ইংরেজি শেখার গুরুত্ব আমরা কম-বেশি সবাই জানি।বিদেশে উচ্চশিক্ষা,বিসিএস,চাকরিসহ ক্যারিয়ার জীবনের প্রতিটি স্তরেই ইংরেজির প্রয়োজনীয়তা ব্যাপক।কিন্তু,কীভাবে ইংরেজি শেখার যাত্রাটাকে সহজ ও কার্যকর করা যায় তা নিয়ে আমাদের যেন দ্বিধা-দ্বন্দ্বের শেষ নেই।
সত্যি কথা বলতে,আমি যখন আমার ইংরেজি শেখার যাত্রাটা শুরু করেছিলাম তখন বহুবার আমাকে হতাশায় থাকতে হয়েছিল।এমনকি,বহুবার ইংরেজি শেখা শুরু করে ছেড়ে ও দিয়েছি।এরপর,ইংরেজি শেখার হ্যাক জানার জন্য বিভিন্ন জার্নাল নিয়ে ঘাটাঘাটি করা শুরু করি,যা আমাকে অনেক সাহায্য করে।আজ আমি তেমনই কিছু কার্যকরী কৌশল নিয়ে কথা বলব।আশা করছি,তা আপনারও কাজে দিবেঃ-
১.সঠিক পরিবেশ
একটি রিসার্চে জানা গেছে,জন্মের পর ছয় মাস পর্যন্ত একটা বাচ্চার আশপাশে যেসব ভাষায় কথা বলা হয় পরবর্তী জীবনে তার ঐসব ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা সহজ হয়ে যায়।এজন্য আমরা আমাদের মাতৃভাষায় এতটা দক্ষ হয়ে থাকি।এ পয়েন্টটা হয়তো সবার ভাগ্যে জুটবে না।কিন্তু আপনি যদি বাবা-মা হয়ে থাকেন এবং চান আপনার বাচ্চা ইংরেজিতে দক্ষ হোক তবে তার সামনে কোনো ইংরেজি কার্টুন বা ইউটিউব ভিডিও ছেড়ে রাখতে পারেন।এতে তার জন্য ইংরেজি শেখার একটি সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে,যা পরবর্তী জীবনে তাকে সাহায্য করবে।
এছাড়া,আপনি যদি আপনার পরিণত বয়সে এমন একটা জায়গায় চলে যান যেখানে বেচে থাকার জন্য আপনার ইংরেজি বলা লাগবে অর্থাৎ, ঐখানকার মানুষ যদি সাধারণত ইংরেজি ভাষায় তাদের কথা-বার্তা বলে থাকে তবে আপনার ব্রেন ভাষাটার প্রতি বেশি ফোকাস করে ও ইংরেজি শেখাটা আপনার জন্য দ্রুততর হয়।
আপনি যদি ইংরেজি মিডিয়াম অথবা ইংরেজি ভার্সন থেকে হয়ে থাকেন, এক্ষেত্রে ও আপনি ইংরেজি শেখার একটি সুন্দর পরিবেশ পান ও তখন ইংরেজি জানাটা কোনো ব্যাপার মনে হয় না।
এ তিনটি ক্ষেত্র যাদের ক্ষেত্রে ফলবে না তারা যে ইংরেজি শিখতে পারবে না তা কিন্তু নয়।নিচে এমন কিছু টপিক নিয়ে কথা বলছি যেগুলো মনোযোগ দিয়ে ফলো করলে উপরোক্ত পরিবেশ না পেয়েও আপনি ইংরেজিতে দক্ষ হতে বাধ্য-
২.দীর্ঘস্থায়ী লক্ষ্য নির্ধারণ করুন
ইংরেজি শেখা শুরু করার আগে একটিবার নিজেকে জিজ্ঞেস করুন কেন আপনি ইংরেজি শিখতে চান। এ কারণটা হতে পারে IELTS বা TOEFLE এর জন্য,চাকরি ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য বা আরো কারণ থাকতে পারে।অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট কারণ বের করুন,ইংরেজি শেখা কেন আপনার জন্য দরকারী?এরকম যদি কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য না থাকে তবে আপনার ইংরেজি শেখার মোটিভেশনটা আসবে না ও দেখা যাবে দুদিন অনুশীলন করতে না করতেই ইংরেজি শেখার ইচ্ছাটা আপনার মাথা থেকে সরে গেছে।তাই,চেষ্টা করুন একটি দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা করতে।
৩.প্রতিদিন অনুশীলন করুন
ইংরেজি শেখার জন্য প্রতিদিন আপনার একটা নির্দিষ্ট সময় বাজেট করা জরুরি।এ সময়টা হতে পারে ৩০-৬০মিনিটের মধ্যে। নিজের সামর্থ্য বিবেচনা করে সময় বাজেট করুন।খেয়াল রাখুন,প্রতিদিন যেন বেশি খাটনি খাটতে না হয়।নতুবা আপনার অনিহা সৃষ্টি হতে পারে।ধরুন,আপনি প্রথম ১০/২০মিনিট রাখলেন ভোকাবুলারি ও গ্রামার রুলস এর জন্য।বাকি সময়টা একটা ইংরেজি মুভি দেখে বা গান শুনে কাটালেন, যেটা আপনাকে আনন্দ দেয়।এভাবে ইংরেজি শেখার একটি প্রবাহ সৃষ্টি করতে পারেন এবং দেখবেন আপনার দক্ষতা ও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৪.একটি কমিউনিটি সৃষ্টি করুন
