আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ! ভিন্ন এক টপিক নিয়ে হাজির হয়েছি। এই যে আপনি আমি মোবাইল, কম্পিউটারসহ ইলেকট্রিক ডিভাইস ইউজ করতেছি; এবং দূরদেশে থেকে অন্যজনের সাথে কানেক্ট থাকতে পারছি এ সবই কিন্তু ইন্টারনেটের বদৌলতে সম্ভব হচ্ছে। ইন্টারনেট তো খুব আনন্দেই চালাচ্ছেন কিন্তু আপনি জানেন কি ইন্টারনেটের মালিক কে? এবং এটা কিভাবে উৎপন্ন হলো বা কিভাবে কাজ করে? ব্যাপারটা জানার জন্য আমিও খুব আগ্রহে ছিলাম কিন্তু, আমি জেনে ফেলেছি। এখন আমি আপনাদের জানাবো। অনেকে বিষয়টা জানেন, আবার অনেকে জানেন না। তো যারা জানেন না তাদের গ্রাথোরের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বিষয়টা খুব বিস্তারিত ভাবে জানানোর চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ্।
শুরুতেই আমরা জানবো ইন্টারনেট কি কাজে ব্যবহার হয়! আমরা থাকি দুনিয়ায়, তাই সাধারন ভাষায় এটাকে দুনিয়াবী জগত বলে। কিন্তু আপনি যখন মোবাইল অথবা কম্পিউটার – ল্যাপটপ ব্যবহার করবেন, তখন আপনার সামনে দুটো জগত থাকবে। অফলাইন আর অনলাইন। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট একটা মাধ্যম বা দরজা বা নদীতে থাকা এক নৌকা হতে পারে। দরজা বা নদীর এপাড় হলো অফলাইনের জগত আর ওপাড় হলো অনলাইনের জগত। কোনো এপ্স বা সফটওয়্যার অথবা যেকোনো ফাইল ডাউনলোডের ক্ষেত্রে অনলাইনে যেতে ইন্টারনেট ব্যবহার হয়। আপনার কাছে ইন্টারনেট আছে তো আপনি অনলাইনে যেতে পারবেন, নাহলে অফলাইনে থেকেই আফসোস করতে হবে। আরো সহজ ভাবে বলতে গেলে নদীর এপাড় আপনার বাসা আর নদীর ওপাড় আপনার আত্মীয়ের বাসা। ওপাড় যেতে হলে নদী ভেদ করতে হবে, আবার নদী ভেদ করতে হলে নৌকার প্রয়োজন হবে। নৌকা আছে তো ঠিক আছে, সাঁতার দিয়েও যেতে পারবেন তবে পরিশ্রম বেশি হবে। ঠিক তদ্রুপ ব্রডব্যান্ডে থেকে আপনি আনলিমিটেড ইন্টারনেট ইউজ করতে পারবেন, সিম কোম্পানি থেকে ইন্টারনেট কিনেও চালাতে পারবেন তবে খরচ বেশি হবে এবং এটা আনলিমিটেড নয়।
অনেক তো বলে ফেললাম এবার আসুন ইন্টারনেটের মালিককে খুঁজে বের করি। এক কথায় বলতে গেলে ইন্টারনেটের কোনো মালিক নেই, আবার ভিন্নভাবে বলতে গেলে ইন্টারনেটের মালিক আপনি নিজে। লেখাটা পড়ে হয়তো এতক্ষণে আশ্চর্যবোধ করেছেন! বলা বাহুল্য যে, কিছু নিয়ম নীতি মেনেই ইন্টারনেট পরিচালিত হয়। এবং সেই নিয়ম নীতিকে ইন্টারনেটের ভাষায় প্রটোকল বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, আপনার অফিসের কর্মীরা নিয়ম নীতি না থাকায় ঠিকমতো কাজ করছে না। যে যার মতো কাজ করছে, কোনো শৃঙ্খলা নেই। এখন আপনি কর্মীদের জন্য কিছু নিয়ম নীতি তৈরী করলেন। যারা মানবে তারা ঠিক আছে, আর যারা মানবে না তারা ছিটকে যাবে। ঠিক তদ্রুপ ইন্টারনেটও কিছু নিয়ম নীতির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। যাকে এক কথায় প্রটোকল বলা হয়।
আর প্রটোকল একাধিক ডিভাইসের প্রকৃতি নির্ধারন, বাস্তবায়ন এবং যোগ সমন্বয়কে বলা হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে আপনারা কয়েকজন কনফারেন্সিং এ মিটিঙ্গের মাধ্যমে কোম্পানির ভালো মন্দ নিয়ে আলোচনা করছেন। এটাও এক প্রকার প্রটোকল। এবং প্রটোকলের যাবতীয় নির্ভর করে রাউটার পরিকাঠামো, নেটোয়ার্ক একসেস পয়েন্ট (NAP), এবং কম্পিটার সিস্টেমের উপর। এরপর কৃত্রিম উপগ্রহ তথা স্যাটেলাইটের সাহায্যে নেটওয়ার্ক একসেস প্রেরণের মাধ্যমে ছড়িয়ে যাচ্ছে সকলের দ্বারে দ্বারে। হাজার হাজার মাইলের পর মাইল। দেশের পর দেশ বিস্তৃত ফাইবার অপটিকালে লুকানো ক্যাবল এবং ওয়্যারলেস রাউটার। যে ফিজিক্যাল নেটওয়ার্ক বিভিন্ন কম্পিউটারে ইন্টারনেট পরিবহন করে তাকে ইন্টারনেটের মেরুদণ্ড বলা হয়। অতীতে আরপানেট সিস্টেমকে মেরুদণ্ড বলা হত, কিন্তু এখন বিভিন্ন কোম্পানি ক্যাবল এবং ওয়্যারলেস রাউটারের সমন্বয়কে মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে থাকে। এবং এই কোম্পানিগুলোকেই Internet Service Provider (ISP) তথা ইন্টারনেট সেবাদানকারী বলে।
বিশ্বের কোনো দেশের বা কারো নিজের প্রয়োজনে ইন্টারনেট দরকার হলে এই ইন্টারনেট সেবাদানকারীদের (ISP) দ্বারস্থ হতে হবে। বিশ্বের কিছু বড় বড় (ISP) ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের থেকে ছোট ISP ইন্টারনেট সেবাদানকারী উৎপন্ন হয়। সেগুলো হলো, UUNET, Level 3 Communications, Verizon, AT&T, Sprint Corporation এবং ইত্যাদি। এই বড় বড় ISP থেকে যে ছোট ছোট ISP উৎপন্ন হয়েছে, সেগুলো আপনার আমার ব্রডব্যান্ড কানেকশন এবং দেশের সকল সিম কোম্পানিগুলো যারা আমাদের সেবা দিয়ে থাকে। ইন্টারনেটের নির্দিষ্ট কোনো মালিক নেই, যার অংশে যা পরেছে সে সেই অংশের মালিক। Internet eXchange Point (IXP) কম্পিউটার থেকে কম্পিউটার তথ্য আদান – প্রদান করে থাকে, এবং এসব কিছু কোম্পানি ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রন করে থাকে। আলাদা আলাদা ISP ইন্টারনেট সেবাদানকারীদের আলাদা আলাদা ইন্টারনেট থাকে। এখন আপনি যদি কম্পিউটারের সাহায্যে সেই ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হোন তাহলে আপনি ইন্টারনেটের একটা অংশের মালিক।