একটি ছোট মেয়ে রোজের গল্প।

আজ আমি একটা ছোট মেয়ের গল্প বলবো। একটা মেয়ে যে খুব কৌতুহলী ছিলো এবং সে তার অতি কৌতুহলের জন্য সমস্যায়ও পড়ে এবং সেই সমস্যা থেকে শিক্ষাও গ্রহণ করে।তো চল শুরু করা যাক সেই মেয়েটির গল্প।
একটা মেয়ে ছিলো যার নাম ছিলো রোজ।সে প্রায়ই তার মায়ের সাথে বিভিন্ন যায়গায় যেতো
তেমনি একদিন সে তার মায়ের সাথে রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো। যাওয়ার সময় সে রাস্তার পাশে জানালাযুক্ত কতগুলো দোকান লক্ষ্য করলো। সেসব দোকানে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র বিভিন্ন ভাবে খুব সুন্দর করে সাজানো ছিলো।সে সেগুলো দেখে খুব ই আনন্দিত হয় এবং সেগুলো দেখার জন্য দাড়ায়।তার এমন অনেক কিছু ই কেনার জন্য বায়না করে যেগুলোর ব্যবহারও সে জানে না এমনকি সেগুলোর নাম ও তার জানা ছিলো না।
প্রথমে তারা ছোট একটি দোকানের সামনে থামলো। সেই দোকানটা অনেক সুন্দর করে সাজানো ছিলো। দোকানের জানালা গুলো বিভিন্ন ফিতা,লেস,কৃত্রিম ফুল দিয়ে সজ্জিত ছিলো।
সে তার মাকে বললো, ” মা দেখো ফুল গুলো কত সুন্দর। তুমি কি কিছু ফুল কিনবে?”
তখন তার মা বললো, “না কিনব না”
তখন সে বললো, “কেন মা?”
“কারণ আমি সেগুলো চাই না। ঐগুলা সত্যিকার ফুল নয়।”
হতাশার সাথে তার মায়ের কাছে জানতে চাইলো সে কেন ওই ফুলগুলো কিনবে না।তখন তার মা বললো ফুলগুলো অবশ্যই অনেক সুন্দর কিন্তু ওইগুলো দিয়ে তারা কি ই বা করবে। সেগুলো তাদের কোনো কাজে লাগবে না।তার মায়ের কথায় সে খুব ই হতাশ হলো। তারপর তারা আবার হাটতে শুরু করলো। কিছুদুর যাওয়ার পর তারা একটা স্বর্ণালংকারের দোকানে গেলো। কাচের পিছনে সুন্দরভাবে বসানো কম মূল্যের অনেক সুন্দর উজ্জ্বল অলংকার ছিলো।সেগুলো দেখে সে আবার তার মায়ের কাজে জেদ করতে শুরু করলো সেগুলো কেনার জন্য।
“মা, এগুলোর কিছু কিনবে?”
“এগুলোর কোনটা রোজ?”
“কোনটা? ” আমি জানি না কোনটি।তুমি ঐ স্বর্ণালংকারের দিকে তাকাও।
ঐ নেকলেস, ঐ লকেট! ঐগুলার যেকোনো একটা কিনলেই হবে,ঐগুলা খুব ই সুন্দর। ”
“হ্যাঁ ঐগুলা অবশ্যই অনেক সুন্দর, কিন্তু এটি আমার কি কাজে লাগবে?”
“আমি নিশ্চিত মা,তুমি ও-ই গুলোর কিছু না কিছু একটা ব্যবহার খুজে পাবে আগে যদি এগুলো কিনো।”
“কিন্তু আমি বরং আগে এর উপকারিতা জানতে চাইব।
তার মা নাছোরবান্দা সে কোনো প্রয়োজনীয়তা না জেনে কিছু কিনবেন ই না।সে খুব পীড়াপীড়ি করলো।কোনো লকেট বা একটা আংটি কেনার জন্য অনেক বায়না করলেন কিন্তু তার মা কিনে দেয় নি।আগের বারের মতো এবারেও সে খুব হতাশ হলো। সে বার বার ফিরে ফিরে সেই দোকান গুলোর দিকে দেখছিলো আর বার বার এটা ওটা কিনার জন্য বায়না করছিলো। কিন্তু তার মা প্রতিবার ই তাকে হতাশ করে আবার পথ চলতে শুরু করেন। তার মা কিছু কিনতে না চাওয়ায় সে সত্তি খুব ই কষ্ট পেলো। যাইহোক সে এক রসায়নের দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সে দোকানের ভেতর লাল,নীল,হলুদ এবং বেগুনি রঙের অনেক পাত্র দেখতে পেলো।বেগুনি রঙের একটি পাত্র দেখে সেটা তার অনেক পছন্দ হলো। । কিন্তু এবারেও তার মা বললো, “এটা কোন কাজে লাগবে রোজ?”
সত্যি সে সেটার কোনো ব্যবহার জানে না কিন্তু তবুও সে কিনতে চায়।
সে তার মাকে বলে,” মা আমি বরং এটাকে ফুলদানি হিসেবে ব্যবহার করবো।”
” কিন্তু তোমার ফুলদানি আছে।আর এটা কোনো ফুলদানি নয়।”
হঠাৎ করেই সে চিৎকার করে উঠে, “আহা, একটা পাথর।মা আমার জুতার ভিতর একটা পাথর ঢুকে গেছে আর খুব ব্যথা করছে।”
“আহা এটা ভিতরে কি করে গেলো?”
