এক গ্রামে এক নামকরা ডাক্তার বাস করত। তার নাম ছিল নিমাই সেন। গ্রামের বেশিরভাগ রোগীরা তার কাছে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে আসতো। তার চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক রোগী সুস্থ হয়েছিল। গ্রামে তার বেশ নাম-যশ হয়েছিল। গ্রামের একমাত্র ডাক্তার হওয়ায় সবাই তার কাছেই আসতো এবং তাকে বেশ সম্মান করতো। সে তার দিনগুলো খুব ভালো ভাবেই অতিবাহিত করছিল। রোগী দেখা, পরিবারের সাথে সময় কাটানো এইসব কাজ করে তার দিন কেটে যেত।
আর্থিকভাবেও সে ছিল সচ্ছল। অভাব না থাকায় তার মনে তেমন কোনো লোভ ছিল না। কিন্তু সে যে গ্রামে বাস করত সেই গ্রাম ছিল একটি অজ পাড়াগাঁ। তার গ্রামের শিক্ষিত লোকের পরিমাণ ছিল খুব কম। সেও খুব একটা শিক্ষিত ছিলনা। শহরের নামকরা ডাক্তারগুলোর কাছে থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সে গ্রামে এসে তার ডাক্তারি পেশা শুরু করেছিল। গ্রামের লোকজনের তেমন কোনো কঠিন রোগ ব্যাধি হত না।
যে সকল রোগ-ব্যাধির চিকিৎসা করানোর জন্য গ্রামের লোকজন তার কাছে আসতো সে তার চিকিৎসা সফলভাবে করতে সক্ষম হতো। আর যদি তার সাধ্যের বাইরে মনে হতো তবে সে রোগীকে শহরে গিয়ে ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দিত। কিন্তু একদিন সে নিজেই একটি মহা বিপদের মধ্যে পড়ে গেল। সে দেখতে পেল তার গলা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। যেহেতু সে নিজেই চিকিৎসক ছিল তাই সে বুঝতে পারল যে সে কোন ছোটখাটো রোগে আক্রান্ত হয়নি।
এই রোগটি ছিল তার নিজস্ব জানা চিকিৎসার বাইরে। যেহেতু সে নিজেই তার গ্রামের একমাত্র নামকরা চিকিৎসক ছিল তাই সে ভাবল, যদি গ্রামবাসী তার এই রোগের কথা জেনে যায় এবং যদি সে তা নিজের চিকিৎসা নিজেই না করতে পারে তাহলে গ্রামবাসীর কাছে তার মান সম্মান অনেকটা কমে যাবে। সবাই তাকে হেয় চোখে দেখবে। অনেকেই তার চিকিৎসা যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবে। তাই সে সিদ্ধান্ত নিল যে সে ব্যবসার নাম করে শহরে চলে যাবে।
সেখানে গিয়ে সে বড় কোনো চিকিৎসকের দ্বারা তার চিকিৎসা করাবে। যেই কথা সেই কাজ। পরেরদিন ভোরে নিমাই সেন বের হয়ে পড়ল শহরের উদ্দেশ্যে। তার পরিবারকে সে জানিয়ে গেল যে সে কিছু ব্যবসায়ীক কাজের জন্য শহরে যাচ্ছে। তার ফিরতে কিছু সময় লাগতে পারে। তারা যেন তার জন্য চিন্তা ভাবনা না করে। এই বলে সে শহরে চলে গেল। সে তার জমানো অর্থ গুলো নিয়েই শহরে এসেছিল। শহরের বেশ কয়েকজন নামকরা ডাক্তারের সাথে তার পরিচয় ছিল। সে তার সেই সকল ডাক্তার গুলোর সাথে দেখা করল এবং তার এই ব্যাধির কথা জানালো।
ডাক্তাররাও তাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করল। তারা সবাই তার চিকিৎসা করতে ব্যর্থ হলো। তাকে সবাই তাদের নিজস্ব জ্ঞান অনুযায়ী অনেক দামী দামী ওষুধ খাওয়ার জন্য উপদেশ দিল। সে ভাবল ওষুধ গুলো খেয়ে দেখি। এত দামি ওষুধ খেলে হয়তো উপকার হবে। কিন্তু কোনো কিছুতেই কোন কাজ হলোনা। সে হতাশ হয়ে পরলো। অবশেষে তার দেখা হলো তার এক শিক্ষকের সাথে যার কাছ থেকে সে চিকিৎসা শিক্ষা অর্জন করেছিল। সে তাকে জানালো যে এই রোগের চিকিৎসা শুধু ভারতের একজন চিকিৎসকের কাছেই আছে। তুমি তার সাথে দেখা করো।
তাহলে সে তোমাকে তোমার রোগের জন্য ওষুধ দিতে পারবে। নিমাই সেন ভাবলো যে করেই হোক তাকে এই রোগের চিকিৎসা করিয়েই গ্রামে যেতে হবে। নইলে সে কারো সামনে মুখ দেখাতে পারবে না। তাই সে ভারতে চলে গেল সেই চিকিৎসকের সাথে দেখা করতে। সেই চিকিৎসকের নাম ছিল ভবানী চট্টোপাধ্যায়। সে ছিল পশ্চিমবঙ্গের নামকরা চিকিৎসক। মাদ্রাজ থেকে সে তার চিকিৎসা শিক্ষা অর্জন করেছিল। নিমাই তার সাথে দেখা করতে সক্ষম হলো। তাকে সে তার অবস্থা সম্পর্কে জানালো এবং তার সমস্যার সমাধান চাইল।
ভবানী তাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করল এবং শেষে ছয় আনা মূল্যের একটি ওষুধ তাকে খেতে বলল এবং বলল সে যেন এক বছর পার না হওয়া পর্যন্ত এই ওষুধ খাওয়া বন্ধ না করে। নিমাই রীতিমত অবাক হয়ে পড়ল। এত দামী দামী ওষুধ খেয়ে যে রোগ তার সারেনি, যে রোগের কারণে তাকে সুদূর ভারতে এসে চিকিৎসক দেখাতে হলো সেই রোগ ভালো হবে ছয় আনার ওষুধ খেয়ে। সে ভাবলো এতই যখন চেষ্টা করেছি এই শেষ চেষ্টা করে দেখি যদি ঠিক হয়ে যায়। সে বাংলাদেশে ফিরে আসলো এবং সেই ওষুধ খাওয়া শুরু করল। আশ্চর্যজনকভাবে তার অবস্থার উন্নতি ঘটলো।
সে ভালো হতে শুরু করল। চার মাস যেতে না যেতেই সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে পরলো। তাই ডাক্তারের পরামর্শ সে ভুলে গেল। যেহেতু সে সুস্থ হয়ে গিয়েছিল তাই সে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিল। এভাবে কয়েক মাস অতিবাহিত হল। একদিন হঠাৎ তার নাক দিয়ে এবং গলা দিয়ে প্রচুর পরিমাণে রক্ত বের হওয়া শুরু করল। তখন তার ওই চিকিৎসক এর কথা মনে পড়ে গেল। সে তাড়াতাড়ি লোক পাঠালো বাজার থেকে ওই ওষুধটি আনানোর জন্য। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল।
প্রত্যেককে এই গল্প হতে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
Best
Thanks
wonderfull…seiii
gd
nice
Nice
best
খুব ভালো লাগলো
Nice
Nice
হুম, প্রত্যেককেই এই গল্প হতে শিক্ষা নেওয়া উচিত।
আমরা মূল্যবান পরামর্শ গুলো মাঝে মাঝে অবহেলা করি।
ধন্যবাদ লেখকে।
Thank you too
Nice
Nice
❤️