কিশোর বয়সের কৌতুহলি সব স্বপ্ন

জে এস সি পরীক্ষা সবে শেষ হলো! তার উপর আবার শীতকাল। সবমিলে একটা ভালো সময় যাচ্ছে বিটুর। কৌতুহলী একটা ছেলে হিসেবে বিটুর ভালোই নামডাক আছে প্রাণীজগতে। আর সবাই কোনো জিনিসকে যেভাবে দেখে বিটুর চোখ সেই জিনিসকে তার চেয়ে গভীর ভাবে দেখে। নানা রকম বৈজ্ঞানিক বিষয় আর কিছুটা প্যারানর্মাল,আনসীন ব্যাপারগুলো নিয়ে বিটুর আগ্রহ বেশী।

পরীক্ষা যেহেতু শেষ, তাই এখন এসব নিয়ে পড়ে থাকার অফুরন্ত সময় তার। মহাকাশ নিয়ে ইদানীং দুয়েকটা ডকুমেন্টারি দেখছে বিটু।ভালই লাগে তার। বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়ে সে এসব। বিটুর একটাই চিন্তা এখন- এলিয়েন আছে কি নেই! থাকলে কোথায় আছে, কি করছে, কিভাবে আছে এসবই ওর জানার ব্যাপার। রাতে এলিয়েন, মহাকাশ,রকেট ইত্যাদি নিয়ে বানানো একটা মুভি হা করে দেখেছে সে।

রাত দুইটা বেজে পনেরো মিনিটি উনত্রিশ সেকেন্ড। বিটু বারান্দায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা দেখছে। তারাগুলোর বয়স লক্ষ কোটি বছর।
আরও মজার ব্যাপার হলো এগুলো সূর্যের চেয়েও বড়। অথচ দেখা যাচ্ছে একটু একটু। তারার আলোগুলোও কিন্তু অতীত কালের আলো!
যে তারা গুলো সে দেখছে, সেগুলোর অনেকই অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু মিলিয়ন বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করায় সেগুলোর আলো পৃথিবীতে আসতে কিছুটা সময় লেগেছে। ফলে ঠিক যেই মুহুর্তে এই আলোগুলো পৃথিবীতে এসে পৌছেছে, তার আগেই তারাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।

এসব ভাবতে থাকে বিটু। হঠাৎ সে লক্ষ্য করে তাদের অন্ধকার বাগানে আমগাছের নিচে এক কোনে অনেকটা ফুটবলের মত কিসে যেন আলো জ্বলছে আর নিভে যাচ্ছে। বিটু দেখে কৌতুহল হয়। চারিদিকে পিন পতন নিরবতা। মাঝে মাঝে দূরে কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে। বিটু কৌতুহল হয়ে গ্রিলের দরজাটা খোলে। গা ছম ছম করে বিটুর। এভাবেই হাঁটতে হাঁটতে আমগাছটার নিচে পৌছায় বিটু। সেই ফুটবলের মত বস্তুটা হাতে নেয় ও। উফফ বলে দূরে ছিটকে পড়ে।
শক লেগেছে হাতে! কি অদ্ভুত! এটা কি তাহলে??

বিটু জানে শুকনা বাশে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় না। তাই সে শুকনা বাশ দিয়ে গুতা দেয় বলটাকে। আলো জ্বলা নিভে যায়!
হঠাৎ বলটা দুইভাগ হতে থাকে! ভেতর থেকে আলোর ছটা বেরিয়ে চারদিক উজ্জ্বল করে তুলছে! হঠাৎ সেই বলের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে এক অদ্ভুত প্রানী।
বিটু ভয় পায় প্রচণ্ড! পালাতে থাকে বিটু! অদ্ভুত প্রাণিটা চোখের পলকে বিটুর সামনে চলে যায়। কিছু একটা বলে। বিটু বুঝতে পারে না।