“দেখ,আমার জুতায় একটা গর্ত আছে,মা। বস্তুত আমার জুতা সম্পূর্ণভাবে ছিঁড়ে গেছে। আমাকে আরেক জোড়া জুতা কিনে দিলে ভালো হয়।”
“কিন্তু রোজ জুতা,পাত্র,অলংকার,আংটি, লকেট আর তোমার যা যা চাই সেই সব কিছু কিনে দেয়ার মত এতো টাকা নেই আমার কাছে।”
রোজ আবারও অনেক দুঃখিত হলো। সে স্রি সব কিছু বার বার মনে করতে লাগলো যা সে সারা রাস্তায় দেখেছে।
“কিন্তু মা এই পাত্রটা আমার খুব পছন্দ এবং এখন আমার পায়ে অনেক ব্যথা করছে,আপনি দয়া করে এই দুটো জিনিস কিনে দিতে পারবে?”
“না রোজ তুমি শুধু একটা জিনিস ই কিনতে পারবে।যাইহোক তুমি, তুমি অন্য জিনিসটা পরের মাসে কিনতে পারবে।আর এখন তুমি সিদ্ধান্ত নাও যে তুমি কোন জিনিসটা কিনতে চাও।”
“আমার জুতা খুব দরকার”
রোজ খুব ভাবনায় পড়ে গেলো সে কি কিনবে তা নিয়ে।সে নিজের সাথে বিতর্ক শুরু করলো। কিন্তু তার হৃদয় ওই সুন্দর পাত্রটির মধ্যে পড়ে আছে।তার পর জুতার দিকে তাকিয়ে সে তার মাকে বললো, ” এগুলো এতটাও খারাপ হয় নি এখনো,শুধু এই একটা গর্ত ছাড়া। আমার মনে হয় আমি এই জুতোগুলো পরে আরো একটা মাস কাটাতে পারবো।তাই না? তুমি চিন্তা করো না।”
“আমি চাই তুমি নিজে ই চিন্তা করো এবং চিন্তা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নাও,প্রিয়।”
“ঠিক আছে। তুমি যদি খুশি হও তাহলে আমি ওই নীল রঙের সুন্দর পাত্রটি নিতে চাই।”
” খুব ভালো। তাহলে তুমি ওই নীল রঙের পাত্রটি ই পাবে এখন।”
রোজ ও তার মা সেই রসায়নিক দ্রব্যের দোকানে ফিরে গেলো। রজ হাটার সময় দেখে আরেকটি পাথর তার জুতার ভিতর ঢুকে গেছে। সে তার ছেঁড়া জুতা থেকে সেই পাথরটা বের করে এবং ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটে।
যখন তারা দোকানে এসে পৌছে তখন রোজের মা কেনার পূর্বে রোজ কে সেটি সর্তকতার সাথে ভালো করে পরীক্ষা করে দেখতে বললেন।কিন্তু রোজ এতটাই আনন্দিত ছিলো যে সে সেটির ভিতরে কি আছে তা না দেখে ই সেটি কিনে ফেলে।আনন্দের সাথে তারা বাড়ি ফিরে আসে।তারপর রোজ বাগান থেকে কিছু ফুল তুলে আনে এবং সেই ফুলগুলো পাত্ররের মধ্যে রাখতে গেলো। কিন্তু সে ঢাকনাটি খুলতে ই সে তার ভেতর কালো রঙের কিছু একটা দেখতে পায় যা থেকে খুব বাজে গন্ধ আসছিলো।
“এটা কি,মা?” আমি এ কালো জিনিস এবং এই বয়াবহ বিশ্রী গন্ধ চাই নি।”
“আমিও চাই নি মামনি”
“কিন্তু এখন এটা দিয়ে কি করব?”
“আমি জানি না এটা দিয়ে কি করবে এখন তুমি।”
“ঠিক আছে মা।আমি বরং এই দুর্গন্ধ যুক্ত কালো তরলটা ঢেলে ফেলে দেবো এবং নতুন পরিস্কার পানি দিয়ে এটি পূর্ন করব।”
তারপর সে সেই কালো তরল ফেলে দিয়ে পাত্রপ্টি পরিস্কার পানি দিয়ে ধুয়ে সেটি ভালো স্বচ্ছ পানি দিয়ে পরিপূর্ণ করে।কিন্তু তখন সে খেয়াল করে পাত্রটি আর নীল নেই।এটি সম্পুর্ন সাদা একটা পাত্র।রঙিন পানি চলে যাওয়াই এটি আর এখন সুন্দর দেখাচ্ছে না একটুও।
চোখে হতাশার অশ্রু নিয়ে সে এবার কেদেই ফেলল।সে তার বোকামির জন্য খুব ই দুঃখিত হলো। তার জুতার অবস্থা ধিরে ধিরে আরো খারাপ হতে থাকে। সে ঠিকভাবে হাটতে, দৌড়াতে,নাচতে,লাফাতে পারে না।সে তার মায়ের সাথে বাইরে ঘুরতে যেতেও পারে না।
সে ভেবে সিদ্ধান্ত না নেয়ার জন্য খুব ই ভোগান্তিতে পড়ে এবং খুব কষ্টও সহ্য করে।কিন্তু এই ঘটনা থেকে শিক্ষাও নেয়।সে এবার থেকে সব সময় ভেবে চিন্তে কাজ করবে। সেই ঘটনা তাকে একটু কষ্ট দিলেও তাকে বুদ্ধিমতিও করে তুলে।
আমাদের সবার ও সব সময় ভেবে চিন্তে কাজ করা উচিত। নয়তো অনেক সমস্যায় পড়তে হবে।

Related Posts

17 Comments

মন্তব্য করুন