একটি বটগাছের আত্মকাহিনী পড়ুন

পথের পাশে চৌরাস্তার মােড়ে চারদিকে শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দিয়ে আমি এক বটগাছ প্রায় নিঃস দাড়িয়ে থাকি। আমার আশে পাশে যারা থাকে তারা কেউ আমার সগােত্রীয় নয়। তারা আমার ছায়ায় কোনাে রকমে রুগ্ন জীবন যাপন করে। সূর্যালোক পায়না বলে বেড়ে উঠতে পারে না। আমি তাই তাদের করুণা করি, তাদের সাথে ভাব করতে কিছুতেই মন চায় না। আমার আদি জন্ম ও বংশ পরিচয়ের কথা আজি যদি কেউ আমাকে জিজেস করে চুপ করে দাড়িয়ে থাকা ছাড়া আমার কোনো উপায় নেই।আর কি-ই বা আমি বলতে পারি, কেননা কবে কখন ও কোথায় যে আমার জন্ম হয়েছিল তা আমি। কিছুতেই মনে করতে পারছিনা। তবে জন্মের পরই আমার চারণাশের যে রূপ আমি দেখেছিলাম তার সকে এখনকার বূপের কোানাে মিল নেই। কোনাে এক কালে জনমানবহীন, এমনকি জীব-জন্তুর অস্তিত্ববিহীন, কর্ণমা্ত পৃথিবীর বুকে আমার জন্ম হয়েছিল। তখন আমার যগােত্রীয় আরো দুচার জন হয়তাে ছিল আমার আশেপাশে। সে অনেক অনেক বছর আগের কথা। এখন আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আমার মগােত্রীয় যারা ছিল তারা কালের করাল গ্রাসে পড়ে ব্যস হয়ে গেছে। আমারও যে এ তয় হয় নি তা নয়। আমার সৌভাগয যে, আমি এখনও বহাল তবিয়তে বেঁচে আছি ও বেড়েই চলেছি। আমাকে দেখে অনেকেই আমার জন্ম বৃত্তান্ত জানতে উৎসুক হয়ে ওঠে। কিন্তু আমি তাদের কোনাে খবরই দিতে পারি না। বাধ্য হয়ে বলি, এ বিষয়ে কোনাে কিছু জিযেস করে আর আমাকে আজ দেবেন না। অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে আমাদের আসমান-জমিন প্রভেদ। অন্যান্য প্রাণী চলাফেরা করতে পারে, খুশি মতো এক জায়গা থেকে অনা। জায়গায় যেতে পারে। আমরা মাটি ভেদ করে ওঠে সূর্যের আলাে দেখি বটে। কিন্তু আমরা চলাফেরা করতে পারি না। আমরা সবির, তাই যেখানে জন্মি সেখানেই আজীবন মাটি আকড়ে পড়ে থাকি। তাই বলে আমরা অলস জীবন যাপন করি না। আমরাও চলমান প্রাণিদের মতাে আহার করি, দিনের শেষে বিশ্রাম নেই, ঘুমাই। মানুষ যেমন সন্তান উৎপাদন করে বংশকে চিরস্থায়ী করতে চায়।
আমরা তেমনি আমাদের বংশ বিস্তার করে থাকি। ক্ষুধার্ড পাখিরা যখন আমানের কাছে আসে, তখন আমাদের সামান্য ফল দিয়ে তাদের ক্ষুধা দূর করি। পাখিরা মুখে করে কিছু ফল তাদের বাসায় নিয়ে যায় হয়াতো বা তাদের সন্তানদের জনযে। উড়ে যাবার সময়। কিছু কিছু তাদের মুখ থেকে কমে পড়ে। আর সেখানেই আমাদের বংশ বিস্ভার ঘটে জন্মগ্রহণ করে আমাদের সন্তানেরা। তােমরা শুনে অবাক হবে, কর্মই আমার জীৱন। তাতে আমি মানুষের চেয়ে মােটেও পিছিয়ে থাকি না। পরের সেবায় নিজেকে নিয়ােজিত রাখতে পারলেই আমি আনন্দ পাই, আমার সুশীতল ছায়া আমার নিজের কোনাে কাজে লাগে না। পরিশ্রান্ত পথিকেরা যখন আর চলতে পারে না, তখন আমার ছায়ায় বসে বিশ্রাম করে। আমি তাদের ক্লান্তি দূর করে দেই। তারা তখন নতুন উমামে আবার পথ চলতে শুরু করে। ক্লান্ত পাখি আমার ছায়ায় বসে অবসর যাপন করে। আমি শুধু তাদের ছায়াই দেই না, তাদের মুখে খাবার তুলে দেই। আরাে বহু জীবজন্তু সায়ার আশায় প্রতিদিন আমার নিচে এসে আশ্রয় নেয়। পরে সেবা করাই আমার জীবনের ব্রত। তাই আমি কখনােই আমার সুশীতল ছায়া থেকে কাউকে বঞ্চিত করি না। আমি গর্বকরে বলতে পারি, আমার পরার্থপরতার দৃষ্টান্ত যদি অনুসরণ করে তা হলে এ পৃথিবী সহজেই বেহেশতের শান্তি সুখে পূর্ণ হয়ে যেতে পারে। উপসংহার বড়ই যা্পর জাতি। মাঠে কাজ করতে করতে বা পথ চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে তারা আমার ছায়ায় বসে বিশ্রাম নো ও ক্লান্তি সূর করে কিন্তু যাবার সময় তারা আমার ডাল ভেঙ্গে নিয়ে যায়। আশেপাশের গায়ের অনেকেই আমার ডাল কেটে নিয়ে নানা কাজে। লাগায়। আমারও যে প্রাণ আছে, আমি যে ব্যথা বােধ করি, এ তারা একটি বারের জন্যেও ভেবে দেখে না। আমি বেশ বুঝতে পারছি আমি যাই সেবা করি না কেন, আমার জন্যে মানুষের কোন মায়া নেই। তাদের এত উপকার করি, তবুও তারা আমাকে কোন কাজের মনে করে না। জনসথ্যে যেভাবে বাড়ছে একদিন হয়তাে তাদের বসতবাড়ি নির্মাণের জন্যে আমার জায়গাটুকুও দরকার হয়ে যাবে। সেদিন তারা আমাকে পৃথিবীর বুক থেকে সরিয়ে দেবে। সে কথা ভাবলে এক দুঃসহ জ্বালায় আমার অন্তর ভরে যায়। পশু পাখির বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযােগ নেই। কিন্তু মানুষের বিরুদ্ধে আমি অভিযোগ না করে।

Related Posts