শিক্ষকদের একটু সম্মান করুন

 

আমাদের দেশে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, ‘ প্রাইমারি স্কুলের চাকরি মানেই আরামের চাকরি। শিক্ষকরা আসে আর যায়।’

আমিও আগে তাই ভাবতাম। ইস, স্যারদের কত্তো আরাম!!

কিন্তু এখন আমি বুঝছি। যতটা আরামের চাকরি মনে হয় ঠিক ততটা নয়। আমার মতে পৃথিবীর কষ্টকর চাকরিগুলোর একটি হলো প্রাইমারি স্কুলের চাকরি।

কারণ আপনি যতক্ষণ স্কুলে থাকবেন ঠিক ততক্ষণই আপনাকে কিছু না কিছু করতে হবে। প্রতিদিন ৪-৫ টি ক্লাসের পাঠটীকা তৈরি, শিক্ষোপকরণ তৈরি, হাজিরা খাতা ঠিক করা, দৈনিক শিক্ষার্থী উপস্থিতি রেজিস্টারে উঠানো, মাসে মাসে হোম ভিজিট, সহপাঠ বিতরণ, চারু ও কারু ক্লাস, সংগীত ও স্কাউট প্রভৃতি কাজ আপনাকে প্রতিদিনই করতে হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের ঝগড়া ও বিচার তো প্রতি মুহূর্তেই আছে। সেখানে আবার আপনি বিচার করবেন কিন্তু মারতে পারবেন না।
মাঝে মাঝে ছাত্র ছাত্রীর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারটাও দেখতে হয়। দু একজন তো কোনো কোনো দিন ক্লাসরুম নোংরা করে ফেলে। কখনো কখনো তাদের নাক পরিষ্কার করে দিতে হয়!!
হুম, প্রাইমারির চাকরি এতটাই আরামের যে সপ্তাহে ৫ দিন ৯-৪ টা আপনার স্কুলেই কাটাতে হয়।
আমাদের শিক্ষার প্রথম ভিত্তিটাই গড়ে ওঠে প্রাইমারি স্কুলে। আজ যিনি দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনিও একদিন প্রাইমারিতে পড়েছেন। আমাদের জীবনে সফলতার পেছনে এই প্রাইমারি স্কুলের অবদান কী কেউ অস্বীকার করতে পারবে? এখান থেকেই আমার নীতি ও নৈতিকতার শিক্ষা পেয়ে থাকি। এই নীতি ও নৈতিকতার আদর্শে আমরা যখন সফলতার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠি তখন আমরা আমাদের এই শিকড়কে ভুলে যাই। আমরা ভুলে যাই আমাদের প্রিয় শিক্ষকদের। অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করি তাদের। অবজ্ঞা ও উপেক্ষা প্রাইমারি শিক্ষকদের প্রতি পদে পদে লেখা আছে। বড় কোনো অনুষ্ঠানে প্রাইমারি শিক্ষকদের কথা বলে না কোনো সাবপক ছাত্র। কোনো অনুষ্ঠানে গেলে শিক্ষকদের বসবার জায়গার অভাব পড়ে যায়। কোনো এলাকায় মন্ত্রী আসবে – সেখানেও প্রাইমারির শিক্ষকদের কাজে লাগে। অথচ, শিক্ষকরা তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকুও পান না। তারা কোথায় বসলো, কী খেল, সবাই এসেছে কিনা এসব ব্যাপার নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। দেখা যায়, নেতা কর্মী আর অতিথিদের খাওয়া শেষ। কিন্তু শিক্ষকরা সে দিক দিয়ে উপেক্ষিত।
বর্তমানে আমি একজন শিক্ষক। সরাসরি জড়িত হওয়ার কারণে আমি জানি যে এ চাকরি কতটা আরামের?
কোনো কাজে যদি সামান্য হেরফের হয় তবে আরামের চাকরি আমাদের কাছে হারাম হয়ে যায়।ফাইভ পাশ নেতা এসে যখন টেবিল চাপড়ে আমাদের ধমক দিয়ে কথা বলে যান, তখন আমাদের এই আরাম, হারাম হয়ে যায়।
বেতন তুলতে গেলে যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পরও চেকটা জমা হয় না অথচ অন্যরা আমাদের রেখে চলে যান তখন আমাদের আরাম, হারাম হয়ে যায়।

আমাদের সবসময় নিজের সম্মান আদায়ের জন্য অন্যের সাথে লড়াই করতে হয়। রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হয়। সরকারকে আমাদের বুঝাতে হয় যে, আমরাও মানুষ। আমাদের অন্যের মতো অধিকার আছে। আছে সম্মান।

তাই বলছি, প্রাইমারির এই চাকরি কে আরামের চাকরি বলার আগে শিক্ষকদের একটু সম্মান করার কথা চিন্তা করুন।

 

Related Posts

16 Comments

মন্তব্য করুন