অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যুবাদের ইতিহাস গঠন

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

অবিশ্বাস্য,অকল্পনীয়, ভাবনাতীত!এই শব্দগুলোই ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে বিরাজ করছিলো যুব বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ এর পর।অনূর্ধ্ব -১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে সর্বাধিক বার  শিরোপা বিজয়ী ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে ১ম বারের মত শিরোপা জিতলো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব -১৯ দল।

৯ ই ফেব্রুয়ারি,২০২০।দিনটি বাঙালি ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে আনন্দের সহিত। জাতীয় দলের সাফল্য না হলেও যুব বিশ্বকাপের মত মঞ্চে বাংলাদেশের এমন সাফল্য কোনো অংশেই অগ্রাহ্য করার মত নয়।তাই প্রথমেই বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে জানাই শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন।

পোচেফস্ট্রুমের সেনওয়েস পার্কে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় ম্যাচ শুরু হয়।ম্যাচ শুরুতে টসে জিতে ফিল্ডিং এর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলি।ম্যাচের শুরু থেকেই ভালো বোলিং করে যাচ্ছিলেন যুব বোলাররা।দলীয় ৯ রানের মাথায় অভিষেক দাসের বলে মাহমুদুল হাসান জয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ২ রান করে আউট হন সাক্সেনা।১ ম পাওয়ারপ্লেতে মাত্র ২৩ রান তুলে ভারত।কিন্তু আস্তে আসতে রান সংগ্র করতে থাকে ভারতীয় ওপেনার জয়সওয়াল আর ভার্মা।দলীয় ১০৩ আর ব্যাক্তিগত ৩৮ রানে তানজিম সাকিব এর বলে শরিফুল ইসলামের হাতে ক্যাঁচ দিয়ে আউট হন ভার্মা।এর ১১ রান পরেই ৯ বলে ৭ রান করে আউট হন ভারতীয় অধিনায়ক প্রিয়াম।৪র্থ উইকেটে ৪২ রানের একটি পার্টনারশিপ গড়ে উঠে উইকেটকিপার যুরেল আর জয়স্বাল এর মাঝে।গত ম্যাচে সেঞ্চুরি করা জয়স্বল আরেকটি সেঞ্চুরির পথে যাচ্ছিল।কিন্তু দলীয় ১৫৬ রানের মাথায় ব্যাক্তিগত ৮৮ রানে তানজিদ হাসানের হাতে ক্যাঁচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন জয়স্বাল।এরপর চলে যুব বোলারদের দাপট। মিডল অর্ডারের ব্যার্থতায়  উইকেট পড়ে মাত্র ২১ রানে।শেষ ৬ ব্যাটসম্যানের শেষ ৭ উইকেট পড়ে মাত্র ২১ রানে ।বাংলাদেশের হতে পেসার অভিষেক দাস ৪০ রানে ৩ টি উইকেট নেন।তাছাড়া শরিফুল আর তানজিম সাকিব ২ টি করে আর স্পিনার রাকিবুল ১ টি উইকেট নেন।এভাবেই ৪৭.২ ওভারে ১৭৭ রানে অলআউট হয় ভারত অনূর্ধ্ব -১৯ দল।

ইনিংস ব্রেক শেষে ব্যাটিং এ নামে পারভেজ ইমন আর তানজীদ হাসান।১৭৮ রানের টার্গেট বাংলাদেশের তুখোড় ব্যাটসম্যানের সামনে আসলে তেমন কিছু না।কিন্তু ব্যাপারটা যখন ভারতের বিপক্ষে,তখন ব্যাপারটা আলাদা।তবে তা তেমন বুঝতে দেননি ওপেনার ইমন আর তানজিদ।ওপেনিং জুটিতে ৫০ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন তারা।তবে ব্যাক্তিগত ১৭ রানে বিষ্ণই এর বলে ক্যাঁচ দিয়ে আউট হন তানজিদ।পরের উইকেটে বাট করতে নামেন গত ম্যাচে সেঞ্চুরি করা মাহমুদুল হাসান জয়।কিন্তু সেই বিষ্ণই এর বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মাত্র ৮ রানে।এর পরে চলে বিষ্ণই তাণ্ডব।প্রথম ৫ ওভার এর স্পেলে বিষ্ণই নেন ১২ রানে ৪ উইকেট।আর বাংলাদেশের দলীয় রান ৬৫ তেই ৪ উইকেট পড়ে যায়।আর ওপেনার ইমন পায়ের ব্যাথায় মাঠ ছাড়েন।এরপর ম্যাচের হাল ধরতে আসেন অধিনায়ক আকবর আলি।৫ম ও ৬ষ্ঠ উইকেটে গুরুত্বপূর্ণ ২০ ও ২২ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন শামীম হাসান আর অভিষেক দাসের সাথে।দলীয় ১০৭ রানে দলের ৬টি উইকেট শেষ।জেতার সুযোগ থাকলেও খুব কম।কিন্তু বীর বেশে আবার ব্যাট করতে নামে ইনজুরি আক্রান্ত ইমন।৭ম উইকেটে দলের জন্য মহামূল্যবান ৪৩ রানের জুটি গড়েন আকবর আলীর সাথে।ব্যাক্তিগত ৪৭ রানে জয়স্বাল এর বলে আউট হয়ে ফেরেন ইমন।৩ উইকেটে আরো ৩৫ রান দরকার।হাতে আরো ১৮ ওভার বাকি।তখন যোগ্য অধিনায়ক এর মত হাল ধরেন আকবর আলি।রাকিবুল হাসান এর সাথে মিলে ধীরে ধীরে জয়ের দিকে এগোতে থাকেন তারা।এসময় দলীয় ১৬৫ রানে বৃষ্টি শুরু হয়।কতক্ষন পর বৃষ্টি কমলে ৪ ওভারে ৮ রান কমানো হয়।তখন টারগেট দাড়ায় ৪৬ ওভারে ১৭০।ব্যাটিং এ নেমে পরবর্তী ৮ বলেই জয়ের সীমানায় পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।ভারতের বিষ্ণই ৪ টি,সুশান্ত ২টি আর জয়স্বাল ১টি উইকেট নেন।

ইতিহাসে প্রথমবারের মত অনূর্ধ্ব-১৯ এর শিরোপা জিতে বিশ্বের কাছে নিজেদের অস্তিত্বের কথা জানায় বাংলাদেশ যুবারা।৩ উইকেটের এই কষ্টের জয়ে পুরো দেশকে আনন্দে ভাসিয়ে তোলে তারা।ম্যাচ শেষে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ এর পুরস্কার পান অধিনায়ক আকবর আলি।ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্ট এর পুরস্কার যেতেন ভারতের জয়সওয়াল।
এমন অসাধারণ সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ দলকে জানাই শুভেচ্ছা এর অভিনন্দন।

ধন্যবাদ।

Related Posts

8 Comments

মন্তব্য করুন