দৈনন্দিন জীবনে আমাদের সবাইকেই কিছু না কিছু লিখতে হয়। ছাত্রছীবন থেকে শুরু করে চাকরিজীবন পর্যন্ত। আবার দেখা যায় আমরা আমাদের বন্ধু-বান্ধবদের কাছে ফেসবুকে, টুইটারে আরো অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে কিংবা ব্লগে পোস্ট অথবা চ্যাটিং করি । কিন্তু আমরা যদি আমাদের লেখার মধ্যে শুদ্ধ বানান প্রয়োগ করতে না পারি, তাহলে বন্ধুদের মাঝে নিজের যোগ্যতা নিয়ে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে। যদি আমরা প্রুফরিডিং সম্পর্কে জানতে পারি তাহলে আমরা আমাদের ব্যক্তিজীবনে এবং চাকরি জীবনে উভয়ক্ষেত্রেই সফলতা অর্জন করতে পারবো বলে আশা করি, ইনশাআল্লাহ। তাই আমাদেরকে শুদ্ধ বানান চর্চা করতে হবে। ভবিষ্যতের স্মার্ট ক্যারিয়ার গঠনে প্রুফরিডিং আমাদের জন্য সহায়ক হবে।
*নিম্নে প্রুফ রিডিং সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
প্রুফরিডিং-এর পরিচয়
প্রুফরিডিং হলো কোনো বই বা পা-লিপি মুদ্রণের পূর্বে ভুল সংশোধন করা।
এর জন্য আপনাকে বাংলা বানানের ওপর ভালো জ্ঞান রাখতে হবে।
বানান শুদ্ধতার প্রয়োজনীয়তা
কথার শুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য যেমন শুদ্ধ উচ্চারণ দরকার, তেমনি ভাষার শুদ্ধতা বজায় রাখান জন্য দরকার প্রমিত বানান। বানান সর্বদা সময়োপযোগী হয়ে থাকে। শব্দের প্রমিত বর্ণ বিশ্লেষণের লিখিত নিয়মই হলো বানান। সংস্কৃত ‘বর্ণন’ শব্দ থেকে ‘বানান’ শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ শব্দের মধ্যকার বর্ণসমূহের বিশ্লেষণ বা ক্রমিক বর্ণন (বর্ণ+অন)। শব্দ বিভিন্ন ভাষা থেকে আসে বলে বানান মনে রাখা কষ্টসাধ্য। বানান একটি পদ্ধতি, তাই সর্তকতার সাথে পাঠ করতে হয়। যেহেতু উচ্চারিত শব্দের লিখিত রূপই বানান, তাই শব্দের উচ্চারণ ও লিখিত রূপ এক হয় না। যেমন- কবি/কোবি, বধূ/বোধূ, স্বাগতম/ শাগোতোম, পদ্ম/পোদদো, আত্মা/আততা, সমাস/শমাশ ইত্যাদি। তবে প্রায় নির্দিষ্ট নিয়মের মাধ্যমেই এমনটি হয়ে থাকে। বাংলা বানানের নির্দিষ্ট রূপ দেওয়া যায় না বলে বানানকে ‘প্রমিত বানান’ বলা হয়। শব্দের উৎপত্তি, গঠন ও উচ্চারণ অনুসারে সময়োযোগী করে লিখিত বানানকে প্রমিত বানান বলে।
প্রুফের স্তরবিন্যাস
প্রুফকে সাধারণত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
১. গ্যালি প্রুফ
২. নির্ঘণ্ট প্রুফ
৩. প্রি-প্রেস প্রুফ
৪. প্রেস প্রুফ/এসপার-ওসপার প্রুফ।
১. গ্যালি প্রুফ : সম্পাদিত ‘র্য’ ফাইল-এর ওপরে প্রাথমিকভাবে যে প্রুফ দেখা হয় তাকে গ্যালি গ্রুফ বলে। এই প্রুফ-ই মূলত প্রথম প্রুফ। অনেকে এই প্রুফকে ফাউল প্রুফও বলে থাকে। সাধারণত তিনজনের দ্বারা এই প্রুফ সম্পাদিত হয়- লেখক, সম্পাদক ও প্রুফরিডার। ফাউল প্রুফের কপিটি সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।
২. নির্ঘণ্ট প্রুফ : প্রথম প্রুফ বা ফাউল প্রুফের পর দ্বিতীয় কাজটি হচ্ছে নির্ঘণ্ট প্রুফ। এই প্রুফ দেখা অত্যন্ত জরুরি। নির্ঘণ্ট প্রুফে প্রথম প্রুফ রিডারের প্রুফগুলোকে যাচাই-বাছাই করা হয়।
৩. প্রি-প্রেস প্রুফ : প্রেস উপযোগী করার জন্য যে প্রুফ দেখা হয়, তাকে প্রি-প্রেস প্রুফ বলে। সাধারণত এই প্রুফকে দ্বিতীয় প্রুফ হিসেবেও অভিহিত করা হয়। এ প্রুফের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো লক্ষণীয় তা হলো-
* বিষয়বস্তুর সম্পূর্ণতা
* শব্দের অবস্থান
* পৃষ্ঠাক্রম
* টাইটেল-সাবটাইটেল
* ইনার (বইয়ের ক্ষেত্রে)
৪. প্রেস প্রুফ/ এসপার-ওসপার প্রুফ : সর্বশেষ প্রুফ বা ফাইনাল প্রুফকেই প্রেস প্রুফ বলে। এই প্রুফের ক্ষেত্রে একটি কথা প্রচলিত আছে- ‘হয় এখন, নয়তো কখনো না।’ মূলত প্রেস থেকে একটি নমুনা কপি এনে এই প্রুফের কাজটি করা হয়। কিন্তু এটা ব্যয়সাপেক্ষ বিধায় আমরা প্রিন্ট বা পিডিএফ কপির মাধ্যমে এই প্রুফটি সম্পাদনা করে থাকি।
এখানে যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হয় তা হলো-
* অ্যালাইনমেন্ট
* রেফারেন্স
* টীকা
* মেকআপ
* ফিনিশিং ইত্যাদি।
* প্রকাশনা জগতে আরও একটি প্রুফের কাজ আবশ্যক। যথা : কভার প্রুফ বা জ্যাকেট প্রুফ।
এই প্রুফের লক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো-
* বই এবং লেখকের নাম
* লেখক, অনুবাদক পরিচিতি
* ফ্রন্ট ফ্ল্যাপ, ব্যাক ফ্ল্যাপ ইত্যাদি।
***প্রুফ সম্পর্কিত পোস্ট চলবে… দ্বিতীয় পোস্ট খুব শীঘ্রই আসবে…