একটি অসমাপ্ত ভালোবাসা (পর্ব – ৪) [একটি আত্মজীবনীমূলক গল্প]

সুমাইয়ার সাথে আমার সময় গুলো ইদানীং ভালো যাচ্ছিল না। কেন জানি আমার সবকিছু বোরিং লাগছিল তার। মাঝে মাঝে এমনও হতো, আমি কল দিয়েছি; আর সে কল কেটে দিয়ে আমাকে ব্লক করে রেখেছে সারাদিন। পরদিন ব্লক খুলে নিজে থেকে এস.এম.এস দিয়ে বলতো, “কিরে, কেমন আছিস..”
বস্তুতঃ আমি বুঝতে পারছিলাম না তার আর আমার মধ্যে ইদানীং এমন হচ্ছে কেন..

বিশ্বাস করুন, আমার অন্তর বলে সে আমাকে ভালোবাসে। হয়তো তার চেয়ে আমি তাকে বেশি ভালবাসি। কিন্তু কেন আমার এই ভালোবাসা তার কাছ এতো পানশা লাগছে.. নাকি সে এটা বোঝাতে চাচ্ছে যে পবিত্রভাবে ভালেবাসলে সে ভালোবাসায় স্বাদ/গন্ধ থাকেনা। একটু কাবিল হতে হয়..

এর উত্তর যদিও পাইনি, তবু আমি হতভম্ব। কারণ, তার মা আজ আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন। বলেছেন, গিয়ে একবার দেখা করে আসতে। কেন তিনি আমাকে ফোন করলেন, যার সাথে কখনোই আমার কথা হয়নি? তাহলে কি সুমাইয়া তার মাকে আমার বিরুদ্ধে বুঝিয়েছে? নাকি এমন কিছু অপেক্ষা করছে যা আমার জন্য অসম্ভব ভালো?
সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে যদি আমি একটিবার গিয়ে তাদের সাথে দেখা করে আসি..

[ এই গল্পের প্রথম পর্ব পড়ুন 👉 পর্ব ১ ]
[ এই গল্পের দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন 👉 পর্ব ২ ]
[ এই গল্পের তৃতীয় পর্ব পড়ুন 👉 পর্ব ৩ ]

আজ শুক্রবার। জুমার নামাজ শেষ করে আমি চলে যাই নিউমার্কেটে আবারও একটিবার। অনিশ্চিত ভবিষ্যত জেনেও আনন্দের চাদরে ঢেকে দিয়েছিলাম আমার সকল সন্দেহ প্রবণতাকে। হাতে টাকাও তেমন ছিলনা। কিন্তু দিলে তো তাকে ভালো কিছুই উপহার দিতে হয়। মার্কেটের অলিতে-গলিতে হাঁটছিলাম আমি; দেখছি কি দেওয়া যায় তাকে।

এমতাবস্তায় চোখে পড়ল একটি সুন্দর হ্যান্ড-ব্রেসলাইট। দেখতেও মোটামুটি গর্জিয়াস লাগছে। দরদাম জিজ্ঞেস করে দেখি সাধ্যের ভিতরে আছে। যাক, অবশেষে সেটাই কিনে নিই আমি।

জীবনের সবচেয়ে বিরক্তিকর দিন ছিলো এবারের শনিবার। প্রহরগুলো যেন কাটছিলই না আমার। তাকে আরেকটিবার দেখতে মনটা যে আমার আনচান করছে সে কবে থেকেই…

পরেরদিন রবিবার সকাল সাতটায় উঠে যাই আমি। ফ্রেশ হই, গায়ে কালো রংয়ের কোটটা জড়িয়ে একটু শাটিং-শুটিং হয়ে রওনা দিই পটিয়ার পথে…

এবারের যাত্রায় তার সাথে তার মাকেও দেখতে পাব। এজন্য ভেতরে এক্সাইটমেন্ট এর সাথে সাথে একটু ভয়ও কাজ করছিল আমার। মোবাইলটা সাইলেন্ট করে দিলাম প্রথমেই, যাতে দেরী হওয়ার কারণে অযথা গালি খেতে না হয় তার মুখ থেকে। নয়তো ভ্রমণের মুডটা নষ্ট হয়ে যাবে..