প্রাণিটা একটা অদ্ভুত যন্ত্র বের করে বিটুর হাতে দেয়। বিটু কাঁপতে কাঁপতে মেশিনটা নেয়। এবার স্পষ্ট বুঝতে পারে সেই প্রাণীর কথা! প্রাণিটা বলছে তার নাম মিকো। মঙ্গল গ্রহ থেকে মহাবিশ্ব ভ্রমনে বেরিয়েছে মিকো। হাঠাৎ কোনো এক উল্কার আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় তার ইউ এফ ও। ইমার্জেন্সি ক্যাপসুলে করে নিকটস্থ গ্রহে ল্যান্ড করে সে। যেটা ছিল পৃথিবীতে বিটুদের এই আমবাগান।

বিটুর হার্টবিট বেড়ে চলেছে! কি এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা বিটুর! মিকোকে জিজ্ঞেস করলো বিটু-“এখন বাড়ি ফিরবেন কিভাবে? “
মিকো বললো সে তাদের গ্রহে সিগন্যাল পাঠিয়েছে। দ্রুতই তাকে নিয়ে যাওয়া হবে।
মিকো আর বিটু এই অল্পক্ষনেই ভালো বন্ধু হয়ে উঠলো।

সারা পৃথিবী যখন এলিয়েনদের অস্বস্ত্ব আর তাদের দেখা নিয়ে গবেষণারত, ঠিক তখনই বিটু এলিয়েনের সাথে আম বাগানে গল্প করছে।

বিটুই এই পৃথিবীর প্রথম মানুষ যে এলিয়েনের সাথে কথা বলছে।

মিকোকে নিয়ে যেয়ে এখনো অনেক সময় লাগবে। এই সময়টায় মিকো চাইলো পৃথিবী ঘুরে দেখার।

বিটু বললো কিন্তু কিভাবে তারা এত বড় পৃথিবী ঘুরে দেখবে?
তখন
মিকো বিটুর হাত ধরে সেই বলে পা রাখতেই দুইজন বলের ভেতর ঢুকে গেল।

এরপর সেই বলের আকার অনেক ছোটো আর হালকা হয়ে গেল। এতই হালকা যে সেটা বাতাসেও উড়তে শুরু করলো।

এভাবে তারা উড়তে উড়তে চারিদিক ভ্রমন করতে লাগলো।

বিটুর বন্ধুদের বাড়ির কাছ দিয়ে মিন্টু স্যারের বেলকনি ঘেষে ডালিমদের ছাদের উপর দিয়ে উড়ে চললো তাদের মেশিন।

বিটু মনে মনে আফসোস করলো ইশ! কেউ যদি তাদের দেখত! কোনো বন্ধুকে যদি সাথে নিতে পারত! কত রাত!সবাই ঘুমাচ্ছে! কেউই দেখছে না!

বিটু এসব ভাবতে ভাবতে তাদের পৃথিবীর অর্ধেক ঘোরা প্রায় শেষ হলো। ঠিক সে সময় মিকোর গ্রহ থেকে নতুন ইউ এফ ও পাঠানো হলো।
মিকো বিটুকে তার বাসায় পৌছে দিলো।

এরপরে নতুন ইউ এফ ও তে উঠে বসলো মিকো। আর কখনোই হয়তো পৃথিবীতে আসা হবে না মিকোর। বিটু এজন্য বেশ কষ্ট পাচ্ছে৷ অনেক ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিলো তাদের। যাওয়ার আগে মিকো বিটুকে একটা ঠিকানা দিয়ে বলে এটাই তার গ্রহের ঠিকানা।এখানে ফোন নম্বরও আছে। যেন বিটু তার সাথে যোগাযোগ করে। এরপরই বিশাল আলোর ঝলকানিতে চোখের পলকে হারিয়ে গেলো সেই ইউ এফ ও। বিটু বিদায় দিয়ে সেই ঠিকানাটা পড়তে যাবে..
এমন সময় হঠাৎ মায়ের চিল্লানোতে বিটুর ঘুম ভাঙে! ধড়মড় করে উঠে বসে বিটু। আশেপাশে সেই ঠিকানার টুকরো খুঁজতে থাকে বিটু।

হুউফ!হাফ ছাড়ে বিটু! একটা সুন্দর স্বপ্ন ছিল এটা।

Related Posts

9 Comments

মন্তব্য করুন