মশা মারার ইলেকট্রিক মেশিন দাম, ভয়ংকর এডিস মশা নিধনের উপায়

আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আশা করি সবাই ভালো আছেন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমিও ভালো আছি। আজকে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব মশা মারার ইলেকট্রিক মেশিন দাম, মশা কতদিন বাঁচে, মশা মারার ব্যাট  সম্পর্কিত কিছু তথ্য নিয়ে। তাহলে আর দেরি না করে শুরু করা যাক।

ডেঙ্গু বিস্তারকারী ভয়ংকর এডিস মশা নিধনের উপায়

মশা মারার ইলেকট্রিক মেশিন দাম

মশা অত্যান্ত ক্ষুদ্র একটি পতঙ্গ। কানের কাছে পিনপিন করে বিরক্ত করলে হাতের তলে পিষেই যাকে অনায়াসে মেরে ফেলা যায়। কিন্তু ক্ষুদ্র এই পতঙ্গ মশাই ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর মানব খুনী। প্রতি বছর বিভিন্ন প্রজাতির মশার দ্বারা সৃষ্ট ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মত রোগে মারা যায় লক্ষ লক্ষ মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে প্রতিবছর মশা বাহিত রোগে প্রায় ৭,২৫,০০০ মানুষ মারা যায়। যার মাঝে শুধু ম্যালেরিয়াতেই মারা যায় ৬ লক্ষ মানুষ। তুলনা করলে দেখা যায় সাপ, কুকুর, কুমির, সিংহ, জলহস্তি, হাঙ্গর, নেকড়ে সবাই মিলে বছরে প্রায় পঁচাত্তর হাজার মানুষ মারে। তাহলে পাঠক বুঝুন ক্ষুদ্র এই রোগ বিস্তারকারী রক্তচোষা পতঙ্গ মশার কত বড় ক্ষমতা।

বর্তমানে রাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশে ছড়িয়ে পরেছে ডেঙ্গু মহামারী। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ৪২ হাজার ১৯৯ জন মানুষ। সারা দেশে এ বছর জুড়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১৭০ জন। ভয়াবহ এই ডেঙ্গু জ্বর ছড়িয়ে বেড়ায় এডিস প্রজাতির মশা।

বিভিন্ন প্রজাতির মশা

এই পৃথিবীতে প্রায় ৩৫০০ এরও বেশি প্রজাতির মশা রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন প্রায় ২২৬ মিলিয়ন বছর ধরে মশা পৃথিবীর বুকে টিকে আছে। মশার কিছু প্রজাতির ভেতর শুধু স্ত্রী প্রজাতির মশাই রক্ত শোষণ করে থাকে। পুরুষ প্রজাতির মশা রক্ত শোষণ করে না। স্ত্রী প্রজাতির অ্যানোফিলিস, কিউলেক্স, এডিস, হেমাগোগাস মশা সাধারনত নানা রোগ বিস্তারকারী হিসেবে সর্বজন পরিচিত। এর মাঝে অ্যানোফিলিস মশা ম্যালেরিয়া, এডিস মশা ডেঙ্গু, পীতজ্বর, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস ও কিউলেক্স মশা জাপানি এনসেফালাইটিস ও ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস ছড়িয়ে বেড়ায়।

মশা বা এডিস মশার জীবনচক্র

মশা মারার ইলেকট্রিক মেশিন দাম

ডেঙ্গু মশা বা মশার জীবনচক্রে চারটি ধাপ আছে। যথা- ডিম, শূক, মুককীট ও পূর্ণাঙ্গ মশা। চারটির মধ্যে প্রথম তিনটি তারা পানিতেই সমপন্ন করে। এডিস মশার ডিম শুকনো পরিবেশেও আট মাস সক্রিয় থাকে, নস্ট হয় না। আর যখনি স্বচ্ছ পানির সংস্পর্শে আসে তখনি লার্ভা বা শূককীট হয়। যা পরে পূর্ণাঙ্গ মশায় রুপ নেয়। প্রতিবারে একটি স্ত্রী এডিস মশা একশোরো বেশি ডিম দেয়। আর ডিম ছাড়ার জন্য এ মশা অল্প গভীর পানি বেছে নেয়।

যেমন বোতল, কাপ, টব, টায়ারের মত স্থান। যখন পানি ডিমটি পুরো ঢেকে দেয় তখন তিন দিনে লার্ভা বের হয়। লার্ভাগুলো শ্বাস নেয়ার জন্য তার শরীরে থাকা টিউবের মত ছোট্ট একটি নল যাকে সাইফন বলে তা ব্যবহার করে। এভাবে চলার পর লার্ভা থেকে মূককীট বা পিউপা হতে ৮ থেকে ১০ দিন সময় নেয়। মূককীট পানিতেই থাকে এক থেকে দেড় দিন। তারপর সেই মূককীট থেকে নবজাতক পূর্ণাঙ্গ মশার জন্ম হয়। স্ত্রী এডিস মশা সাধারনত চল্লিশ দিন বাঁচে ও গড়ে চারবার ডিম দেয়। এডিস মশা অল্প স্বচ্ছ পানিতে ডিম দিতে পছন্দ করে। তাই ঘরের কোথাও পরিস্কার পানি জমতে দেয়া উচিত না।

