কম্পিউটার বিশ্বে ইন্টারনেট হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিপ্লব। ইন্টারনেট হচ্ছে একটি কম্পিউটার নির্ভর নেটওয়ার্কিং সিস্টেম, তাই কম্পিউটারের বহুমুখী ব্যবহারের উপর ইন্টারনেটের ব্যবহার নির্ভর করে। শুরুতে কেবল তথ্যের আদান – প্রদান করার জন্য ইন্টারনেটের জন্ম হলেও যতই দিন যাচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহারের বহুমুখীতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ব্যবহার বিস্তৃত হচ্ছে, এটা কেবল গবেষণাকর্ম বা সরকারি কর্মকান্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের জন্য ইন্টারনেট এখন উন্মুক্ত। বাণিজ্যিক ভিত্তিক ব্যবহার ইন্টারনেটকে নতুন মাত্রা প্রদান করেছে। যেকোনো ধরনের ব্যবসায়ীক যোগাযোগ কিংবা বিজ্ঞাপনের জন্য ইন্টারনেটকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ইন্টারনেট একাধারে সারা বিশ্বের ব্রডকাস্টিংয়ের দায়িত্ব নিতে পারে, তথ্য আদান – প্রদানের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং ভৌগোলিক সীমারেখা পার হয়ে যেকোনো স্থানের ব্যক্তি এবং কম্পিউটারের Interaction এর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। নিচে সংক্ষেপে ইন্টারনেটের ব্যবহার উল্লেখ করা হলো :
তথ্যের আদান – প্রদান :
১. বর্তমানে ইন্টারনেট তথ্যের আদান প্রদানের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহুর্তেই বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে ই – মেইল করে তথ্য প্রেরণ করা যায়। প্রচলিত ডাক ব্যবস্থায় এটি কল্পনাও করা যায় না। এসব ই – মেইলের সাথে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বা ফাইল গুলোও যুক্ত করে পাঠানো যায়।
২. ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিল্পকারখানার নানা রকমের কাজ করা সম্ভব হয়।
৩. ভিওআইপি বা ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকলের মাধ্যমে প্রচলিত ফোনের চাইতে খুব কম খরচে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে কথা বলা যায়।
তথ্য আহরণ :
১. ইন্টারনেট হলো তথ্যের বিশাল ভান্ডার। এমন কোনো তথ্য নেই যা ইন্টারনেটে মাধ্যমে পাওয়া যায় না। তাই যেকোনো তথ্যের জন্য নির্ভর যোগ্য মাধ্যম হলো ইন্টারনেট। গুগল, বিং, ইয়াহু, আলাতাভিস্তা প্রভৃতির মতো সার্চইঞ্জিন গুলোতে কাঙ্ক্ষিত তথ্যের নাম লিখে সার্চ করলেই বিশ্বের অসংখ্য সার্ভারে থাকা তথ্য গুলো চোখের সামনে হাজির হয়ে যায়। ব্যবহারকারী ব্রাউজিং করে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী কম্পিউটারের পর্দায় প্রদর্শন করতে পারেন কিংবা নিজের কম্পিউটারে সংরক্ষণ বা প্রিন্ট করতে পারেন।
২. বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার, ফ্রিওয়্যার, বিনোদন উপকরণ ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে সংগ্রহ করা যায়।
শিক্ষার ক্ষেত্রে :
১. আজকাল ইন্টারনেট জ্ঞান অর্জনের মহাসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। জীবনের যেকোনো প্রয়োজনীয় শিক্ষামূলক তথ্য ইন্টারনেট থেকে আহরণ করে জ্ঞানার্জন করা যায়।
২. অনলাইনে যেকোনো লাইব্রেরি থেকে কিংবা অনলাইনে অবস্থিত যেকোনো পুস্তক অধ্যয়ন করা যায়।
৩. ইন্টারনেটের মাধ্যমে পড়ে যেকোনো করসপন্ডেন্স কোর্স করা যায়। ঘরে বসেই বিশ্বের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো শিক্ষা গ্রহন করা যায়।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে :
অনলাইনে চিকিৎসা সেবা নেওয়া যায়। টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে বিশ্বের নামকরা চিকিৎসকদের সাথে সরাসরি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসে এই সেবা পাওয়া যায়। ঝুকিপূর্ণ রোগীদের ক্ষেত্রে বিদেশে না গিয়ে দেশেই চিকিৎসা নেবার জন্য এটি বেশ কার্যকর।
বিনোদন ও অনলাইন মিডিয়া :
১. ইন্টারনেট টিভি ও ইন্টারনেট রেডিও চালুর ফলে ঘরে বসেই কম্পিউটারে বিভিন্ন ধরনের টেলিভিশন ও রেডিও চ্যানেলের অনুষ্ঠান উপভোগ করা যায়।
২. অসংখ্য ইন্সট্যান্ট মেসেঞ্জারের মাধ্যম তাৎক্ষণিক ভাবে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থাকা যেকোনো ব্যক্তির সাথে টেক্সট চ্যাট করা, কথা বলা, ভিডিও চ্যাট করা যায়। ইন্টারনেট বিলে চ্যাট (IRC) দিয়ে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যায়।
৩. সংবাদ পত্র ও পত্রিকা ইন্টারনেট সংস্করণ প্রকাশিত হবার ফলে এখন ঘরে বসেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা পড়া যায়। দৈনিক পত্রিকা গুলোর কাগজের কপি বাজারে আসার পূর্বেই তা অনলাইনে বসে পড়ে নেওয়া যায়। দেশ বিদেশে টাটকা খবর গুলো অডিও, ভিডিও এবং স্থির চিত্রসহ সাথে সাথে জানিয়ে দিচ্ছে নিউজ সাইটগুলো।
বাণিজ্যিক :
১. ইন্টারনেট ব্যবহার করে ই – কমার্সের সাহায্যে ঘরে বসেই পণ্য কেনা যায়।
২. ব্যবসায় – বাণিজ্যিক প্রসারের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইন্টারনেট একদিকে যেমন ব্যবসায়ীক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, অন্যদিকে পণ্যের বিপণন ও বিজ্ঞাপনের জন্য ওয়েবপেজ বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে। ওয়েবপেজে একটি বিজ্ঞাপন যেভাবে নিমেষেই সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া যায় কোন পত্র পত্রিকা দ্বারা তা সম্ভব নয়।
বৈশ্বিক অবস্থান সম্বন্ধীয় সেবা :
১. গুগল ম্যাপস এর মতো সেবার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো স্থানের স্যাটেলাইট মানচিত্র দেখে ওই স্থান সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। ওইসব স্থানের ছবি জুম করে বড় করে খুব কাছে থেকেও দেখা যায়।
২. গ্লোবাল পজিশনিংয়ের সেবাও পাওয়া সম্ভব ইন্টারনেটের মাধ্যমে।