একটি শিক্ষণীয় ছোট গল্প>
শামীম সাহেব প্রচুর ব্যস্ত একজন মানুষ। এমনিতে অফিসের কত কাজ, কত ঝামেলা পোহাতে হয় দিনে। তার উপর তাঁর একমাত্র ছেলে নয়নের আবার বায়না হয় নতুন নতুন খেলনা কেনার; ওটা প্রত্যেক সপ্তাহের শেষ দিনে পূরণ করতে হয়।
নয়ন একটু জেদী স্বভাবের হলেও বড্ড আদরের ছেলে তাঁর। খুব ছোট, মাত্র ক্লাস ফোর -এ পড়ে। তার খেলনা কেনার কথা যদি কোন ব্যস্ততার কারণে ভুলে যান, তাহলে শেষ। বাসার ভেতরে ভাঙচুর শুরু করে দিবে। তাছাড়াও আজ অফিসে অনেক কাজ ছিলো জনাব শামীমের। অনেক ব্যস্ত ছিলেন; ফলক্রমে ভুলে যান ছেলের জন্য খেলনা নিয়ে যাওয়ার কথা।
খুব ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরলেন। এদিকে একটু পর ছেলেও এসে হাজির।
নয়ন: বাবা আমার নতুন খেলনা কই?
শামিম সাহেব: হায় হায় বাবা! অফিসের কাজে খুব ব্যস্ত ছিলাম। তাই ভুলে গিয়েছি। চিন্তা করিওনা বাবা, কাল ডাবল এনে দেবো তোমাকে..
নয়ন: না না, আমার এখনই চাই।
শামিম সাহেব: আচ্ছা বাবা, কাল এনে দেবো..
নয়ন: কাল এনে দিবে তাইনা?
শামিম সাহেব: হ্যাঁ বাবা, সত্যি সত্যি এনে দেবো..
নয়ন: দাঁড়াও.. দেখাচ্ছি..
এটা বলে রেগে-মেগে নিজের রুমে চলে যায় সে। তারপর পুরাতন খেলনাগুলোর জায়গায় গিয়ে পুরনো সব খেলনা একটা একটা করে ভাঙ্গতে শুরু করে সে। এমন সময় নয়নের মামা ফাহিম সাহেব হাজির হন নয়নের রুমে। গতকাল বেড়াতে এসেছিলেন তাদের বাসায়। নয়নপর এসব কিছু দেখে তাকে আদর করে নিয়ে গেলেন বাসা থেকে কিছু দূরে; পাড়ার একটা সাধারণ বস্তিতে। সাথে নিয়ে গেলেন নয়নের কিছু ভাঙ্গা আধা-ভাঙ্গা খেলনা।
নয়নকে দেখিয়ে দিলেন গরীব, অসহায় শিশুদের, যারা কিনা তার বয়সী। কেউ খেলছে কলাপাতা দিয়ে, আর কেউ কেউ খেলছে রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া পুরনো খেলনাগুলো দিয়ে। কেউ খেলছে ধুলো
বালির মধ্যে, কেউ সুপারি গাছের ডাল দিয়ে। অনেক ভাবেই তারা একে অপরের সাথে খেলছে। নয়নের মামা ফাহিম সাহেব যখনই ওই সব বাচ্চাদের ভাঙ্গা খেলনা গুলো দিলেন, তখন গরীব শিশু গুলো খুশিতে আত্মহারা হয়ে ওঠে!
এটা দেখে নয়নের ভুল ভেঙ্গে গেলো। পরবর্তীতে সে আর কোনদিন খেলনা ভাঙ্গেনি। কারন, সে বুঝেছে যে তার ফেলা খেলনা গুলো অন্য জনের অত্যন্ত খুশির কারন। সেই থেকে নয়ন তার পুরাতন খেলনা গুলো গরীব শিশুদের নিয়মিত দেয়।
[বি:দ্র: সমাজে অনেক বিত্তবান পরিবারের মানুষ আছেন, যারা তাদের বাচ্চদের জন্য প্রতিদিন নতুন নতুন খেলনা নিয়ে আসেন।আপনারা চাইলে আপনাদের বাচ্চাদের ফেলে দেওয়া খেলনা, বাড়ির আঙিনায় পরে থাকা, বিল্ডিংয়ের ছাদে পড়ে থাকা অপ্রয়োজনীয় খেলনা গরীব ও অসহায় শিশুদের মাঝে বিতরন করে দিতে পারেন। এতে করে গরীব শিশুদের মুখের হাসি খুব সুন্দর করে ফুটে উঠবে। আর তা দেখে আপনার মনেও এক অনাবিল আনন্দ জেগে উঠবে। মানুষ হিসেবে নিজের মানবিকতা উপলব্ধি করতে পারবেন।
বিশ্বাস না হলে চেষ্টা করে দেখতে
পারেন।]
(গল্পের স্বার্থে কাল্পনিক নাম
ব্যবহার করা হয়েছে।)