আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আনেক ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে একটি নতুন টপিক নিয়ে হাজির হয়েছি। তো আজকে আমি আপনাদের সাথে একদম ভিন্ন ধরণের একটি টপিক নয়ে কথা বলব। আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি আপনার রকেট একাউন্ট হ্যাক হলে করণীয় এবং ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট হ্যাক হলে করণীয়।
রকেট কি?
রকেট হলো ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি মোবাইল ব্যাংকিং আ্যপ। এটি যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এই আ্যপটি ২০১৯ সালের ১৩ই ডিসেম্বর রিলিজ করা হয়। বর্তমানে প্লে স্টোরে এই আপটির ৫ মিলিয়ন বা ৫০ লক্ষেরও অধিক ডাউনলোড রয়েছে।
আমরা প্রায়ই রকেট বা এইসব মোবাইল ব্যাংকিং আ্যপ হ্যাক হওয়ার কথা শুনে থাকি। তো নিচে আমি বলতে যাচ্ছি কিভাবে এই একাউন্ট হ্যাক হয়, হ্যাক থেকে বাঁচতে করণীয় কি ও হ্যাক হয়ে গেলে করণীয় কি।
রকেট একাউন্ট কিভাবে হ্যাক হয়?
সত্যি কথা বলতে গেলে এই রকেট বা অন্য যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং আ্যপ হ্যাক হওয়ার জন্য আপ্নারা অর্থাৎ একাউন্টের মালিকরাই সম্পূর্ণভাবে দায়ী। তাদের বোকামি ও অসচেতনতার জন্য মূলত একাউন্ট হ্যাক হয়। ধরেন কোনো ব্যক্তি আপনাকে ফোন দিয়ে বলল আমি রকেটে চাকরি এবং আপনাকে জানাল যে আগামী ৩ ঘণ্টার মধ্যে পাসওয়ার্ড না দিলে আপনার একাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে এবং আপনি তাকে বিশ্বাস করে পাসওয়ার্ডটি দিয়ে দিলেন। ব্যাস!! কিংবা ধরেন আপনার মোবাইল সম্পর্কে ওরকম ভালো ধারণা নেই।
আপনি এক এজেন্টের কাছে গিয়ে মোবাইলটি দিয়ে পাসওয়ার্ডটি দিয়ে দিলেন। এখন সে ব্যক্তি চাইলে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করতে পারে ও সম্পূর্ণ একাউন্ট নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
এছাড়া এমনও হতে পারে যে আপনার নগদ একাউন্টটি আপনার খুব সহজ পাসওয়ার্ড দেওয়ার জন্য হ্যাক হয়েছে। কারণ আপনি যদি খুবই সহজ পাসওয়ার্ড দেন তাহলে হ্যাকার হয়তোবা কয়েক বার চেষ্টা করেই পাসওয়ার্ড মিলিয়ে ফেলাতে পারবে।
রকেট একাউন্ট হ্যাক থেকে বাঁচতে করণীয় কি?
হ্যাক থেকে বাঁচতে সবার আগেই করণীয় হচ্ছে সচেতন হওয়া। আপনি যদি সচেতনতা অবলম্বন কতেন তাহলে একাউন্ট হ্যাক হওয়ার সুযোগ কমে যায়।
১. প্রথমেই কোনো সময়েই আপনার ব্যক্তিগত বা গোপন তথ্য যেমন রকেট একাউন্টের পাসওয়ার্ড কারো সাথে শেয়ার করবেন না। কোনো ব্যক্তি আওনার কাছে জিজ্ঞাসা করলে কিংবা চাইলেও বলবেন না।
২. কোনো ব্যক্তি আপনাকে ফোন দিয়ে বলে সে রকেটে চাকরি করে এবং একাউন্ট লকের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পাসওয়ার্ড দিতে হবে কিংবা বলে যে আপনি লটারি জিতেছেন তাই আপনাকে একাউন্টের পাসওয়ার্ড দিতে হবে কিংবা তার একাউন্টে টাকা পাঠাতে হবে তাহলে বুঝে নিবেন যে এই ব্যক্তি নিশ্চই একজন প্রতারক আর সাথে সাথে ফোন রেখে নাম্বারটি ব্লক দিন আর পারলে রকেট কর্তৃপক্ষকে এর ব্যাপারে জানিয়ে দিন।
