আদালতে আইনজীবীরা কালো পোষাক পড়েন কেন? জানলে আশ্চর্য হয়ে যাবেন!

বাংলাদেশে আইনজীবী রা কোর্টে যারা আইনের সাথে সম্পর্কিত অর্থার বিচার পতিদের সব সময় কালো কোট এবং গাউন পড়ে দেখা যায়। আমরা ছোট বেলা থেকে এমনটা ই দেখে অভ্যাস্থ। কিন্তু কখনো কি আপনার মনে প্রশ্ন জেগেছে কেন আইনজীবী ও বিচারপতি রা কালো কোট ও গাউন পড়েন? কেন তাদের এ পোষাক ছাড়া সেখানে দেখা যায় না?

বাংলাদেশ সহ অনেক দেশে বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোতে এ কালো কোট ও গাউনের সাথে আইনজীবী দের কি সম্পর্ক তা জানতে হলে আপনাকে ফিরে যেতে হবে আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগের সময়। যেখান থেকে আসলে শুরু এই কালো কোট ও গাউন পড়ার প্রচলন।

আমরা জানি যে আমাদের বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সমুহ যেমন ভারত, পাকিস্তান, বার্মা, শ্রী লংকা সহ অনেক দেশ ব্রিটিশ উপনিবেশিক এর অন্তর্ভুত ছিল। মূলত আমাদের দেশের অনেক কালচার সেই ব্রিটিষদের হাত ধরেই এসেছে এ দেশে। এ ঘটনাটি ও ঠিক তাদের দ্বারা এ দেশকে স্বাশন করা ই ফল। এর সাথে সুসম্পর্ক বা লয়ালিটির কোনো সম্পর্ক নেই। অনেকে হয়ত জেনে থাকতে পারেন যে কালো কোট ও গাউন সুসম্পর্ক বা সুবিচারের প্রতিক। বিষয়টি আসলে তা নয়।

মূল কারণ জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ব্রিটিষ রাজ্যে। তখন ১৬৮৫ সাল। ইংল্যান্ডে রাজা দ্বিতীয় চার্লস ১৬৮৫ সালে মারা যান। যার ফলে ব্রিটিশ উপনিবেশ এ নেমে আসে শোকের ছায়া। ফলে তার মৃত্যুর পর শোকের প্রকাশের স্মৃতির নিদর্শনের জন্য আদালতে আইনজীবী এবং বিচারপতিরা কালো কোট ও গাউন পরা শুরু করেন।

পরবর্তিতে যেহেতু ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের বাংলার নবাব সিরাজ উদ্দৌলা মারা যাবার পর বাংলা সহ পুরো ভারতবর্ষ শাষন করে ব্রিটিশরা সে থেকে তাদের কালচার গুলো মিশে যায় আমাদের দেশীয় কালচারের সাথে। এর সাথে অন্য কোনো বিষয় সম্পর্কিত নয়।

ব্রিটিশরা পরবর্তিতে সেটি কে আইনে পরিবর্তণ করেন ফলে কালো কোট ও কালো গাউন পড়া বর্তমান অবধী আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কেউ চাইলেও আদালতের এ আইন অমান্য করতে পারেন না।

ব্রিটিশ দের নিয়ম মেনেই দেশে এখনো এ বিষয়টি আমাদের দেশেও প্রচলিত রয়েছে। তাছাড়া এটি আইনজীবী ও বিচারকার্যে সংশ্লিষ্ট দের একটি ড্রেস কোড হিসেবেও ব্যবহার হয়। ফলে তাদের দেখলেই মানুষ বুঝতে পারে যে তারা আইনের কার্যের সাথে সম্পর্কিত। ফলে মানুষ তাদের আলাদা সম্মান করে।

এটি বাংলাদেশেও বর্তমানে আইন দ্বারা নির্দেশিত। কোট পরে আদালতে উপস্থিত হবার বিষয়টি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনে রয়েছে। যে কোন আইনজীবী চাইলেই তার নিজের ইচ্ছেমতো পোশাক পরে আদালতে উপস্থিত হতে পারবেন না। তাকে অবশ্যই আইনের সাথে সম্মান রেখে নিয়ম মেনে কালো কোট ও গাউন পড়েই আসতে হবে।

আবার আরো একটি কারণ রয়েছে যে, আদালত কক্ষে বাদী-বিবাদীসহ অনেকেই আসেন। সাদা শার্ট এবং কালো কোটের মাধ্যমে আইনজীবীদের অন্যদের চেয়ে পৃথক করা করা যায়।

তবে সব কিছুর মূলে প্রায় ৩৫০ বছর আগের ব্রিটিশদের নিয়মের নিমিত্তেই এটি চলে আসছে। হয়ত চলবে যতদিন পৃথিবী টিকে থাকবে।

Related Posts

11 Comments

    1. অল্প বিদ্যা ভয়ংকরী আর না জেনে মন্তব্য করা আরো বেশি ভয়ংকরী। শুধু সামাজিক বিজ্ঞানের ইতিহাসে আটকে থাকলে এসব জানবেন না, স্বাভাবিক। ব্রিটিশ উপনিবেশ বলতে শুধু বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান নয় এটা সম্ভবত জানেনই না।

      ব্রিটিশদের উপনিবেশ অর্থাৎ অন্য দেশ দখল ও বাণিজ্য বিস্তৃতির শুরু ১৬ শতকের শেষ দিকে এবং যার শেষ হয় ১৮ শতকে। ১৯২২ সালের দিকে তারা তাদের সাম্রাজ্যের পরিধী সর্বোচ্চ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়, যা পৃথিবীর চার ভাগের এক ভাগ।

      ১৬৮৫ সালের উপনিবেশ বলতে ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশ বুঝায় নি এ জ্ঞান টুকু পাঠকদের আছে ধরেই নিয়েছিলাম, কিন্তু দুঃখের বিষয় যে এটুকু জ্ঞানেরও অভাব রয়েছে। দুঃখ প্রকাশ আমিই করছি।

      এর পরে স্পষ্ট বলে দেওয়া আছে, ১৭৫৭ সালে যখন তারা ভারতবর্ষের ক্ষমতা দখলে নেন তখন থেকে এদেশেও এই নিয়ম চলে আসছে। কোথাও বলা নেই যে, ১৬৮৫ সালে ভারতবর্ষ ব্রিটিশ উপনিবেশের অন্তর্গত ছিল।

      ধন্যবাদ।

মন্তব্য করুন