পটিয়া নামার পরেই তাকে কল দিই। দেখি, সে রিসিভ করছে না। তারপর তার মায়ের মোবাইলে কল দেই। কিরে! তারা আশ্চর্যজনকভাবে কেউই আমার কল রিসিভ করছে না। যাই হোক, আমি অপেক্ষা করতে থাকে পটিয়া সরকারি কলেজের সামনে। একটু পরেই তার নম্বর থেকে কল আসে,

হৃদয়, নোঙরে চলে আয়। আমরা আগে যেখানে বসেছিলাম সেখানে।
ও আচ্ছা, তোরা ওখানে বসেছিস?
হ্যাঁ। সাথে আম্মুও বসে আছে।
আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখনই আসছি।

একটি ভীতসন্ত্রস্ত মন নিয়ে আমি প্রবেশ করি নোঙর রেস্টুরেন্টের ভিতরে।

– হৃদয়… এদিকে দেখ…

আমি হতবাক হয়ে যাই তাদের দুজনকে একসাথে দেখে। বলে বোঝাতে পারবোনা তখন আমার কি পরিমাণ আনন্দ হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো যেন আমার জানের টুকরা দুইটা একসাথে এক জায়গায় বসে আছে! আমার চোখে জল আসার উপক্রম, তবুও কষ্ট করে নিজেকে ধরে রেখেছি..

আসসালামু আলাইকুম আন্টি..
ওয়ালাইকুম আসসালাম। বাবা কেমন আছো তুমি?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন?
এই তো আছি বাবা, যেমনটা দেখছো। বসো এখানে..

অনেকক্ষণ গল্পগুজব করি আমরা। অতঃপর আগের মতো আবারও চিকেন বিরিয়ানির অর্ডার দিই। আমার কাছে সব যেন স্বপ্নের মত মনে হলো! আন্টির সাথে কথা বলে প্রচন্ড রকমের ভালো লাগলো। যেন তিনি আমার নিজের মা..

পাঠকবৃন্দ; আমি ভেবেছিলাম হয়তো আজ আমাকে তাদের সামনে অনেক বড় জবাবদিহিতা করতে হবে। কিন্তু আমি আশ্চর্য হয়ে যাই এটা দেখে যে, তারা দু’জনে আমার সাথে বন্ধু সুলভ আচরণ করছে। নিজের কাছে সেটা জল্পনা-কল্পনার মতো মনে হচ্ছিলো..

প্রায় অনেকক্ষণ আমরা গল্পগুজব করলাম। এক ফাঁকে আমি সেই ব্রেসলাইটটা সুমাইয়ার হাতে পড়িয়ে দিই। সে একটা রহস্যজনক হাসি দিল। বুঝলামনা, সে অত্যন্ত খুশি হলো; নাকি বড্ড বেজার..

রেস্টুরেন্টে সময়গুলো সত্যিই খুব ভালো ভাবে কাটালাম। আন্টি বলছেন, তাঁর আর উঠতেই ইচ্ছা করছে না। সত্যি সত্যি আমারও আর উঠতে ইচ্ছা করছিল না। যেন এখানেই বাকি দিনগুলো কাটিয়ে দিতে পারবো..

প্রায় দুই ঘণ্টা পর আমরা রওনা দিলাম বাসার দিকে। সিঁড়ি থেকে নামছিলাম। সামনে আন্টি ছিলেন। আর পেছনে আমি। হঠাৎ কোত্থেকে যেন একটা হাত এসে আমার হাত ধরে শক্ত করে চেপে ধরল আমায়। ঘাড় ফিরিয়ে সুমাইয়াকে দেখে একেবারেই নরম হয়ে যাই আমি….

হোস্টেলে ফিরে এসে অনেকক্ষণ মৌন হয়েছিলাম। যেন প্রাণ ভোমরা দুটোকে পটিয়ায় রেখে এসে এখানে আমি লেখাপড়ার যজ্ঞ করছি। খেয়েদেয়ে এসে তাকে কল দিই। এরপর থেকে দিনগুলোকে আবার আগের মতো করে ফিরে পাই।

একদিন একটা টর্নেডো চলে আসে আমাদের দুজনের জীবনে; বিনাআভাসে। প্রবল আঘাত হানে আমাদের দু’জনের উপর। সেই আঘাতে চির নিদ্রায় শায়িত হয়ে যায় আমাদের দুজনের ভালোবাসা।

পাঠকবৃন্দ কে একটু অপেক্ষা করতে হবে পরের পর্বের জন্য। এ পর্বে আর বেশি কিছু লিখা সম্ভব না। আমি আর লিখতে পারছি না। চোখ দু’টো নদী হয়ে গেছে আমার।

আপনাদেরকে এটা জানিয়ে রাখি, পরের পর্বেই সমাপ্তি ঘটবে আমার এই অসমাপ্ত ভালোবাসার..

Related Posts

17 Comments

  1. আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু
    আপনার একটা সাসক্রাইব আর একটা লাইক আমার জন্য অনুপ্রেরণা
    Please support me🙂

    Youtube Channel: https://www.youtube.com/channel/UCcrbrQxUzsavUjfXMgrsM6Q

    Facebook page: https://www.facebook.com/107324621876693/posts/107963605146128/?app=fbl

মন্তব্য করুন