রাগ /ক্রোধ কি এবং এই সময় করণীয়–

রাগ /ক্রোধ কি এবং এই সময় করণীয়–
_________________________________________=====_____=_=============_____

রাগ মানুষের জন্য খুবই ক্ষতিকর, এর থেকে বেচে থাকা একান্ত জরুরী । তাহলে চলুন আমরা এই রাগ সম্পর্কে ইসলামের যে বিধিবিধান রয়েছে ,সেগুলো জেনে আসি —

স্বীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়া বা কারো দ্বারা তিরোস্কৃত হওয়ার কারণে প্রতিশোধ গ্রহণের ইচ্ছায় মানুষের মনের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় তাকে ক্রোধ বলে। অহংকার, তিরস্কার, ঝগড়া প্রভৃতি কারণে ক্রোধের সৃষ্টি হয়।

  ক্রোধ ও রাগের ফলে মানুষ অনেক নির্দয় ও অত্যাচারমুলক কর্মকাণ্ড করে ফেলে। পরবর্তীতে এর কারণে লজ্জিত ও অবজ্ঞার পাত্রে পরিণত হয়।তাই মুসলমানদের উচিত ক্রোধের সময় নিজেকে সংবরণ করা।এ বিষয়ে মহানবী( সা)বলেন,
শক্তিশালী সেই ব্যক্তি নয়,যে খুব কুস্তি লড়তে পারে। বরং প্রকৃত শক্তিশালী হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে ক্রোধেরর সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে।(বুখারি ও মুসলিম)

  অপকারীতা
_______________

ক্রোধ একটি নিন্দনীয় বিষয়। এটি মানুষের মধ্যে ঝগড়া -বিবাদ ও হিংসা -বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। আর হিংসা মানুষেরর সৎকর্মগুলোকে নষ্ট করে দেয়।রাগের সময় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকেনা। সে নিজেকে সংযত রাখতে পারেনা।রাগ মানুষের ঈমান ধ্বংস করে দেয়।
এ সম্পর্কে মহানবী (সা)বলেন,সিরকা যভাবে মধুকে বিনাশ করে, ঠিক সেভাবেই রাগ মানুষের ঈমানকে নষ্ট করে। (বায়হাকি)
রাগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আল্লাহর গজব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।সাহাবী হযরত উমর( রা) রাসুলুল্লাহ (স) এর কাছে জানতে চাইলেন, এমন কোনো কাজ আছে যা আল্লাহর গযব থেকে রক্ষা করবে? রাসুল (স) বলেন, তুমি রাগ করবেনা।(তাবারানি)
রাগ সংবরণ করা একটি পুণ্যের কাজ। এক সাহাবী একবার রাসুল(স)কে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি আমাকে একটি ভালো কাজের নির্দেশ দিন। প্রিয় নবী (স)তাকে বললেন, তুমি রাগ করবেনা।(বুখারী)

মহানবী (সা)বলেছেন, রাগ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে,শশতান আগুনের তৈরী।আর আগুনকে পানি ঠাণ্ডা করে।যদি কারো রাগ হয়, তবে তার উচিত ওযু করে নেওয়া। (বুখারীও মুসলিম)

হিংসা কি?
অন্যের সুখ -সম্পদ, মানসম্মান নষ্ট হওয়ার কামনা এবং নিজে এর মালিক হওয়ার বাসনা করাকে হিংসা
বলে।

হিংসার অপকারীতাঃ-
হিংসা একটি মারাত্মক ব্যাধি। হিংসা বহু কারণে সৃষ্টি  হয়। যেমন -শত্রুতা, লোভ, অহংকার, নিজের অসৎ উদ্দেশ্য নষ্ট হওয়ার আশংকা, নেতৃত্বের লোভ ইত্যাদি । এসব কারণে এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির প্রতি হিংসা -বিদ্বেষ করে থাকে।ইসলামে এ কাজ গুলোকে হাীাম ঘোষণা করেছে।হিংসার অপকারীতা সীমাহীন। হযরত আদম (আ) এর মর্যাদা দেখে ইবলিস তাী প্রতি  হিংসা করে, ফলে সে অভিশপ্ত হয়।আল্লাহর দয়া থেকে বঞ্চিত হয়।

মানব সৃষ্টির পর হিংসার কারনে সর্ব প্রথম  পাপ সংঘটিত হয়।আদম( আ)
এর পুত্র কাবিল হিংসার বশবর্তী হয়ে তার আপন ভাই হাবিলকে হত্যা করে। হিংসা মানুষের ভালো কাজগুলোকে ধ্বংস করে দেয়।এ সম্পর্কে মহানবী (সা) বলেন,

     আগুন যেমন শুকনা কাঠকে জ্বালিয়ে ছাই করে দেয়, হিংসা তেমনি পুণ্যকে ধ্বংস করে দেয়।(ইবনে মাজাহ)

হিংসা মানুষের শান্তি বিনষ্ট করে। মনে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে রাখে। হিংসুক ব্যক্তি আল্লাহ এবং মানুষের কাছে ঘৃণিত।কেউ তাকে ভালোবাসেনা, কেউ তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহন করেনা, সমাজের লোকের তাকে এড়িয়ে চলে। হিংসা সমাজে ঝগড়া- ফাসাদ,মারামারি এবং অশান্তির সৃষ্টি করে।মানুষের মনে অহংকার সৃষ্টি  করে, আর অহংকার মানুষের পতন ঘটায়।

  আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে
হিংসা থেকে বেচে থাকার শিক্ষা দিয়েছেন।মহান আল্লাহ বলেন,
“আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই যখন সে হিংসা করে”।(সুরা আল ফালাক,আয়াত ৫)

  আল্লাহ তাআলা হিংসা বর্জন কারীকে ভালোবাসেন। হিংসা বর্জন কারী জান্নাত লাভ করবেন। প্রিয় নবী একবার এক সাহাবি কে জান্নাতি বলে ঘোষণা করেন। তিনি কি আমল করেন এ সম্পর্ক  জানতে চাওয়া হলে, তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা যাকে কোনো উত্তম বস্তু দান করেছেন আমি তার প্রতি কখোনই হিংসা পোষন করিনা। (ইবনে মাজাহ)

আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত, “আমরা হিংসা করবোনা। নিজের ক্ষতি করবোনা। সমাজের শান্তি বিনষ্ট করবোনা।

     লেখক
ফারজানা এনজেল মায়া

Related Posts