এডিস মশা নিধন ও নিয়ন্ত্রনের বিভিন্ন উপায়ঃ

এডিস মশা নিধন ও নিয়ন্ত্রনের বিভিন্ন উপায় আছে। যেমন-
১। মশা মারার মেশিন
২।মশা মারার ইলেক্ট্রিক ব্যাট
৩।মশা মারার স্প্রে
৪।মশা মারার কয়েল
৫। মশা প্রতিরোধী মশারী

এখানে এসব উপায় এর বিস্তারিত আলোচনা করা হল-

মশা মারার ইলেকট্রিক মেশিন দাম

১। মশা মারার মেশিন

মশা মারার মেশিন বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের পাওয়া যায়। এদেরকে সাধারনত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
1.ইনডোর মশা মারার মেশিন
2. আউটডোর মশা মারার মেশিন

২। মশা মারার ইলেক্ট্রিক ব্যাট (মশা মারার ইলেকট্রিক মেশিন দাম)

ঘরোয়া পরিবেশে মশা মারার অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম হল ইলেক্ট্রিক ব্যাট। ইলেক্ট্রিসিটি প্রয়োগ করে বৈদ্যুতিক তারের সাহায্যে মশা মারা হয় এসব ব্যাট দ্বারা। এটি স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত হিসাবে বেশ ভাল কারণ এতে কোন ক্ষতিকর গ্যাস বা ক্যামিকেল নেই। অল্প জায়গায় দ্রুত মশা নিধন করতে এর কাজ খুব ভাল। এসব ব্যাটের দাম সাধারনত ৫৫০ থেকে ১০০০ এর মধ্যেই হয়ে থাকে। খুব ভাল মানের চাইলে বাজেট আরো বাড়াতে হবে। এসব ব্যাট প্রধানত চায়না থেকে আমদানি করা হয়।

৩। মশা মারার স্প্রে

মশা নিধনের জন্য মশা মারার নানা ধরনের স্প্রে বা এরোসল বাজারে পাওয়া যায়। যদিও এসব স্বাস্থ্যের জন্য মানসম্মত নয় ও নিঃশ্বাস এর সাথে গেলে বেশ ক্ষতিকারক। সাধারনত রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে এসব স্প্রে প্রয়োগ করা হয়। এসব স্প্রের দাম ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার ভেতর হয়ে থাকে।

৪। মশা মারার কয়েল

মশা মারার অন্য সব উপায় এর মধ্য কয়েল সবথেকে জনপ্রিয় ও সাশ্রয়ী মাধ্যম। বাজারে সাধারনত নিমপাতা, তুলসীপাতা ও বুস্টার কয়েল পাওয়া যায়। বিভিন্ন ব্রান্ড এর মধ্যে জাম্বো, জোনাকি, তুলসী, নিমপাতা, বাওমা বেশ জনপ্রিয়। এসব কয়েল এর দাম ব্রান্ডভেদে প্যাকেট ১০০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। মশা মারার কয়েল হাঁচি-কাশি ও অ্যাজমা রোগীদের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর। এছাড়াও সাধারন মানুষ এর স্বাস্থ্য ঝুঁকির জন্যও দায়ী এসব কয়েল। প্রধানত চায়না থেকে এসব কয়েল এর কাঁচামাল বাংলাদেশে আমদানি করা হয়। তারপর দেশের কারখানায় প্রস্তুত হয় এসব কয়েল।

৫। মশা প্রতিরোধী মশারী

এডিস মশা থেকে বাঁচতে অন্যতম হাতিয়ার হল মশা প্রতিরোধী মশারী। এসব মশারীর ভেতর ঘুমালে মশা আর আমাদের কামড় দিতে পারবে না। মান অনুযায়ী এসব মশারীর দাম ২০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

মশা মারার ইলেকট্রিক মেশিন দাম বাংলাদেশে

বাংলাদেশে মশা মারারা মেশিন এর দাম শুরু হয় সাধারনত ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। এই মেশিন প্রক্রিতপক্ষে ইনডোর মেশিন। ১০০ বর্গফুট এলাকাকে এসব মেশিন সুরক্ষা দিতে পারে। একটি সাকশন ফ্যান এবং এলইডি ইউ ভি লাইট এর মাধ্যমে এসব মেশিন কাজ করে। সর্বোচ্চ ৭০০০ থেকে ১০০০০ পর্যন্ত হয় এসব মেশিন এর দাম।

আবার অনেক মশা মারার মেশিন বাংলাদেশে আছে যা আউটডোর অর্থাৎ বাইরে ব্যবহার যোগ্য আর দাম শুরু হয় মাত্র ১২,০০০ টাকা থেকে। রাসায়নিক মেডিসিনকে জলীয়বাষ্প বানিয়ে ধোঁয়ার সাহায্যে মশা মারার কাজে ব্যবহার করা হয় এসব মেশিন। ৬০,০০০ বর্গফুট এলাকা মাত্র এক লিটার রাসায়নিক মেডিসিন ব্যবহার করেই ধোঁয়ার সাহায্যে মশা নিধন করা যায় এসব মেশিন দিয়ে।

আজ এই পর্যন্তই। পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

7 Comments

মন্তব্য করুন