আল্পনা তার রিক্সাওয়ালা স্বামীকে একদম সহ্য করতে পারে না। রাতে কল্পনার ঘরে এসে থাকে আর সারারাত কাঁদে আর বিলাপ করে বলে –
“কল্পনা, এ আমার কি হয়ে গেল রে! আমার বয়ফ্রেন্ড ছিল সরকারি বড় কর্মকর্তা, আর আমার বিয়ে হলো কিনা একটা রিকশাওয়ালার সাথে!! আমি এখন কি করবো রে!! হায়! আমার কপাল! আমার কি সর্বনাশ হয়ে গেল রে!!”
বড় বোনকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা কল্পনার জানা নেই। সামনে তারও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার রেজাল্ট। সে নিজেই খুব আতংকে দিন কাটাচ্ছে। কি জানি কি হয়। পাশ করতে পারে কি না তা আল্লাহ্ই ভাল জানে। আল্লাহ্ না করুন, যদি ফেল করে যায়, হয়তো তার বর হবে এক অটোওয়ালা। তারপর দুই ভায়রা – ভাই প্রতিদিন সকালে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একজন অটো নিয়ে বের হবে একজন রিকশা নিয়ে! এদিকে তারা দুই বোন কখনো প্রাইভেট কার ছাড়া কোথাও যায় না। কি একটা বিশ্রী অবস্থা! দুঃশ্চিন্তায় শিউরে উঠে কল্পনা। আর সেই রাতে তার একটুও ঘুম হয় না। চিন্তায় চিন্তায় তার দু’চোখের নিচে কালি পড়ে যাচ্ছে।
এদিকে কল্পনার বিদেশ থাকা ফুপী খবর পেয়ে দেশে চলে আসেন। বাসায় এসেই সে কি চিল্লাচিল্লি! বড় ভাইকে বলছেন, “এইটা তুমি কি করলে? কেউ নিজের মেয়ের এত বড় ক্ষতি করে? তারচেয়ে বরং তুমি ওকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতে, আমি কি মরে গিয়েছিলাম? হায়, হায়! আমরা এখন সমাজে মিখ দেখাবো কি করে? নিজের পায়ে নিজে এভাবে কেউ কুড়াল মারে?”
এসব বলতে বলতে মেয়ের জামাইর কাছে গিয়ে রাগী গলায় ফুফু বললেন, “you scoundrel! How dare you? I will see you!!”
জবাবে মেয়ে রিক্সাওয়ালা জামাই বললেন, “You can’t do that! because she is my legal wife. And whatever, I have not made any mistake actually!!”
কল্পনার ফুফুসহ পরিবারের সবাই জামাই এর কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে! “এ আসলে কে? এতো খুব ভাল ঘরের এবং শিক্ষিত ছেলে মনে হচ্ছে!” এদিকে জামাই বলতে থাকে,
ঃ “আমিও ভালো ঘরেরই সন্তান। আমার বাবারও সমাজে অনেক নাম ডাক আছে। তিনিও এক কথার মানুষ। আমি পড়াশুনায় ভালই ছিলাম কিন্তু অংকে খুবই দূর্বল ছিলাম। কি সব প্যাঁচালো সূত্র টুত্র এগুলো আমার মাথায় ঢুকতো না। আমি পর পর দুই বার ইন্টারমিডিয়েট ফেল করার পর, তৃতীয়বারের সময় বাবা সোজা বলে দিলেন –
ঃ “এবার ফেল করলে আর পড়া শোনা করার দরকার নাই। আর এই মেধা নিয়ে তো কোন চাকরি বাকরী জুটবে না। তাই একটা রিক্সা কিনে তোমাকে আলাদা করে দিব। নিজের রাস্তা নিজে দেখতে হবে এই আমার শেষ কথা”।
আমার কপাল খারাপ ছিল সেই বছরও ঐ অংকেই ফেল করলাম। আমার আব্বুও তার কথা রেখে আমাকে রিকশা কিনে দিলো! তারপরের কাহিনী তো আপনাদের সকলেরই জানা …… ।