“আম্মু, বাসায় থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছি। চলোনা কোনো জায়গা থেকে কিছুদিনের জন্য ঘুরে আসি!” কি মনে করে যেন আম্মুও হঠাৎ করে রাজি হয়ে গেল। আর রাজি হবে নাই বা কেন? ফাইনাল পরীক্ষার পর থেকে কোন জায়গায় যাওয়া হয়নি। এদিকে আমি আর ভাইয়া বাবাকে জোর করতে লাগলাম অফিস থেকে ছুটি নেওয়ার জন্য। বাবা কিছুতেই রাজি হতে চাননি। কিন্তু আমরাও নাছোড়বান্দা। সহজে ছাড়লাম না। অবশেষে আমাদের জ্বালায় বাবা অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এল। পরেই শুরু হয় আমাদের গোছগাছের পালা। সবকিছু গোছানো শেষ হলে ট্রেনের টিকেট কেটে ফেলা হয়। পরে একটা ভালো দিন দেখে আমরা রওনা দিলাম সিলেটের পথে। ট্রেনে উঠেই ঝটপট কয়েকটি ছবি তুলে নিলাম। এই প্রথম ট্রেনে করে যাচ্ছিলাম। ঠিক সময়ে ট্রেন ছেড়ে দিল। পুরো রাতটাই আমাদের ট্রেনে থাকতে হয়েছিল।
ট্রেনে টয়লেটে যাওয়ার অনুভূতি:সারারাত ট্রেনে থাকতে হবে। তাই প্রস্তুতিও সেভাবেই নিচ্ছিলাম। আম্মুকে নিয়ে টয়লেটের দিকে রওনা হলাম। ট্রেন তখনও চলন্ত অবস্থায়। দুলতে দুলতে সেখানে পৌঁছলাম। যখন টয়লেটের দরজা লাগলাম, একটু পরেই দেখি আম্মু অনবরত দরজা ধাক্কা দিচ্ছে। প্রচণ্ড ভয় পেলাম। তাই তাড়াতাড়ি বের হয়ে এলাম। আম্মুকে দরজা ধাক্কা দেওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। আম্মু যা বলল তাতে আমার সারা শরীর রাগে জ্বলতে লাগল। আম্মু বলল সে নাকি ভেবেছে আমি টয়লেটের দরজা খুলতে পারছিলাম না। তাই নাকি চিৎকার করছিলাম।
যাই হোক, এরপর আমরা আমাদের কামরায় গেলাম ও ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু আমার কখনোই কোনো যানবাহনে ঘুম আসে না। অথচ অনেককেই দেখেছি গাড়িতে উঠলে ঘুম কাকে বলে! ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি, ভাইয়া আরাম করে গান শুনছে। আমি অগত্যা ঘুমের চিন্তা বাদ দিয়ে জানালা দিয়ে রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম। খুব ভোরে ট্রেন পৌঁছে গেল সিলেট। ট্রেন থেকে নেমেই বাবা আর ভাইয়া থাকার জন্য হোটেল খুঁজতে লাগল। আর আমরা তখন লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অবশেষে হোটেল পাওয়া গেল। ভাড়া একটু বেশি হলেও হোটেলটা ছিল চমৎকার। আমরা সবাই নিজেদের জিনিসপত্র রেখে নাস্তার খোঁজে বের হলাম। সকালের নাস্তাটা ছিল দারুণ। ক্ষুধাও ছিল প্রচুর। তাই আমরা সবাই পেট ভরে খেয়ে নিলাম। অতঃপর “রাতারগুল” এর উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
রাতারগুল:প্রথমেই চিকন আর লম্বা দেখে একটা নৌকা ঠিক করা হল। পরে আমরা নৌকায় করে যেতে শুরু করলাম। পানির ওপর অনেক গাছপালা ছিল। সেই গাছপালার মধ্যে দিয়ে আমরা যেতে লাগলাম। সে ছিল এক আশ্চর্য অনুভূতি! সেখানে পানি খুবই স্বচ্ছ ছিল। হঠাৎ করে দেখি, ওপর থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। ওপরের দিকে তাকিয়ে দেখি, একটা বানর গাছের ডালে বসে তার প্রাকৃতিক কাজটা সেরে নিচ্ছে। নৌকায় যেতে যেতে আমরা একসময় একটা টাওয়ারের কাছে এসে পৌঁছলাম। সেখানে গিয়ে আর আমাদের তর সইল না। মাঝিকে বললাম নৌকা থামাতে। মাঝি নৌকা থামাতেই আমরা সবাই মিলে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। যদিও আমার ক্ষেত্রে কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ আমি সাঁতার কাটতে পারি না। তাই ঝাঁপ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তবে অন্যরা ঠিকই ঝাঁপ দিয়েছিল। অগত্যা আমি টাওয়ারের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে গোসল করলাম। গোসল শেষ করে আবার নৌকায় চড়ে বসলাম। এবার আমাদের ফেরার পালা। আমরা ফিরে এসে তীরে উঠলাম। সেখানে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য একটু বসলাম। সেসময় পেটে হালকা ক্ষুধাও ছিল। তাই সেখান থেকে গরম গরম সিঙাড়া খেয়ে নিলাম। এই ছিল আমাদের রাতারগুলের কাহিনী।
