ব্লগিং নাকি ইউটিউবিং কোনটি সবচেয়ে ভালো হবে না কোনটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিলে দ্রুত সফল হওয়া যাবে, এই ধরনের প্রশ্ন প্রায় অনেকের মনে থাকে।
শুরুর দিকে আমিও এই চিন্তায় পড়েছিলাম, ব্লগিং কে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিবো নাকি ইউটিউবকে। আজকের আর্টিকেলে আমরা এইটাই জানবো কোনটি সবচেয়ে ভালো হবে।আমি সরাসরি আপনাদের বলবো না কোনটি আপনার জন্য ভালো হবে বা খারাপ হবে, তবে আমি আপনাদের সাথে কয়েকটি পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করবো, সেগুলো থেকে আমরা নির্ধারণ করার চেষ্টা করবো কোনটি সবচেয়ে ভালো হবে আমাদের জন্য।
ইনভেস্টমেন্ট
কোনো কাজ শুরু করার আগে আমরা সবার আগে চিন্তা করি সে কাজের জন্য কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। ব্লগিং এর বিষয়ে যদি বলি, এখানে আপনাকে একটি ডোমেইন, হোস্টিং, থিম কিনতে খরচ করতে হবে। তবে Blogger দ্বারা অনেকে ফ্রীতে একটি ব্লগ সাইট বানিয়ে আয় করছে ইনভেস্ট ছাড়া। তবুও দ্রুত সফল হতে হলে ইনভেস্ট করতেই হবে। এক্ষেত্রে মাত্র ২-৩ হাজার টাকায় আপনি ব্লগিং শুরু করতে পারবেন।
কিন্তু ইউটিউব এর কথা যদি বলি, এখানে আপনি যে কনটেন্ট নিয়ে কাজ করেন না কেন আপনার কনটেন্ট এর কোয়ালিটি ভালো হতে হবে। এর জন্য আপনার একটি ক্যামেরা থাকা লাগবে, ক্যামেরা না থাকলেও অন্তত ২০-৩০ হাজার টাকার মধ্যে ভালো একটি মোবাইল থাকতে হবে। এছাড়া লাইটিং সেটাপ, মাইক্রোফোন ইত্যাদি আছেই। এক্ষেত্রে কম হলেও আপনার শুরু দিকে ৪০-৫০ হাজার টাকা ইনভেস্ট করে ইউটিউবে আসতে হবে।
কাজের সময়
সাধারণত একটি ব্লগ গুগলে রেঙ্ক হতে ২-৩ মাস এর মত সময় লাগে। তবে আপনি যদি সঠিক নিয়মে ২-৩ মাস ব্লগে সময় দেন আপনি অবশ্যই এডসেন্স পাবেন এবং আপনার ব্লগ রেঙ্ক করতে পারবেন।
কিন্তু ইউটিউবের ক্ষেত্রে ২-৩ মাসেই যে আপনি সফল হবেন সেটা না। এখানে আপনার প্রথমে প্রয়োজন এক হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং ৪ হাজার ঘণ্টা ওয়াচ টাইম ১ বছরের মধ্যেই, নাহলে আপনি মনিটাইজেশন পাবেন না। শুরুতে একজন ইউটিউবার এর পক্ষে এত সাবস্ক্রাইবার এবং ওয়াচ টাইম গেইন করা অনেক কষ্টের। অনেকের ২-৩ বছর লেগে যায় তবুও ১ হাজার সাবস্ক্রাইব পূরণ হয় না। তবে ভাগ্য ভালো থাকলে অনেক দ্রুত সফল হওয়া যায়।
কোনটিতে আয় বেশি?
ব্লগিং এর ক্ষেত্রে আপনার কনটেন্ট ভালো থাকলে ২-৩ মাসে আপনি এডসেন্স পেয়ে যাবেন, পাওয়ার সাথে সাথে আপনার আয় শুরু হবে।
তবে ইউটিউব এর ক্ষেত্রে মাত্র ২-৩ মাসে বেশি আয়ের কথা চিন্তা করাটা ভুল হবে যদি আপনি বাংলায় ইউটিউব ভিডিও করে থাকেন। কারণ বাংলা কনটেন্ট এর সিপিসি অনেক কম।
এক্ষেত্রে ব্লগিং থেকে ইউটিউব এর তুলনায় বেশি আয় আপনি করতে পারবেন। ইউটিউব থেকেও আয় করতে পারবেন তবে তার জন্য আপনার চ্যানেলকে বড় হতে হবে, চ্যানেল শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই বেশি আয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সম্ভব হয়না।
আপনার চ্যানেলে যখন 1 মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার পূরণ হবে, কিংবা আপনার চ্যানেল যখন বড় হবে তখন আপনি স্পন্সর পেতে পারেন। তবে ব্লগেও ভালো ভালো স্পন্সর আপনি পাবেন। তাই অবশ্যই বলা যায় ব্লগের আর্নিং বেশি থাকবে।
কোনটির ভবিষ্যৎ কেমন?
ব্লগিং এর কথা যদি বলি, এখানে ভবিষ্যতে আপনার কোনো ভুলের কারণে যদি আপনার সাইটের এডসেন্স ডিসেবল করে দেওয়া হয়, তাহলেও আপনি অন্য কোম্পানিগুলোর এন্ আপনার সাইটে বসিয়ে আপনি আয় করতে পারবেন। এছাড়াও এফিলিয়েট মার্কেটিং করার সুবিধা তো আছেই। ব্লগের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই।
কিন্তু ইউটিউবে কোন ভুলের জন্য কিংবা কারো দেওয়া কোন স্ট্রাইক এর জন্য আপনার চ্যানেল টি আজীবনের জন্য সাসপেন্ড করে দিতে পারে। ইউটিউব চ্যানেল যদি একবার সাসপেন্ড করে দেওয়া হয় তাহলে কিন্তু আপনি সেটি আর ফিরে পাবেন না। এ ক্ষেত্রে একটি বড় রিক্স কিন্তু থাকছে।
শেষ কথা
এখন আপনি হয়তো ভাববেন, আমি ব্লগিংকে ইউটিউব এর তুলনায় বেশি এগিয়ে রাখছি। এর কারণ আমি যে কয়েকটি পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি সে সবগুলোতে ব্লগ এগিয়ে থাকছে।
পরিশেষে আমি আপনাদের বলব যে, ইউটিউব কিন্তু খারাপ ক্যারিয়ার নয়। আপনি অবশ্যই ইউটিউবে কাজ শুরু করতে পারেন যদি এটি আপনার শখ হয়ে থাকে। কিন্তু যদি আপনি দ্রুত সময়ে ভালো আয় করতে চান তাহলে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় ব্লগিং করা।
আশা করি পুরো বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন। আজ এই পর্যন্তই, ভালো থাকবেন সবাই। আল্লাহ হাফেজ