ওয়াইফাই কিভাবে হ্যাক করা সম্ভব? ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড কিভাবে বের করা যায়? গুগলের কাছে প্রতিনিয়তই এমন প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশ সহ বিশ্বের আরো অন্যান্য দেশ থেকে। হয়তোবা আমি কিংবা আপনিও কখনো এসব প্রশ্ন করেছি। কিন্তু আজকে সে বিষয়ে নয় বরং কিভাবে আপনার ওয়াইফাই হ্যাক হওয়া থেকে বাঁচাবেন সে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো। তো চলুন জেনে নিই আপনি ওয়াইফাই হ্যাকিং থেকে কিভাবে নিরাপদ থাকবেন এবং সাথে ওয়াইফাই সিগন্যাল বৃদ্ধি করতে কি কি করা প্রয়োজন সে বিষয়েও আজকে আপনাদের একটি বোনাস টিপস দেবো।
কারো বাসা, শপিংমল, হোটেল-রেস্টুরেন্ট বা এয়ারপোর্টে গিয়ে আমরা অনেকেই ওয়াইফাই এর নাম এবং পাসওয়ার্ড খুঁজি। যারা এই ফ্রী বা পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করছেন তাদেরকে খুব সাবধান থাকতে বলেছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। কারণ এসব ফ্রী এবং পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করলে আপনার ব্রাউজিং হিস্ট্রি, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা জিমেইলের মত গুরুত্বপূর্ণ একাউন্টগুলোর পাসওয়ার্ডসহ লগইন ইনফরমেশন অন্যকারো কাছে চলে যেতে পারে। আপনি তো নিশ্চয়ই চাইবেন না যে আপনার অগোচরে অন্য কেউ আপনার গোপনীয়তা দেখুক। আর ফ্রি ওয়াইফাই থেকে অনলাইনে লেনদেন করলে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের পিন নম্বর সহ অন্যান্য তথ্য চুরির বড় ধরনের আশঙ্কা থাকেই।
তাই ফ্রী বা পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার না করে মোবাইল ডাটা ব্যবহার করুন। যদি ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহার করতেই হয় তাহলে সেটা শুধুমাত্র গান শোনা, সিনেমা দেখা বা ব্লগ পড়ার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা এমনটাই পরামর্শ দিয়েছেন। তবে আবারও বলছি ফ্রি ওয়াইফাই থেকে অনলাইন ব্যাংকিং বা কোনো যোগাযোগ মাধ্যমে লগইন করতে যাবেন না। মোবাইল ডাটা না থাকলে চেষ্টা করুন আংশিক ফ্রী অর্থাৎ যেসব ওয়াইফাই এর ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড কারো থেকে জিজ্ঞেস করে নিতে হয় সেটা ব্যবহার করতে। যদিও সেটা পুরোপুরি নিরাপদ নয়।
ফ্রী বা আংশিক উন্মুক্ত নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সময় ঝুঁকি কমাতে ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (VPN) ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে ফিল্টারিং বা ওয়েবসাইট ব্লকিং এড়ানো যায়। অনেক সময় হ্যাকাররা পরিচিত নামের বানানের এদিক ওদিক করে নিজেদের আলাদা একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করে, এক দৃষ্টিতে সেই হেরফের চোখে পরা মুশকিল। ফলে সহজেই আপনি তাদের ফাঁদে পা দেবেন। আর হ্যাকারদের তৈরি ফেক ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে অনেক সময় পাসওয়ার্ডও লাগেনা। তাই ধরেন কোনো রেস্তোরায় যদি আপনি যান তাহলে সেখানকার বিক্রেতার কাছ থেকে ওয়াইফাই এর সঠিক বানান ও পাসওয়ার্ড যাচাই করে তবেই ব্যবহার করুন।
অনেকেই আছেন রাউটার সেটআপ করার পর বছরের পর বছর রাউটারের নাম আর বদলান না, এতে যেটা হয় হ্যাকাররা সহজেই বুঝে যায় এই ব্যক্তি তার তথ্যের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদাসীন এতে আপনি সহজেই তাদের টার্গেটে পরিণত হন। এজন্য ওয়াইফাই সেটআপ করার পর একটি ইউজার নাম এবং শক্ত একটি পাসওয়ার্ড সেট করে নিন এবং প্রতিমাসে ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড বদলে নিন। আরেকটা বিষয়, বিশ্বস্ত কাউকে ছাড়া ওয়াইফাই এর পাসওয়ার্ড কারো সাথে শেয়ার করতে যাবেন না।
আপনার ডিভাইসের ওয়াইফাই অটো কানেক্টেড থাকলে আগে ব্যবহৃত ওয়াইফাই সিগন্যাল পাওয়া মাত্রই ডিভাইসটি সংযুক্ত হয়ে যায়। অনেক সময় হ্যাকাররা ওই একই নামে ওয়াইফাই আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন ডিভাইস হ্যাক করে থাকে। ওয়াইফাই অটো কানেক্টেড না রেখে কাজ শেষে সেটা বন্ধ রাখাই ভালো। এতে হ্যাকাররা আপনার তথ্য চুরির সুযোগ পাবে না।
ফ্রী ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় ভালোভাবে প্রতিটি ওয়েবসাইটের ইউআরএল (URL) পর্যবেক্ষণ করুন। ইউআরএল-এ যদি এইচটিটিপিএস (HTTPS) দেখেন তাহলে বুঝবেন এই ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার নিরাপদ। যদি দেখেন এইচটিটিপি (HTTP) এর পরে কোনো এস (S) নেই তাহলে শিঘ্রই ওই ওয়েবসাইট ব্যবহার করা বন্ধ করুন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ উপায় হলো ভালো ব্রাউজার ব্যবহার করা। কারণ একটি ভালো ব্রাউজার আপনাকে অনিরাপদ ওয়েব সাইটের ব্যাপারে সতর্ক করে দেবে। আপনি চাইলে Https Everywhere এক্সটেনশনটি ইন্সটল করে আপনার ব্রাউজারকে সুরক্ষিত করতে পারেন। জরুরি হলো ফ্রি ওয়াইফাই ব্যবহারের সময় সন্দেহজনক কোনো ধরনের লিংকে ক্লিক বা ডাউনলোড করবেন না।
ওয়াইফাই ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সময় নিরাপদ থাকতে কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনে অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। তবে ফ্রী অ্যান্টিভাইরাস নয়, চেষ্টা করুন ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করতে এটি আপনাকে অনিরাপদ ওয়াইফাই কানেকশন এর ব্যাপারে সতর্ক করবে। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমচালিত কম্পিউটারে ফায়ারওয়াল চালু রাখালে কিছুটা সুরক্ষিত থাকতে পারবেন। মোবাইল ব্রাউজার এক্সটেনশন অফশনে যেয়ে Do not track me চালু করে রাখুন এতে করে আপনার লোকেশন কেউ ট্র্যাক করতে পারবে না। এছাড়া ইন্টারকানেক্টেদ অ্যাপ গুলোর ফাইল শেয়ারিং বন্ধ করে রাখলে আপনার ব্যক্তিগত ফাইলগুলো নিরাপদ রাখতে পারবেন।