৩. অবশ্যই এজেন্টকে কখনো আপনার পাসওয়ার্ড বলবেন না। এজেন্ট যদি আপনার পাসওয়ার্ড জানে সে চাইলে আপনার একাউন্টে প্রবেশ করতে পারে এবং আপনার একাউন্ট নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে৷ আমি অনেক সময়ই দেখি বিভিন্ন ব্যক্তি একাউন্ট থেকে টাকা ক্যাশ আউটের সময় নিজের মোবাইলটি তার কাছে দিয়ে পাসওয়ার্ডটি বলে দেয়। এ কাজ ভুলেও করবেন না।
৪. সব সময় একাউন্টের জন্য একটি কঠিন পাসওয়ার্ড দিন। পাসওয়ার্ড যদি এরকম হয়ঃ ১১১২২২। তাহলে হ্যাকের সুযোগ বেড়ে যায় আর তাছাড়া পাসওয়ার্ডে একই সংখ্যা দুই বার ব্যবহার করবেন না। এতে একাউন্ট হ্যাকের সম্ভবনা অনেক কমে যায়।
রকেট একাউন্ট হ্যাক হলে করণীয়
ধরেন আপনার একাউন্ট হ্যাক হয়েই গিয়েছে অর্থাৎ আপনি আপনার পাসওয়ার্ড কাউকে দিয়ে দিয়েছেন এবং এখন আপনার একাউন্টে আপনি আর প্রবেশ করতে পারছেন না বা আপনার একাউন্ট থেকে টাকা অন্য একাউন্টে পাঠানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনার করণীয় কি?
প্রথমে আপনার একাউন্ট হ্যাকের কথা রকেট কর্তৃপক্ষকে জানান। তাদের সাপোর্ট কাস্টমার কেয়ার নাম্বার হচ্ছে ১৬২১৬। এই নাম্বারে ফোন দিয়ে হ্যাকের কথা জানালে তারা একটি অভিযোগ গ্রহণ করবে। যত দ্রুত আপনি তাদের জানাবেন তত আপনার একাউন্ট ও তার সব টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভবনা বেশি।
আপনি যদি প্রমাণ করতে পারেন আপনি এই একাউন্টের মালিক তাহলে তারা আপনার একাউন্টটি লক করে দিবে যাতে ওই হ্যাকার একাউন্টটি ব্যবহার না করতে পারে। কিংবা সে যে নাম্বারে টাকা পাঠাবে সে একাউন্টের টাকা ফ্রিজ করার ব্যবস্থা করে দিবে যাতে আর উত্তোলন না করতে পারেন।
উল্লেখ্য আপনি যত দেরি করবেন আপনার একাউন্ট ও টাকার ক্ষতি হওয়ার সুযোগ তত বেশি হয়ে যাবে। কারণ ধরেন হ্যাকার আপনার টাকাগুলো ক্যাশ আউট করল তাহলে রকেট কর্তৃপক্ষেরও আর কিছুই করার থাকবে না। তো আমরা রকেট একাউন্ট হ্যাক হলে করণীয় কি তা জানলাম এখন জানবো ব্যাংক একাউন্ট সম্পর্কে।
ডাচ বাংলা কিংবা যেকোনো ব্যংকের একাউন্ট হ্যাক কিভাবে হয়?
এক্ষেত্রেও একাউন্ট হ্যাকের জন্য আপনিই দায়ী। প্রথমে কোনো হ্যাকারের কাছে আপনার একাউন্ট হ্যাক হওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে ব্যাংকের আসল ওয়েবসাইটের মতো একটা ওয়েবসাইট তৈরি করা। এ ধরণের ওয়েবসাইটকে ফিসিং ওয়েবসাইট বলে। আপনি দেখবেন যে এই ওয়েবসাইটটি একদম আসল ওয়েবসাইটের মতো এমনকি ডোমেইন বা ওয়েবসাইটের নামও প্রায় কাছাকাছি হয়।
তো যখন আপনি এই ওয়েবসাইটে আপনি আপনার অনলাইন ব্যাংকিং এর ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিন তখন তারা আপনার সকল তথ্য নিয়ে নেয় ও আপনার একাউন্ট হ্যাক করে ফেলে।
তাছাড়া আপনার যদি মেসেজ আসে যে আপনি লটারি জিতেছেন কিংবা গাড়ি জিতেছেন তাহলে কখনো নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করবেন। এতে আপনার একাউন্টের কিংবা মোবাইলের ক্ষতি হতে পারে।
অনেক সময় ফেইক পেমেন্ট পেইজ তৈরির মাধ্যমেও একাউন্ট হ্যাক করা হয়। সেখানে আপনি আপনার একাউন্ট ডিটেইলস দেওয়ার সাথে সাথে আপনার একাউন্ট হ্যাক হয়ে যাবে। তাই সবসময় সাবধান থাকবেন।
ডাচ বাংলা কিংবা যেকোনো ব্যংকের একাউন্ট হ্যাক থেকে কিভাবে বাঁচবেন?
