আবার কবে হুইসেল বাজবে রমনা লোকালের?

২০২০ সালের ৮ মার্চ । চিলমারীর রমনা স্টেশন থেকে ছেড়ে দেয় রমনা লোকাল। গন্তব্য পার্বতীপুর। ট্রেনটি ফিরবে আবার যাবে এমনটাই কথা থাকলেও ঐ যে পার্বতীপুর চলে গেল আর ফিরে আসল না। যাত্রীরা প্রতিক্ষায় আছে। ব্যবসায়ীরা মালামাল নিয়ে বসে আছে। ষ্টেশনে যে লোকটির টং দোকানে চা বিক্রি করে সেও খুলে বসে আছে। ফেরি নিয়ে ঘুরছে ফেরিওয়ালারা। না ট্রেনটি আসলই না। না আসার অন্যতম কারণ করোনাভাইরাস সংক্রমণ। শুধু কি তাই? করোনার কারণ হলেও অন্যান্য ট্রেনগুলোও ছাড়তো না। বন্ধ থাকতো রমনা লোকালের মতই। তাই এই কারণটা বাদ দিতেই পারি। তাহলে? স্টেশনমাস্টার, ড্রাইভার ও ইঞ্জিন স্বল্পতার অজুহাতসহ মাটিচাপা পড়া পাথরবিহীন লাইন, ভাঙা কাঠের স্লিপার, দুর্বল সিগন্যালিং। এখন প্রশ্ন থেকে যায় যে দেশে বেকারের সংখ্যা অগণিত সে দেশে স্টেশন মাস্টার ও ড্রাইভার স্বল্পতা হাসির খোরাক। বাকি থাকে মাটিচাপা পড়া পাথরবিহীন লাইন, ভাঙা কাঠের স্লিপার, দুর্বল সিগন্যালিং। আপনারা জেনে অবাক হবেন এই কাজগুলো করতে সারা বছর পরিশ্রম করে একদল দক্ষ কর্মী এবং এর পিছনে বাজেটও কম নয়। প্রশ্ন থেকে যায় রমনা লোকাল কার স্বার্থে বন্ধ? কেন বাজে না হুইসেল?

রমনা লোকাল বন্ধের ফলে চরম দূর্ভোগে পরেছে ৯ উপজেলার নিম্ন আয়ের সাধারণ যাত্রী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ট্রেন বন্ধ থাকার কারণে যাত্রীদের বাসে গুণতে হচ্ছে বেশি টাকা। যা তাদের জন্য কষ্টকর। অপরপক্ষে ব্যবসায়ীরা মালামাল ট্রাক, পিকআপ ভ্যান ও সিএনজি দিয়ে বেশি টাকা ব্যয় করে মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে। এর ফলে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও রমনা লোকাল বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পরেছে রেল কেন্দ্রীক পেশাজীবি ব্যক্তিরা। এর দায় কে নিবে?

১৯ আগস্ট থেকে করোনার কারণে দেশের বন্ধকৃত সকল ট্রেন চালু হলেও কুড়িগ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের একমাত্র বাহন ‘রমনা লোকাল’ ট্রেনটি এখনো চালু হয়নি। ২৫ আগষ্ট ২০২১ তারিখ সন্ধ্যায় রংপুর থেকে কুড়িগ্রামে আসা শাটল ট্রেনটি কিছুক্ষণ অবরোধ করে রমনা লোকাল ট্রেনটি চালুর দাবীতে মানববন্ধন করে টিম কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, রেল নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণকমিটি ও কুড়িগ্রাম জেলাবাসী ব্যানারসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। রমনা লোকাল চালু না হলে কঠোর আন্দোলনে নামার হুমকি দিলেও রেল কর্তৃপক্ষ নির্বাক।

ট্রেনটি কবে আবার যাতায়াত করবে এই নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই যাত্রীদের। এর আগে বলতো, দশটার ট্রেন কয়টায় যায় বাহে? আর এখন বলে, বাহে রমনা লোকাল কি মরছে? তারা প্রতিক্ষায় আছে। কবে আবার বেজে উঠবে রমনা লোকালের হুইসেল। আবার চাঞ্চল্য হবে স্টেশনগুলো।

১৯২৮ সালের ২ আগস্ট বন্দর নগরী চিলমারীর রমনা স্টেশন চালু হয়। যাত্রী সুবিধার জন্য রেলপথ চালুর পর পার্বতীপুর-রমনা রেলপথে সকালে ও সন্ধ্যায় ২টি এবং লালমনিরহাট-রমনা পথে দুপুরে ও রাতে ২টিসহ মোট ৪টি ট্রেন যাতায়াত করে। ২০০২ সালের দিকে হঠাৎ করে পার্বতীপুর-রমনা রুটে ১টি ও লালমনিরহাট-রমনা রেল পথের দুটি ট্রেনসহ মোট ৩টি ট্রেন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে একটি ট্রেন পার্বতীপুর-রমনা রুটে সকালে রমনা এসে তিস্তা গিয়ে ফের দুপুরের হয়ে চলাচল করছিল। গত ২০২০ সালের ৮ মার্চ এই একটি মাত্র রমনা লোকাল বন্ধ করার মধ্য দিয়েই কি চিরতরে বন্ধ করে দিল উত্তরের বোরাক রমনা লোকাল?

Related Posts

17 Comments

মন্তব্য করুন