ইংরেজি শেখার যাত্রাটায় যদি আপনি একা হন তবে ব্যাপারটা খুবই বিরক্তিকর ঠেকতে পারে।তাই,চেষ্টা করুন,ঐসব মানুষজনকে নিয়ে একটা গ্রুপ বা কমিউনিটি খুলতে যারা আপনার সাথে একই যাত্রা দিয়ে যাচ্ছে ও তারাও তাদের জীবনে ইংরেজি শেখা নিয়ে আগ্রহী।এতে হবে কি,আপনারা ইংরেজিতে গ্রুপ চ্যাট করে,ইংরেজিতে কথা বলে কিংবা একে অপরকে অনুপ্রেরণা দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন এবং ইংরেজি শেখার যাত্রাটা আরো কার্যকর ও মজাদার হবে।
৫.ভুল করতে ভয় পাবেন না
ভুল সবাই করে। ভুলকে নেতিবাচক নয় বরং ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখুন। ভুলকে ভয় না করে,ভুল থেকে শিক্ষা নিন ও নিজের দক্ষতা বাড়ান।নিজের দক্ষতাকে পরীক্ষা করুন। একটা সময় পরে দেখবেন আপনার ভুলের মাত্রা কমে এসেছে এবং আপনার যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে।
৬.গ্রামারের উপর জোর দিন
কেউ যদি বলে,গ্রামার ছাড়া ইংরেজিতে দক্ষ হওয়া সম্ভব তবে তার কথায় কান দিবেন না।কারণ,ইংরেজিতে পুরোপুরি দক্ষ হওয়ার জন্য গ্রামার শেখার এতটুকু কষ্ট আপনাকে করতেই হবে।এটা ঠিক যে,গ্রামার ছাড়া ইংরেজি শেখা শুরু করা যায়।তবে,ইংরেজিতে পুরোপুরি দক্ষতা আনতে গ্রামার শেখার বিকল্প নেই।তাই,যত আগে পারেন,গ্রামার শিখতে কার্পণ্য ত্যাগ করুন।
৭.কিছু মিডিয়া যেগুলো আপনাকে সাহায্য করবে
এ পয়েন্টে আমি এমন কিছু মিডিয়া নিয়ে কথা বলব,যা আশা করি আপনার কাজে দেবে।প্রথমেই “Grammarly” এপসটার কথা বলতে চাই।অসাধারণ এ এপসটি ডাউনলোড করা থাকলে,আপনি ইংরেজিতে টাইপ করার সময় যতগুলো গ্রামাটিক্যাল ভুল করবেন তা এ এপসটি ধরিয়ে দেবে ও সাথে সাথে সমাধানও দিবে।
এছাড়া, আরো অনেক এপস আছে যেগুলোতে আপনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রতিদিন ইংরেজি অনুশীলন করতে পারবেন।যেমন- Cake,Busuu,dulogi ইত্যাদি।
এখন আসি ওয়েবসাইটের কথায়।এক্ষেত্রে,”Quara” নামক ওয়েবসাইটের কথায় সবচেয়ে বেশি বলতে চাই।এখানে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ইংরেজিতে প্রশ্ন করা ও উত্তর দেয়া হয়।এটা আপনার ইংরেজি পঠন(Reading) ও লিখন ( Writing) দক্ষতা বৃদ্ধি করবে।এছাড়া, শ্রবণ (Listening) দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ইউটিউব এ “Podcast”শুনতে পারেন।যেমন,জনপ্রিয় Podcast চ্যানেল”TED”.
৮.ধৈর্য ধরুন
ইংরেজি জানা এমন একটি দক্ষতা যা শিখতে আপনার ধৈর্য ও সময় উভয় লাগবে ও শেখার পর অনেক কাজে লাগবে।একদিনে যেমন আপনি একটি ভোকাবুলারি বইয়ের সব শব্দ মুখস্ত করে মনে রাখতে পারবেন না ঠিক তেমনই রাতারাতি ইংরেজি শিখে এতে দক্ষতা অর্জনও করতে পারবেন না।তাই,ধৈর্য ধরার মানসিকতা রাখুন।
৯.শেখার এ যাত্রাটি উপভোগ করুন
ইংরেজি শেখার যাত্রাটি এমন একটি দীর্ঘমেয়াদী যাত্রা,যেখানে আপনাকে ধৈর্য ধরে এক পা এক পা এগোতে হবে।এ যাত্রাটি যদি উপভোগ্য না হয় তবে তা আপনার জন্য বোঝাস্বরূপ মনে হতে পারে।তাই চেষ্টা করুন আনন্দের সাথে ইংরেজি শিখতে।কারণ,আনন্দের সাথে কিছু করলে তা বেশি কার্যকর হয়।
সর্বশেষ,এ কিছু টপিক কাজে লাগিয়ে এগিয়ে গেলে আপনার ইংরেজি শেখা জোরদার হবে বলে আশা রাখছি।সাথে আপনার এ ও মাথায় রাখতে হবে যে,ইংরেজির অংশ কিন্তু চারটি-শ্রবণ(Listening), পঠন(Reading),কথন( Speaking),লিখন(Writing)।আপনি ইংরেজি অডিও শুনলে আপনার শ্রবণ,বই পড়লে পঠন,ইংরেজিতে কথা বললে কথন ও ইংরেজিতে গ্রুপ চ্যাট করলে লিখন দক্ষতা বাড়বে।অতএব,এসব মাথায় রেখে এগিয়ে যান।
যদি পড়ে ভালো লেগে থাকে, তবে দয়া করে শেয়ার করুন এবং অবশ্যই কমেন্ট করতে ভুলবেন না।এটা আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা দেয়।সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেষ করছি।