একটি সিংহাসনের আজব ইতিহাস

বর্ণিত আছে বিলকিসের সিংহাসন হ্রাস বৃদ্ধি অর্থাৎ সবুজ জওহারের স্থলে লাল, এবং লাল জওহারের জাওহারের স্থলে সবুজ জওহার লাগানো হয়েছিল।
আর তারপর বিলকিস হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম এর দরবারে এসে উপস্থিত হন।
তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হল এটাই কি তোমার সিংহাসন?
তখন সে উত্তর করলো হা এরকমেই।

কেউ কেউ বলেন সিংহাসনটি সে চিনে ফেলে ছিল।
কিন্তু সে সন্দেহে ফেলার জন্য এটা সরাসরি স্বীকার করলনা
যেমনি এসব লোক তাকে সন্দেহে ফেলার চেষ্টা করছিল।
এটি হযরত মাকাতিল রহ. এর অভিমত।
আকরাম বলেন,
বিলকিস খুবই বুদ্ধিমতী রমনী ছিলেন।

এজন্যই তিনি প্রকাশ্য মিথ্যাচার হওয়ার ভয়ে সিংহাসনটি কে নিজের বলেননি।
তার এই অস্বীকৃতিটি এটি কোন রহস্যান্বেষণের জন্য ছিল না বরং সন্দেহবশত।
সুতরাং হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাতু সালাম তার বুদ্ধিমত্তা অদূরদর্শিতার ফখল করলেন।
কিন্তু তিনি অস্বীকার করলেন না আবার স্বীকার করলেন না।

কোন কোন মুফাসসির বলেন সিংহাসনের বিষয়টি তাকে সন্দ্বীগ্ধ করে তুলেছিল।
কেননা আসে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাতু সালাম এর নিকট আসার ইচ্ছা করেছিল।
তখন স্ব গোত্র কে একত্র করে বলেছিল খোদার শপথ এ ব্যক্তি কেবল বাদশা নন।
তার মোকাবেলা করার সামর্থ্য আমাদের নাই।
এরপর বিলকিস হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম এর নিকট একজন দূত প্রেরণ করল।
আমি আপনার নিকট আসছি আমার বংশের সরদার গণ আমার সঙ্গে আসছেন।
যাতে আপনার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারি।

আপনি যে ধর্মের আহ্বান জানিয়েছেন তাও যেন দেখতে পারি।
এরপর বিলকিস তার সোনা রুপা ও ইয়ারা শুভভিত- সিংহাসনটি সাতটি তালাবদ্ধ করে রাখল।
এর দেখাশোনার জন্য শক্তিশালী প্রহরী নিযুক্ত করল।

এরপর নিজের সহকারীকে হুকুম করল সিংহাসনটি যথাযথ সংরক্ষণের এবং কেউ যেন সে পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে কাউকে যেন তা দেখানো না হয়।
তারপর সরদার গণের মধ্যে হতে বাছাই করে( ১২) বারো হাজার সরদার সঙ্গে নিয়ে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাতু সালাম এর উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।
ওই (১২) বারো হাজার সর্দারের অধীনেও ছিল অসংখ্য সৈন্য।
এভাবে বিলকিস হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাতু সালাম এর নিকট এসে পৌছল।
তাকে জিজ্ঞাসা করা হল এটাই কি তোমার সিংহাসন?
কিন্তু সম্রাঞ্জী বিলকিস তার সিংহাসনটি সংরক্ষিত স্থানে রেখে এসেছিল।
আর এটাই হুবুহু তার সিংহাসনে ছিল।

এইজন্য তার সন্দেহ জাগলো।
বিধায় সে উত্তর করলো, হ্যাঁ এরকম এইতো।
তারপর বিলকিসকে বলা হল এই মহলে প্রবেশ করো।
কেউ কেউ বলেন ওই মহলটি ছিল সাদা চকচকে সিসা দ্বারা নির্মিত।
মনে হচ্ছিল তা পানি।
আবার কেউ বলছেন ওটা ছিল ঘরের মেঝে।
এই মেঝের নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত করা হয়েছিল।
সুতরাং কেউ মহলটি দেখলে মনে করত এটাকে অথৈ
পানি।

ওই মহলের মাঝখানে হয়ত রাখা হয়েছিল সুলাইমান আলাইহিস সালাতু সালামের সিংহাসন।
বর্ণিত আছে
হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাতু সালাম এই মহল নির্মাণ করেছিলেন যেন তিনি বিলকিসের হাঁটুর নিম্নাংশ মুক্ত করার ফরমায়েশ ছাড়াই তা দেখতে পারেন।

কেউ কেউ বলেছেন এর দ্বারা বিলকিসের বুদ্ধিমত্তা ও সচেতনতা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
যেমন বিলকিস চাকর ও খাদেমদের দ্বারা পরীক্ষা নিয়েছিলেন।
এরপর যখন হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম সিংহাসনে বসেন,
তখন বিলকিসকে ওই মহলে প্রবেশ করার আহ্বান জানালেন।
বিলকিস মনে করলো মহলটি পানি পূর্ণ।
কাজেই তাতে প্রবেশ করার জন্য দু পায়ের গোড়ালি উন্মুক্ত করল।
হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম তার পা ও গোড়ালি অত্যন্ত সুন্দর দেখতে পেলেন। কিন্তু তার গোড়ালিতে বেশ পশম ছিল।

হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাতু সালাম একনজর দেখে দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলেন।
সুলাইমান আ. বললেন এটা শিশার তৈরি একটি মহল।
তারপর তিনি তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। বিলকিস সিংহাসন অবস্থা দেখে তার নবুয়াতের স্বীকৃতি অন্তরে পোষন করেছিল।

কোন কোন মুফাসসিরে কেরাম বলেছেন,
বিলকিস যখন বিশেষ মহলের নিকট পৌঁছিল এবং একে পানিতে ভর্তি মনে করলো।
তখন তার মনে সন্দেহ জাগে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাতু সালাম তাকে এতে ডুবিয়ে মারতে চায়। তবে তিনি আমাকে হত্যা করলে মন্দ হতো না কেননা আমি নিজের উপর জুলুম করেছি।
আল্লাহ হাফেজ।
আসসালামু আলাইকুম।

Related Posts