হোক না কেন, মোটামুটি যেকোনো স্মৃতিভ্রংশ রোগে কতগুলো ছোটখাটো বিষয় খেয়াল করা যায়। প্রথমে ছোটখাটো ভুল, তারপর বড় ভুল যেমন-
# সদ্য শোনা বা শেখা কথা বা কাজ ভুলে যাওয়া, এক ঘর থেকে অন্য ঘরে গিয়ে উদ্দেশ্য ভুলে যাওয়া, একই কাজের কথা বারবার জিঞ্জেস করা।
# কথাবার্তার খেই হারিয়ে ফেলা, সঠিক শব্দের উচ্চারণ বা নাম খুঁজে না পাওয়া।
# চেনা মুখ বা চেনা জিনিস দেখেও নাম মনে করতে না পারা, যেমন- ফুচকাপ্রিয় মানুষ চোখের সামনে কাউকে ফুচকা খেতে দেখেও নাম মনে করতে না পারা।
# কোন ঘটনার সময় উপস্থিত থেকেও কোথায়, কখন, কি হল তা ঠিক মনে করতে না পারা।
# দৈনন্দিন কাজের জায়গায় ভুল। গ্যাস জ্বালিয়ে রেখে ভুলে যাওয়া, দাঁত মাজার কথা ভুলে যাওয়া, খেয়ে মুখ না ধোয়া, চশমা, চাবি, মোবাইল কোথাও রেখে ভুলে যাওয়া, ফ্যান বা লাইটর সুইচ অফ না করেই চলে যাওয়া।
# সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা বা কাজ এড়িয়ে যাওয়া।
# হঠাৎ বিরক্তি, লোককে যা বলা উচিত নয় তাই বলে ফেলা আবার কখনো চুড়ান্ত উত্তাপহীন।
# লোকজনের সাথে কম মিশতে চাওয়া, অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখানো।
# সন্দেহ বেড়ে যাওয়া এমনকি নিজের স্ত্রী বা স্বামীকে সন্দেহ করা।
# উদ্দেশ্যহীন ভাবে কোন কাজ বারবার করা, জিনিসপত্র ভুল জায়গায় রাখা, যেমন- ময়লা ফেলার জায়গায় জামা কাপড় রেখে দেওয়া।
চিকিৎসাঃ
সত্যি বলতে চিকিৎসায় আলঝেইমার্স সারে না। তবে সময়মত সতর্ক হলে, যথাযথ চিকিৎসা করালে তার মধ্যেও ভাল থাকতে সাহায্য করে। শুধু রোগীর জন্য নয়, তার বাড়ির লোকজনের উপর থেকেও স্ট্রেস কমাতে পারে চিকিৎসা। ওষুধ দিয়ে স্মৃতি, চিন্তা মনোযোগের অবনতি কিছুটা হলেও ঠেকানো যায়। কোলিন স্টাবেজ ইনহিবিটরের মধ্যে রয়েছে- ডোনেপেজিল, রিভাসটিগমিন, গ্যালাকটামিন। আরেক বিশ্বস্ত ওষুধ মেমানটিন। কখনো কখনো মুড স্টেবিলাইজার এবং ঘুমের জন্য বেনজোডায়াজিপিনসের ব্যবহার করা জরুরী। ওষুধের সাথে সাথে রোগীর পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ এখানে বেশি জরুরী। বাড়ির মানুষদের তাই অনেক বেশী সংবেদনশীল হতে হবে। এদের মন ভাল রাখতে নিজেদের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনুন।
এদের ভাল রাখার জন্য ৬ টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবেঃ
১. Education to family
# রোগ সম্পর্কে পরিবারকে জানানো ও বুঝানো।
# রোগীর ঠিক কি হয়েছে।
# কত দিন এমন চলবে।
# কেন এমন আচরণ করছে।
২. এনভায়রনমেন্টঃ
# বাড়ির বাথরুম বা টয়লেটের দরজার সামনে নাম লিখে রাখা, ছবি আকানো, যাতে রোগী বাথরুম বা টয়লেট চিনতে পারে।
# রোগীর বসবাসের ঘরের দেয়ালে ক্যালেন্ডার, বড় দেয়ালঘড়ি ঝুলিয়ে দেয়া।
৩. এমপাওয়ারঃ
# বাড়িতে কেউ এলে তার নাম , সম্পর্ক জানানো।
# জামাকাপড় বদলানো।
# ঘুম, গোসলের প্রতি যত্নবান হওয়া।
৪. এনগেজঃ
# বাড়ির সামনের রাস্তায় একসাথে হাটা।
# পুরনো গান শোনা।
# পুরনো এ্যালবামে ছবি দেখা।
# একসাথে খেলা।
৫. এনারজাইজঃ
# রোগীকে সাথে করে নিয়ে বাজার, দোকান, বিয়েবাড়ি, বন্ধুর বাড়ি, সিনেমা দেখতে যাওয়া।
৬. End Point
নার্সিং হোমে ভর্তি করে দেয়া।
সংগ্রহ: ইবনে সিনা হেলথ ম্যাগাজিন, বর্ষ-৯, সংখ্যা-১২, ডাঃ মোঃ ইসমাইল হোসেন, ইসলামী ব্যাংক মেডি. কলেজ, রাজশাহী।
ভুলে যাওয়া রোগ-আলঝেইমার্স ডিজিজ
📢 Promoted post: বাংলায় আর্টিকেল লেখালেখি করে ইনকাম করতে চান?
Good post
Informative
Nice
Nice
😡
Nice