ভার্সিটির প্রথম দিন যখন মেয়েটি ক্লাসে প্রবেশ করেছিলাে তখন মেয়েটিকে দেখে হাসিঠাট্টা করেনি এমন ছেলেমেয়ে ক্লাসে খুব কমই ছিলাে । কারণটা খুবই সাদাসিদে অর্থাৎ মেয়েটি ভীষণ
কালাে । আমার বন্ধু পাশ থেকে বলে উঠলাে , -দোস্ত ! এই মেয়ে ঢাকা ভার্সিটিতে চান্স পেলাে কীভাবে রে ? চেহারার কালারটা দেখছােস ? সবাই মেয়েটিকে
নিয়ে হাসিঠাট্টা করলেও
মেয়েটির মনের অবস্থা আমি খুব করেই বুঝতে পারতাম । তাই ওকে ধমক দিয়ে বললাম , -চেহারার সাথে চান্স পাবার কী সম্পর্ক ? যােগ্যতা ছিলাে তাই পেয়েছে । তাের এতাে গা জ্বলে
কেনাে ? আমার কথা শুনে ও একটি কথাই বলেছিলাে , -পছন্দ হয়েছে নাকি ? ওর পক্ষ নিচ্ছিস যে ? জবাবে আমি কিছুই বলিনি শুধু নিশ্ৰুপে পাশ কাটিয়ে চলে এসেছিলাম ওর
নিকট থেকে । প্রতিদিনই আমি দেখতাম মেয়েটি ক্লাসের লাষ্ট বেঞ্চে একা একা বসে আছে আর তাঁর পাশেই অন্যান্য মেয়েগুলাে গােলটেবিলের মতােই আড্ডা দিচ্ছে । আর
তাঁদের আড্ডার কেন্দ্রবিন্দুও ছিলাে মেয়েটি । কিছুক্ষণ পর পর তাঁদের মাঝ থেকে এক একজন মেয়েটির সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতাে আর পরক্ষণেই সবাই অট্টহাসিতে
ফেটে পরতাে । মেয়েটির মধ্যকর্ণে যে তাঁদের এই বিরূপ মন্তব্যগুলাে আঘাত করতাে না তা কিন্তু নয় । সবকিছুই সে শুনতাে কিন্তু তাঁর ধৈৰ্য্য শক্তি প্রভু এতােটাই প্রবল করে
দিয়েছিলাে যে প্রতিউত্তরে সে একটি টু শব্দও করতাে না বরং ব্যাগ থেকে একটি বই বের করে সেটার উপরেই চোখ স্থির করে রাখতাে । যেদিন ক্লাসের সবাইকে অবাক করে দিয়ে
ডিপার্টমেন্টের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিজিপিএ পেয়ে মেয়েটি প্রথম স্থান অধিকার করেছিলাে তখন সকলের মুখটা ক্ষাণিকটা ম্লান হয়ে গেলেও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে আমার মুখে
ছিলাে এক হাস্যোজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি । যারা তাঁকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করতাে তাঁদের মনেও কিছুটা পরিবর্তন সাধিত হয়েছিলাে । তাই বলে তাঁরা তখনাে থমকে যায়নি বরং
আড়ালে আবডালে প্রায়শই বলতাে , -এই নিগ্রোটা কীভাবে ফার্স্ট হয়ে গেলােরে ? ডিপার্টমেন্টের মানসম্মানটাইতাে খেয়ে দিলাে । আমার তখন তাঁদের সামনে যেয়ে খুব বলতে
ইচ্ছে করতাে , -তােমাদের এতাে গা জ্বলে কেনাে ? তাঁর যােগ্যতা ছিলাে তাই সে ফার্স্ট হয়েছে ।