এরপর সেদিনই সিএনজিতে করে রওনা দিলাম “বিছানাকান্দি” এর দিকে।
বিছানাকান্দি:সিএনজি করে বিছানাকান্দি নামলাম। নেমে আরেকটা বড় নৌকা ঠিক করলাম। সেই নৌকায় করে আমরা যেতে লাগলাম। সেখানে দুই ধারে মানুষ ছিল। তারা নিজেদের মতো কাজ করছিল। অনেক বাচ্চা পানিতে সাঁতার কাটছিল। আমরা দেখতে পেলাম নৌকা বোঝাই করে পাথর নিয়ে যাচ্ছে অনেক মানুষ। এই পাথর সংগ্রহ করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করে। পাথরগুলো ছিল খুবই সুন্দর। আমরা অবশেষে আমাদের কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছলাম। জায়গাটি ছিল ভারতের সীমান্ত। ওপারেই ভারত। সেদিন আমাদের ভাগ্যই ভালো ছিল বলতে হবে। কারণ সেই সীমান্ত সেদিন খুলে দেওয়া হয়েছিল। সপ্তাহে দুই দিন এই সীমান্ত খোলা থাকে। বাবা আর ভাইয়া সেখানে গিয়ে কেনাকাটা করল। আমি আর আম্মুও অনেক কিছু কিনলাম। পরে সেখান থেকে পানিতে ভিজলাম। এরপর আবার নৌকায় চড়ে বসলাম। এবার সোজা আমাদের হোটেলে ফিরে আসলাম। তখন রাত হয়ে গেছে। তাই টুকটাক খেয়ে হাত মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়লাম। আর সাথে সাথেই ঘুমিয়ে পড়লাম। আর ঘুমাব না-ই বা কেন? কি ক্লান্তটাই না ছিলাম! কিন্তু ঘুমের মধ্যে হঠাৎ করে অনুভব করলাম আমি দুলছি। চোখ খুলে বুঝতে পারলাম যে, এটা সারাদিন নৌকাতে করে ঘুরার ফল। যা-ই হোক, এই সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। এরপরের দিন খুব ভোরে জাফলং-এ যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নিলাম।
জাফলং:জাফলং আরেকটা অবর্ণনীয় সুন্দর জায়গা। সেখানে একজন লোক ঠিক করা হল যিনি আমাদেরকে সেখানকার পাঁচটি স্পট ঘুরিয়ে দেখাবেন। আমাদের যাত্রা শুরু হল। প্রথমে অটোতে করে গেলাম “চা বাগান” এ। সেই দৃশ্য যে কত সুন্দর তা বলে শেষ করা যাবে না। সেখানের বাসিন্দারা তখন চা পাতা সংগ্রহ করছিল। ঝটপট কয়েকটি ছবি তুলে নিলাম সেই মনোরম জায়গার। সেখানের খাবারে একটু বিশেষত্ব ছিল। ওরা ছোলা আর পেঁয়াজু দিয়ে পোলাও খাচ্ছিল। আম্মু আর বাবা সেটাই মজা করে খেতে লাগল। কিন্তু আমি আর ভাইয়া এই খাবারের ওপর ভরসা করতে পারছিলাম না। তাই আমরা সিঙাড়া খেলাম। চা বাগানের পাশে ছিল পানের বোর। আর এর বিশেষত্ব হচ্ছে পানপাতার সাথে প্রাকৃতিকভাবেই ছিল সুপারি। এরপর আমরা “খাসিয়া পল্লী” এর দিকে রওনা দিলাম। খাসিয়ারা খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। তাদের বাড়িগুলো উঁচু উঁচু। সেখানে ছেলেদের কানও ফুঁড়ানো। এটাই ওদের নিয়ম। তারপর গেলাম “জিরো পয়েন্ট” এ। সেখানে প্রাণ ভরে গোসল করলাম। পানিতে স্রোত ছিল প্রচুর। দেখতে দেখতে পাঁচটি স্পট শেষ হয়ে গেল।
এবার আমাদের ফেরার পালা। সিএনজি করে হোটেলে ফিরে এলাম। এরপর রাতটা কাটিয়ে খুব ভোরে আমাদের জিনিসপত্র গোছানো শুরু করলাম। সব কাজ শেষ করে মাজারের দিকে রওনা দিলাম।
মাজার:মানুষ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাজার দেখতে সিলেট যায়। সেখানে শাহজালাল ও শাহপরাণের মাজার ছিল। মাজারে কিছু আকর্ষণীয় জিনিস ছিল। গজার, কৈ, শোল ইত্যাদি নানা ধরনের মাছ ছিল। সেখানে এসব দেখে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম।
মাজার থেকে ফিরে এসে আমরা ঢাকার টিকেট কিনে ফেললাম। আমরা অনেক আগেই স্টেশনে চলে এসেছিলাম। এসে রাতের খাবার খেয়ে নিলাম। পরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এই ছিল আমাদের সিলেট ভ্রমণ।
নাইস ভ্রমণ অভিজ্ঞতা
আর নাইস উপস্থাপনাা
পড়ে খুব ভালো
লেগেছে।
Thank you so much
সিলেট খুবই সুন্দর জায়গা।
Yes
ভালো পোস্ট
Nice
Thanks
nice writing
Thanks
Valo
Thanks
Nice
Thanks
Valo
Good day
Amio same vabe ghureci
Nc
Nc
Sylhet nice place
Nice
Good post
ভালো পোস্ট
Good
gd