জীবনের সময় কালটা অতীব ছোট। ছোট্ট জীবনের একটি বড় অংশই আমাদের পড়াশোনা করেই কাটাতে হয়। পড়াশোনা শেষ করে আমরা কর্মজীবনের সফলতার জন্য দৌড়ঝাঁপ দিই। সকল পড়াশোনা, প্রস্তুতি ও আয়োজন এই ক্যারিয়ারের জন্যই। তবে এটাও জানতে হবে, শিক্ষা অর্জন শুধু কর্মসংস্থানকে উজ্জ্বল করার জন্য নয়।
অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয়, আপনি যে বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য কিন্তু পেশাগত জীবনে সে পেশায় আসেন না। আসলে মূল বিষয়টা হলো, বর্তমানে মানুষের প্রয়োগ করার দক্ষতা পড়াশোনার উপর নির্ভর করে না। এটা নির্ভর করে সময়ভেদে আপনার কাজের উপর। এ সবগুলো বিষয়ই নির্ভরশীল আপনি আপনার ক্যারিয়ার গঠনে কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
আজকের আলোচনা থেকে জানতে পারবেন সফল ক্যারিয়ার গঠনে কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিবেন। তবে চলুন প্রিয় পাঠক, আর দেরী না করে আজকের চমৎকার এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করি।
নিজের জীবনের ক্যারিয়ারটাকে সফলভাবে গড়ে তোলার জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ:
১। নিজের পেশাকে গুরুত্ব দিন।
২। জানার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দিন।
৩। সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন।
৪। আপনার উপর অর্পিত কাজ সততার সাথে চালিয়ে যান।
৫। নিজের কাজে পরিশ্রমী হউন।
৬। উচ্চাকাঙ্খা লালন করুন।
৭। শিখুন এবং প্রতিদিনই শিখুন।
৮। ধৈর্যশীল হউন ও লেগে থাকুন।
১। নিজের পেশাকে গুরুত্ব দিন-
আপনি পেশা বদল করলেও যখন যে পেশায় থাকবেন সে পেশাকেই গুরুত্ব দিন। এ কথাটা এজন্য বললাম, অনেকেই আছেন যারা অল্প সময়ের জন্য চাকরি নেন আবার সেটা বদল করেন। আপনার জানা উচিত বর্তমানে আপনি যে পেশায় সে পেশায়ও ক্যারিয়ার সফলভাবে গড়া সম্ভব যদি আপনি গুরুত্ব দেন। যেকোনো পেশায় গুরুত্ব দেওয়াটা এক সময় অভ্যাসে পরিনত হবে। গুরুত্ব দিলে যেন অনেক কিছু শিখতে পারবেন তেমনি আপনার সুনামও বাড়বে।
২। জানার আগ্রহকে আরও বাড়িয়ে দিন-
আপনি যে পেশায় আছেন সে ওেশার সব খুটিনাটি জানুন ও মেনে চলুন। এই অভ্যাস গড়ে তুললে আপনি সবার থেকে এগিয়ে যাবেন। অনেক চাকরিজীবী আছেন যারা অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে চুপচাপ থাকেন। এভাবে প্রমোশন পাওয়া যায় না। অফিসের অন্যান্য কর্মীদের কাজের ধারা, বসদের দৃষ্টিভঙ্গী, কর্মীদের চাহিদা সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে। এসব কিছু জানার পর বুঝতে পারবেন আপনাকে কোন কোন জায়গায় অন্যের চেয়ে ভালো করতে হবে।
৩। সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন-
আপনার কর্মক্ষেত্রে সিনিয়র, জুনিয়র, বস এমনকি পিয়ন পর্যন্ত সবার সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলুন। প্রমোশন তাদেরকেই দেয়া হয় যারা সবার সাথে মিলে চলতে পারে। অফিসের বসের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখুন। ভালো সম্পর্কের আড়ালে তোষামোদ করা থেকে বিরত থাকুন। ভালো ব্যবহার দিয়েই সবার মন জয় করুন।