আমি আগেও বলেছি সব সময় সাবধানতা অবলম্বন করবেন।
কোনো সময়ে গুগলে ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং এর সাইট সার্চ করবেন না। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ফেইক ফিসিং সাইট শো করতে পারে৷ সবসময় ব্যাংকের দেওয়া লিংক থেকে সরাসরি প্রবেশ করবেন। আর সবসময় একটি কঠিন পাসওয়ার্ড নির্বাচন করবেন।
পেমেন্ট পেইজ বা পেমেন্ট প্রোসেসিং পেইজটির ক্ষেত্রে সাবধান হবেন৷ পেমেন্ট পেইজ হচ্ছে কোনো পেমেন্ট কনফার্ম করার আগে যেখানে আপনার একাউন্টের নাম, ক্রেডিট কার্ড নাম্বার দিতে হয় (সাধারণত CVC নয়)। সেখানে যদি দেখেন যে একটু অতিরিক্ত তথ্য চাচ্ছে যেমন CVC কিংবা ইন্টারনেট ব্যাংকিং একাউন্টের পাসওয়ার্ড চাচ্ছে তাহলে সাথে সাথে ওই পেইজ কেটে দিন।
কোনো সময় আপনাকে ফোন দিয়ে যদি বলা হয় বা মেসেজ করা হয় যে আপনি লটারি জিতেছেন কিংবা কোনো গাড়ি জিতেছেন তাহলে মেসেজটি ইগনোর করুন এবং বার বার দিলে ডাচ বাংলা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান।
ডাচ বাংলা কিংবা যেকোনো ব্যংকের একাউন্ট হ্যাক হলে করণীয় কি?
আপনার একাউন্ট হ্যাক হলে সর্বপ্রথমেই আপনার নিকটস্থ ব্যাংক ব্রাঞ্চ এসে অভিযোগ দায়ের করুন কিংবা তাদের হেল্পলাইন নাম্বার ১৬২১৬ নাম্বারে ফোন করুন। যত দ্রুত করবেন তত একাউন্ট বাঁচানোর সুযোগ বেশি।
তার পাশাপাশি আপনি আপনার ডাচ বাংলার ইন্টারনেট ব্যাংকিং এর পাসওয়ার্ডটি পরিবর্তন করুন কিংবা ইন্টারনেট ব্যাংকিং একাউন্টটি বন্ধ করে দিন। তার পাশাপাশি আপনার একাউন্ট থেকে সব টাকাগুলো উঠিয়ে নিন। যাতে হ্যাকার কোনো টাকা চুরি করতে না পারে।
তো রকেট বা ডাচ বাংলা ব্যাংক একাউন্ট হ্যাকের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রথমেই সাবধান হতে হবে। কোনো সময় কাউকে আপনার পাসওয়ার্ড দিবেন না। তাছাড়া একাউন্ট হ্যাক হলে যত দ্রুত সম্ভব তাদের হেল্পলাইন নাম্বারে ফোন দিয়ে তাদের এ ব্যাপারে জানিয়ে দিন।
তো আজকের জন্য এতটুকুই। পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আবার কয়েকদিন পর আপনাদের সামনে নতুন কোনো পোস্ট নিয়ে হাজির হব। ততদিন পর্যন্ত ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন সেই কামনায় আজকের জন্য বিদায় জানাচ্ছি। গ্রাথোরের সঙ্গেই থাকুন গ্রাথোরের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত থাকুন।