৪। আপনার উপর অর্পিত কাজ সততার সাথে চালিয়ে যান-
কোনো কাজে আপনি একটু কম দক্ষ হতে পারেন কিন্তু সততার বিষয়ে কখনো আপোষ করবেন না। কারন, যে কোন ক্ষেত্রে সততা একটি অপরিহার্য গুন। অসৎ উপায়ে প্রথম দিজে ভাল করলেও পরে ঠিকই ধরা খেতে হয়। এমনকি আপনার ক্যারিয়ার পুরো হুমকির মুখে পড়বে। ভালোভাবে শেখা পর্যন্ত ধৈর্য ধরুন ও লেগে থাকুন। অন্যের সাহায্য নিন। অসৎ উপায়ে কিছু করবেন না। সততা আপনাকে ক্যারিয়ার গঠন সাহায্য করবে।
৫। নিজের কাজে পরিশ্রমী হউন-
কাজ শেষ করার বিষয়ে কাজের ধরনগত কিছু পার্থক্য আছে। দায়সারা কাজ ও সুষ্ঠুভাবে কাজ। দায়সারা হয়ে কাজ সম্পন্ন না করে সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গভাবে করুন। এতে প্রতিষ্ঠান আপনার কাজের উপর খুশি থাকবে। কর্মক্ষেত্রে আপনার প্রমোশন পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবলভাবে বেড়ে যাবে। সকলের আস্থা আসবে আপনার উপর। পরিশ্রম দিয়ে সব জয় করা যায়। তাই কাজে পরিশ্রমী হউন।
৬। উচ্চাকাঙ্খা লালন করুন-
যেকোন ক্যারিয়ারের উন্নতি তার আকাঙ্খার উপর নির্ভর করে। নিজেকে উচ্চপদে দেখতে চাইলে আরও বেশি কাজ করুন। আরও ন্যায়নিষ্ঠ হউন। উচ্চাকাঙ্খা ছাড়া উন্নতিও আসবে না। উচ্চাকাঙ্খা ছাড়া বাড়তি কাজ করার আগ্রহও আসে না।
৭। শিখুন এবং প্রতিদিন শিখুন-
নিজের কাজের যোগ্যতা, দক্ষতা ও কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে চাইলে প্রতিদিনই নতুন কিছু না কিছু শিখুন। তথ্য প্রযুক্তি নিয়তই পরিবর্তনশীল। এগুলো নিয়মিত শেখা প্রয়োজন। অন্যের থেকে বেশী জানলে উন্নতিও হবে বেশি। এমনকি আপনার কাজগুলোও সহজ মনে হবে। আপনি সবার চেয়ে বেশী জানলে আপনার বিষয়েও সবার জানার আগ্রহ বাড়বে। তখন সবাই আপনাকে যোগ্য কর্মী বলে বিবেচিত করবে যেখানে আপনার উন্নতির সম্ভাবনা বেশি।
৮। ধৈর্যশীল হউন ও লেগে থাকুন-
ধৈর্য ধরে লেগে থাকলে সফলতা আসবেই।অনেকেই আছেন যারা ক্যারিয়ারে যথাযথ উন্নতি না পেয়ে অধৈর্য হয়ে যান। ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে এটা একেবারেই ঠিক নয়। যেকোনো কাজেই ধৈর্য থাকতে হবে। সর্বাবস্থায় কাজের গতি ধরে রাখতে হবে। পরিশ্রম আর চেষ্টার উন্নতির চাবিকাঠি। যেকোনো ক্ষেত্রেই এর দ্বিতীয় কোন বিকল্প নেই। তাই একদমই ধৈর্য হারা হওয়া যাবে না।
উপসংহারঃ
ক্যারিয়ার গঠনের মূল শর্ত হলো নিজ নিজ পেশায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করা। কাজের পাশাপাশি উচ্চাকাঙ্খা ও ধৈর্যও থাকতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে সকল গুনের সমন্বয় ঘটিয়ে কাজ করতে হবে। সঠিক সমন্বয় থাকলেই দ্রুত উন্নয়ন করা সম্ভব। ক্যারিয়ার গঠনে কোন বিষয়ে কতটুকু গুরুত্ব দেবেন সেটা আশা করি বুঝতে পেরেছেন।আজকে এখানেই শেষ করছি।
পোষ্টটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।